বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি
Tweet
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলায় অবস্থিত শিলাইদহ। এখানেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি। কুঠিবাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে পদ্মানদী। বিশ্বকবির অনেক স্মৃতিবিজরিত এই পদ্মানদী ও কুঠিবাড়ি। তিনি যৌবনের গুরুত্বপূর্ণ অনেকটা সময় এখানে কাটিয়েছেন। বর্তমানে এই কুঠিবাড়িটি একটি ঐতিহাসিক স্থান ও পর্যটনকেন্দ্র যা বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর রক্ষণাবেক্ষণ করে।
শিলাইদহ নামটি আগে খোরশেদপুর নামে পরিচিত ছিল। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জোঁড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার এই গ্রামটি কিনে নেওয়ার আগে এখানে একটি নীলকুঠি ছিল। শেলী নামের একজন নীলকর সেটি নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা যায়। গড়াই এবং পদ্মা নদীর মিলিত প্রবাহের ফলে সৃষ্ট গভীর একটি ‘দহ’ (ঘূর্ণিস্রোত) থেকে গ্রামটি শেলী-দহ নামে পরিচিতি লাভ করেছিল। কালক্রমে তা শিলাইদহ-এ পরিণত হয়।
১৮০৭ সাথে রামলোচন ঠাকুরের উইলসূত্রে রবীন্দ্রনাথের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮০৭ সালে এ অঞ্চলের জমিদারির মালিক হন। পরবর্তিতে ১৮৮৯ সালের নভেম্বরে রবীন্দ্রনাথ এখানে জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে প্রথমবারের মতো আসেন। এখানে তিনি ১৯০১ সাল পর্যন্ত জমিদারী পরিচালনা করেন।
জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীর তীরের এই বাড়িটি ২৫ বৈশাখ কবির জন্মবার্ষিকীতে দেশে-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো পর্যটকদের পদচারণে মুখরিত থাকে কুঠি। তিনদিন ধরে সেখানে কবির লেখা গান, কবিতা ও নাটক নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন সংগঠন। ২২ বিঘা জমির প্রায় চারবিঘার ওপর প্রাচীর বেষ্ঠিত তিনতলা ভবনকুঠি। এর কামরার সংখ্যা ১৮টি। ১৮ কামরায় ৮৩টি জানালা, ১৮টি কারুকার্যখচিত দরজা রয়েছে। বাড়িটির ভিতরে কবির ব্যবহার করা অনেক জিনিসপত্র রয়েছে যেমন- পানির ফিল্টার, হাতপালকি, কুঠিবাড়ির চৌবাচ্চা ইত্যাদি। এছাড়াও সেখানে রয়েছে একটি নৌকা, সেই নৌকায় চড়ে কবি পদ্মানদীতে ভ্রমণ করে বেড়াতেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কুঠিবাড়ি ও নৌকায় বসে সাহিত্যিক জীবনে অনেক কবিতা লিখেছেন। এখানে লেখা তাঁর কিছু কবিতা হল ,‘আবেদন’, ‘মানসসুন্দরী’, ‘নববর্ষা’, ‘আষাঢ়’, ‘বিরহ’, ‘পথচাওয়া’, ‘মিলন’, ‘বিচ্ছেদ’, ‘উপহার’ ‘সোনারতরী’, ‘শৈশবসন্ধ্যা’, ‘উর্বশী’, ‘দিনশেষে’, ‘দুইবোন’ ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ। তার লেখা নাটকগুলো হল -‘চিরকুমারসভা’, ‘গোড়ায়গলদ’ (প্রহসন), ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘রাজা’, ‘অচলায়তন’। ছোটোগল্প হচ্ছে‘কঙ্কাল’, ‘শান্তি’, ‘সমাপ্তি’, ‘ফেল’, ‘শুভদৃষ্টি’ ও‘নষ্টনীড়’। কবি এখানে বসে অসংখ্য গান লিখেছেন সেগুলো হল ‘তুমি একটু কেবল বসতে দিয়ো কাছে’, আমার এই পথচাওয়াতে’, ‘কেগোবিদেশি’, ‘যদি জানতেম আমার কীসের ব্যথা’ প্রভৃতি।
কুঠিবাড়ি খোলা ও বন্ধের সময়সূচী
গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। দুপুরে ১টা থেকে ১.৩০টা পর্যন্ত আধাঘণ্টার জন্যে বন্ধ থাকে। শীতকালে খোলা থাকে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। শীতকালে ও দুপুর ১টা থেকে ১.৩০টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। প্রতি শুক্রবারে জুম্মার নামাযের বিরতি সাড়েবারোটা থেকে তিনটা পর্যন্ত। রবিবার সাপ্তাহিকছুটি। এছাড়াও সোমবার বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
টিকেটের দাম
কুঠিবাড়িতে প্রবেশের প্রতি টিকেটের মূল্য পনের টাকা তবে বয়সে পাঁচ বছরের কম বাচ্চাদের জন্যে টিকেট প্রয়োজন হয় না। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিশু-কিশোরদের জন্য প্রবেশমুল্যে পাঁচ টাকা। সার্কভুক্ত দেশের পর্যটকদের জন্যে টিকেটমূল্য পঞ্চাশ টাকা এবং অন্যান্য বিদেশী পর্যটকদের জন্য প্রতি টিকেটের মূল্য একশত টাকা।
কিভাবে যাওয়া যায়
শিলাইদহ যেতে প্রথমে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া সদরে যেতে হবে। ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ায় সড়কপথে যেসব বাসচলাচল করেঃ জেআর পারিবহন, শ্যামলী পরিবহন, এসবি সুপার ডিলাক্স, এফকে সুপার ডিলাক্স। বাস ভাড়া মোটামুটি ননএসি ৪৫০ টাকা, এসি ৮০০ টাকা। রেলপথেও কুষ্টিয়ায় যাওয়া যায় ট্রেনেরনাম- সুন্দরবনএক্সপ্রেস, ভাড়া ৩৫০-৭০০টাকা। কুষ্টিয়া শহর হতে রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ির দূরুত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। শহর হতে অটোরিক্সা, সিএনজি, ইজিবাইক ও অন্যান্য বাহনযোগে সহজেই এবং খুবই কম খরচে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন ও কোথায় খাবেন-
কুষ্টিয়া সদরে রাত্রি যাপনের জন্য মাঝারি মানের বেশকিছু হোটেল আছে ও খাওয়া-দাওয়া করার জন্য ভালো কিছু রেস্টুরেন্ট আছে।
আবাসিক হোটেল হোটেল বলাকা, হোটেল আজমিরী, শাহিন হোটেল, প্রিতম হোটেল, হোটেল নূর ইন্টারন্যাশনাল, পদ্মা হোটেল ও হোটেল রিভারভিউ।
রেস্টুরেন্ট: খাওয়াওদাওয়া হোটেল, আলামিন হোটেল, মমতাজ হোটেল, জাহাঙ্গীর হোটেল ও বিসমিল্লাহ হোটেল।