রবীন্দ্রভুবনে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর
Tweet
পূর্ব বাংলা আপ্লুত করেছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রবাদপ্রতিম এই পুরুষের অফুরান অভিজ্ঞতার উৎস, বাংলাদেশ। এসেছিলেন জমিদারি করতে। কিন্তু মন-কান পেতে শুনেছেন বাংলার মাটি-জল-হাওয়ার গল্প। শিলাইদহে পেয়ে বসেছিল, বাউলের সুরে মানুষ খোঁজার অন্বেষা। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর তাঁকে দিয়েছে জীবনের অন্য স্বাদ। এখানে এসে পেয়েছেন আত্মোপলব্ধি। সেই উপলব্ধিই তাঁকে কাছে এনে দিয়েছে এখানকার প্রকৃতি আর মানুষকে।
বড়াল বিধৌত শাহজাদপুরে তিনি যেন জীবনের নতুন, পূর্ণ এক ছবি। ১৮৯০ থেকে ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত আট বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি দেখাশোনার কাজে সাময়িকভাবে শাহজাদপুরে আসতেন, বসবাস করতেন। একনাগাড়ে তিনি দুই মাস এখানে অবস্থান করেছেন। এখানে তিনি রচনা করেছেন অনেক উঁচুমানের সাহিত্য। এর মধ্যে রয়েছে সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী, কল্পনা। ছোটগল্পের মধ্যে রয়েছে পোস্টমাস্টার, ব্যবধান, রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা, ছুটি, অতিথি। ছিন্ন পত্রাবলির মধ্যে ৩৮টি পত্রও এখানেই লিখেছিলেন কবি। নাটকের মধ্যে রয়েছে বিসর্জন, প্রবন্ধের মধ্যে পঞ্চভূত।
কবি শিলাইদহ থেকে বজরায় বড়াল নদের রাউতারায় এসে সেখান থেকে পালকিতে চড়ে কাছারিবাড়িতে আসতেন। জলের মতোই শতত বহমান এ অঞ্চলের মানুষের জীবনে মিশে ছিল দারিদ্র্য। তিনি এই এলাকায় দুধ ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গো-চারণভূমি, জলমহালগুলো বিনা পয়সায় এলাকার নিকারি সম্প্রদায় ও দরিদ্রদের মধ্যে প্রদান করেছিলেন।
তাঁর পালকি বাহক আট বাগদি পরিবারকে দিয়েছেন থাকার জায়গা।
১৮৯৭ সালে কবির বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি ভাগাভাগি করে দিলে কাকা জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঠাকুর শাহজাদপুর, বড় ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহ এবং কবি নিজে পতিসরের দায়িত্ব পান। এরপর তিনি আর শাহজাদপুরে আসেননি। শাহজাদপুরের অংশ চলে যাওয়ার কয়েক মাস পরে ১৩০৪ সালের ৮ আশ্বিন রবীন্দ্রনাথ পতিসর যাওয়ার পথে তাঁর প্রিয় শাহজাদপুরে আর একবার এসেছিলেন। সেদিন তাঁর শাহজাদপুরের বিচ্ছেদ স্মরণ করে এখানে বসেই বৈষ্ণব কবিদের বিরহ-বিচ্ছেদের গানের অনুসরণে তাঁর বিখ্যাত সেই ‘যাচনা’ কবিতাটি লিখেছিলেন—
‘ভালোবেসে সখি নিভৃতে যতনে-আমার নামটি লিখো—তোমার মনের মন্দিরে।’