কান্তজীউ মন্দির, দিনাজপুর
Tweet
দিনাজপুরের কান্তজীউ মন্দির
দিনাজপুর জেলা রংপুর বিভাগের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে ও কাহারোল উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নে দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমে ঢেঁপা নদীর তীরে অবস্থিত কান্তজীউ মন্দির। দিনাজপুরে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে,তাদের মধ্যে কান্তজীউ মন্দির অন্যতম ।
কান্তজীউ মন্দির
কান্তনগর মন্দির ইটের তৈরী অষ্টাদশ শতাব্দীর মন্দির। কান্তজীউ মন্দির অন্যতম কারণ হচ্ছে পৌরাণকি কাহিনীসমূহ পোড়ামাটির অলঙ্করণে দেয়ালের গায়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‘নয় শিখর’যুক্ত হিন্দু মন্দিরের চুড়া হতে আদি নয়টি শিখর ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। প্রচুর টেরাকোটা শিল্পের নির্দশন রয়েছে এ মন্দিরে।
মহারাজ প্রাণনাথ রায় মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু করেন ১৭০৪ সালে এবং এটির নির্মাণকাজ শেষ করেন তাঁর পোষ্যপুত্র রামনাথ রায়। দীর্ঘ ৪৮ বছর ধরে এর নির্মাণকাজ চলে এবং ১৭৫২ সালে এটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। শুরুতে মন্দিরের চূড়ার উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট।ভূমিকম্পের কবলে পড়লে ১৮৯৭ সালে মন্দিরটি এর চূড়াগুলো ভেঙে যায়। মহারাজা গিরিজানাথ মন্দিরের ব্যাপক সংস্কার করে কিন্তু মন্দিরের চূড়াগুলো আর সংস্কার করা হয়নি। মন্দিরের বাইরের দেয়ালজুড়ে পোড়ামাটির ফলকে লেখা রয়েছে রামায়ণ, মহাভারত এবং বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী।
এ জমাকালো পৌরাণিক মন্দিরটি তিনটি ধাপে উপরে উঠে গিয়েছে এবং তিন ধাপের কোণগুলির উপরে মোট নয়টি অলংকৃত শিখর বা রত্ন রয়েছে যা দেখে মনে হয় যেন একটি উচুঁ ভিত্তির উপর প্রকান্ড অলংকৃত রথ দাঁড়িয়ে আছে । মন্দিরের চারদিকে খোলা খিলান পথ রয়েছে যাতে যে কোন দিক থেকেই পূজারীরা ভেতরের পবিত্র স্থানে রাখা দেবমূর্তিকে দেখতে পায়। বর্গাকৃতির মন্দিরটি একটি আয়তাকার প্রাঙ্গনের উপর স্থাপিত। এর চারদিকে রয়েছে পূজারীদের বসার স্থান যা ঢেউটিন দ্বারা আচ্ছাদিত। বর্গাকার প্রধান প্রকোষ্ঠটিকে কেন্দ্র করে সম্পূর্ণ ইমারত নির্মিত হয়েছে। পাথরের ভিত্তির উপর দাঁড়ানো মন্দিরটির উচ্চতা ৫০ ফুটেরও বেশি। ধারণা করা হয়, গঙারামপুরের(দিনাজপুর) নিকট বাননগরের প্রাচীর ধ্বংসাবশেষ থেকে নির্মাণ উপকরণ এনে এটি তৈরি করা হয়েছিল। বাইরের দিকে উচুঁ করে তৈরী তিনটি চতুষ্কোণাকার প্রকোষ্ঠ এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এ ধরণের নকশা কেন্দ্রীয় প্রকোষ্ঠটিকে শক্তিশালী করেছে, তাই উপরের বিরাট চূড়াটিকে এ প্রকোষ্ঠটির পক্ষে ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাকি আটটি অলংকৃত চূড়া নিচের দু’তলার ছাদের আটটি কোণে সংযোজন করা হয়েছিল। নিচতলার বাঁকা কার্নিস কোণগুলিতে এসে ঝুলে আছে। এর মধ্যবাগ কিছুটা উঁচু হওয়ায় ভিত্তি থেকে এর উচ্চতা দাড়িয়েছে ২৫ ফুট, যার দ্বিতীয় তলার উচ্চতা ১৫ ফুট এবং তৃতীয় তলার ৬‘-৬‘‘। এছাড়াও দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে, নয়াবাদ মসজিদ, রামসাগর , স্বপ্নপুরী ও রাজবাড়ী ।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাসে করে দিনাজপুরে যাওয়া যায় যেমন – নাবিল পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, বাবলু এন্টারপ্রাইজ, এস আর ট্রাভেলস প্রাঃ, রোজিনা এন্টারপ্রাই্জ ও হক এন্টারপ্রাইজ। দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ১২ মাইল উত্তরে এবং দিনাজপুর-তেতঁলিয়া সড়কের প্রায় এক মাইল পশ্চিমে ঢেপা নদীর পারে এক শান্ত নিভৃতগ্রাম কান্তনগরে এ মন্দিরটি স্থাপিত। কান্তজীউ মন্দিরে দিনাজপুর সদর থেকে বাসযোগে অথবা অটোরিক্সায় যাওয়া যায়। এছাড়াও ঢাকা থেকে ট্রেন বা প্লেনেও যাওয়া যায় দিনাজপুর। প্লেনে গেলে সৈয়দপুর ল্যান্ড করে বাই রোডে দিনাজপুর।