টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ

Share on Facebook

টাঙ্গুয়ার হাওর : বাংলাদেশের বৃহত্তর  সিলেট অঞ্চলের সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলায়  অবস্থিত একটি হাওর। মেঘালয় পাহারের পাদদেশে অবস্থিত এই হাওরে ত্রিশটিরও বেশি ঝর্ণা এসে মিশেছে মেঘালয় পাহাড় থেকে। প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এ হাওর বাংলাদেশর দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি । স্থানীয় লোকজনের কাছে হাওরটি নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল নামেও পরিচিত।

 ভারতের মেঘালয়ের খাসিয়া, জৈয়ন্তা পাহাড়ের পাদদেশে সারি সারি হজল-করচ শোভিত পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত টাংগুয়ার হাওর মাছ, পাখি ও অন্যান্য জলজ প্রাণীদের অভয়াশ্রম। বর্ষায় থৈ থৈ টাংগুয়ার হাওর যেনো হাওর নয় মহাসমুদ্র। অথচ শীতকাল এলেই এখানকার পানি শুকিয়ে যায়। শীত মৌসুমে পানি কমে গেলে এখানকার প্রায় ২৪টি বিলের পাড় (স্থানীয় ভাষায় কান্দা) জেগে উঠলে শুধু কান্দা’র ভিতরের অংশেই আদি বিল থাকে, আর শুকিয়ে যাওয়া অংশে স্থানীয় কৃষকেরা রবিশস্য ও বোরো ধানের আবাদ করেন। এসময় এলাকাটি গোচারণভূমি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দের ৯ নভেম্বর থেকে হাওরের নিয়ন্ত্রণ জেলা প্রশাসন নেয়ার আগে ১৯৯৯খ্রিস্টাব্দে টাঙ্গুয়ার হাওরকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়, তখনই অবসান হয় দীর্ঘ ৬০ বছরের ইজারাদারির। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে ২০ জানুয়ারি এই হাওরকে ‘রামসার স্থান’ (Ramsar site) হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্যের মধ্যে অন্যতম হলো বিভিন্ন জাতের পাখি, মাছ ও উদ্ভিদ। এখানে রয়েছে প্রায় ২০০ প্রজাতির মাছ, ৫১ প্রজাতির পাখি, ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৪ প্রজাতির সাপ, বিরল প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির কচ্ছপ, ৭ প্রজাতির গিরগিটিসহ নানাবিধ প্রাণীর বাস। হিজলকরচবরুণপানিফলহেলেঞ্চাবনতুলশীনলখাগড়া, বল্লুয়া, চাল্লিয়া ইত্যাদি জাতের উদ্ভিদে শোভিত এই হাওরে পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে বিরল প্রজাতির প্যালাসেস ঈগল, বড় আকারের গ্রে কিংস্টর্ক রয়েছে।স্থানীয় জাতের মধ্যে শকুনপানকৌড়িবেগুনি কালেমডাহুকবালিহাঁসগাঙচিলবকসারসকাকশঙ্খ চিলপাতি কুট  ইত্যাদি পাখির নিয়মিত বিচরণ এই হাওরে। এছাড়া আছে বিপন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি কুড়ুল সহ কুট, মরিচা ভুতিহাঁস, পিয়ংহাস; সাধারণ ভুতিহাঁস, পান্তামুখী বা শোভেলার, লালচে মাথা ভুতিহাঁস, লালশির, নীলশির, পাতিহাঁস, লেনজা, ডুবুরি, পানকৌড়ি ইত্যাদি।

কিভাবে যাবেনঃ  

প্রথমে যেতে হবে ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ। যদি রাতের বাসে যান তাহলে সকালের নাশতা খেয়ে সুরমা ব্রীজের ওপার থেকে লেগুনা অথবা বাইক নিয়ে তাহিরপুর বাজার। তাহিরপুর যেতে সময় লাগবে দেড় ঘণ্টার মতো। এখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা অথবা ট্রলার ভাড়া করতে হবে পরদিন সকাল পর্যন্ত। সারাদিন হাওর দেখে সন্ধ্যায় ফিরতে হবে টেকেরঘাট। যদি পারেন তাহলে প্রথমদিন সন্ধ্যায় অথবা পরদিন সকালে টেকেরঘাটে অবস্থিত কেয়ারি লাইমস্টোন লেক (যাকে অনেকে নীলাদ্রী বলে চেনে) ও লাখমাছড়া ঝর্ণা দেখে নিন। এখানে বলে রাখা ভালো বড় আকারের নৌকাগুলোতে টয়লেট সুবিধা ছোট আকারের নৌকাগুলোর চেয়ে বেশি। দুপরের খাবার তাহিরপুর বাজার থেকে খেয়ে যেতে পারেন অথবা, নৌকায় রান্না করতে পারেন।

সারারাত জোছনা বিলাস করার পর নৌকা ছেড়ে দিয়ে সকালের নাশতা করুন টেকের ঘাটেই। তারপর দেখতে যেতে পারেন বারেকের টিলা আর যাদুকাটা নদী। বারেকটিলা আর যাদুকাটা নদী একই যায়গায়। টিলা দেখা হয়েগেলে নৌকায় যাদুকাটা নদী পার হয়ে লাউড়ের ঘর বাজারে এসে বাইক ভাড়া করে সুনামগঞ্জ শহরে আসতে হবে। লাউড়ের ঘর থেকে সুনামগঞ্জের দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার সময় লাগবে ঘন্টাখানেক। এরপর হাতে সময় থাকলে থাকলে হাসন রাজার জাদুঘর দেখে আসতে পারেন। বাস স্ট্যান্ড থেকে ২০ টাকা রিকসা ভাড়া লাগবে সাহেব বাড়ির ঘাটে যেতে। এখানেই মরমি সাধক হাসন রাজার যাদুঘর।

দর্শনীয় স্থানঃ টাংগুয়ার হাওর, কেয়ারি লাইমস্টোন লেক ও লাখমাছড়া ঝর্ণা, বারেকটিলা, যাদুকাটা নদী ও হাসন রাজা যাদুঘর।

উপযুক্ত সময়ঃ হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে বর্ষাকাল উপযুক্ত সময় আর অতিথি পাখি দেখতে চাইলে শীতকাল।

খরচঃ   

ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত বাস ভাড়া নন এসি ৫৫০ টাকা এসি ৮০০ টাকা।

পুরান বাস স্ট্যান্ড থেকে সুরমা ব্রিজ পার হতে জনপ্রতি ১০ টাকা।

সুরমা ব্রিজ থেকে তাহিরপুর পর্যন্ত লেগুনা ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা।

তাহিরপুর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত বড় আকারের ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া ৩০০০-৩৫০০ টাকা।

টেকেরঘাট থেকে বারেকটিলা বাইক ভাড়া জনপ্রতি ৭৫ টাকা।

যাদুকাটা নদী দিয়ে লাউড়ের ঘরে যেতে নৌকা ভাড়া জনপ্রতি ৫/১০ টাকা।

লাউড়ের ঘর থেকে সুরমা ব্রিজ পর্যন্ত বাইক ভাড়া জনপ্রতি ১২৫ টাকা।

 

প্রয়োজনীয় ফোন নম্বরসমূহঃ 

 শ্যামলী পরিবহণ – ০১৭১৮ ২৮৩০২১

মামুন এন্টারপ্রাইজ – ০১৭৮৩ ৮৭৭৫৬১

ট্রলার এবং বারেকের টিলা যেতে বাইকের জন্য মিস্টার মুহাদ্দিস – ০১৭১৫ ৯৬০১০২

বারেকটিলায় থাকা-খাওয়া অথবা যেকোনো ধরনের সহযোগিতায়- ০১৯১৮ ৭৭০০৪৮

লাউড়ের ঘর থেকে সুনামগঞ্জ সদর আসার বাইকের জন্য নজরুল- ০১৭২১ ৯৫৪২২

হাসন রাজা মিউজিয়াম – ০১৭৪৯ ৭১১৭৭৫

Leave a Reply