বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ
Tweet
পর্যটন শিল্প বর্তমানে পৃথিবীতে একক বৃহত্তম শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। যেকোনো দেশের অর্থনৈতিকভাবে টেকসই উন্নয়নের পর্যটনই একমাত্র হাতিয়ার। ১৯৮০ সাল থেকে প্রতি বছর ২৭ সেপ্টেম্বর পালন করা হয় ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস’। আজও সারাবিশ্বের মতো বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে উদযাপন করা হচ্ছে ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস-২০১৮’।
বিশ্ব পর্যটন সংস্থা কতৃক ঘোষিত এবারের বিশ্ব পর্যটন দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘পর্যটন শিল্পের বিকাশে তথ্যপ্রযুক্তি’। এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই প্রতিপাদ্য খুবই প্রসঙ্গিক। প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে পর্যটকরা সহজেই গন্তব্য নির্বাচন করতে পারছেন। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের সুবাদে ঘরে বসেই বাস, বিমান ও রেলের টিকিট বুকিং, হোটেল বুকিং, মিউজিয়ামের টিকিট কেনাসহ ভ্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা পর্যটকরা এখন দ্রুত ও সহজেই পাচ্ছেন।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র দূরীকরণে পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই বর্তমান সরকার পর্যটন শিল্পের বিকাশের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে।’
আটষট্টি হাজার প্রাম বাংলার প্রত্যেক পরতে পরতে রয়েছে সৌন্দর্য। নদীমাতৃক বাংলাদেশে কিছু নদীই আছে সাগরের মতো, কিছু হাওর আছে সমুদ্রের মতো, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যাংগ্রোভ ফরেস্ট আছে বাংলাদেশে। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, কিছু পাহাড় আর কিছু অরণ্য মিলিয়ে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি।
বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প উন্নয়নের সম্ভাবনা অপরিসীম। এখানকার ইতিহাস-ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবসময়ই মুগ্ধ করে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা থাকার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কাছে বাংলাদেশের অন্যরকম একটা আবেদন রয়েছে।
পর্যটনমন্ত্রী শাহজাহান কামাল জানান, কক্সবাজারের টেকনাফে ‘এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। জাতীয় পর্যটন সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। পর্যটন শিল্পের বিকাশে নেওয়া অন্যান্য সরকারি সিদ্ধান্তগুলো হলো— জাতীয় শিল্পনীতি-২০১০ অনুযায়ী পর্যটন শিল্পকে অগ্রাধিকারমূলক খাত হিসেবে চিহ্নিতকরণ, জাতীয় পর্যটন নীতিমালা-২০১০ প্রণয়ন, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর উন্নয়ন, পর্যটন আকর্ষণ অবকাঠামোর উন্নয়ন, রেল ও বিমান পরিবহন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, মেরিন ড্রাইভের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন।
এদিকে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে শুরু হচ্ছে তিন দিনের ‘ট্যুরিজম ফেস্ট ২০১৮’। বিকাল সাড়ে ৩টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল।
উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন বিকাল ৫টায় রয়েছে বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে আদিবাসী ও ফোক নৃত্যের পাশাপাশি থাকছে লালন, বাউল ও জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীদের পরিবেশনা। উৎসবস্থলে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করবে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সহযোগিতায় এর আয়োজন করেছে এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (এটিজেএফবি)।সহযোগী পার্টনার বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, টোয়াব ও আটাব। উৎসবের টাইটেল স্পন্সর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, পাওয়ার্ড বাই ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স। সহ-পৃষ্ঠপোষক হিসেবে থাকছে নভোএয়ার, রংধনু গ্রুপ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও দ্য ওয়ে ঢাকা।
এছাড়া ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল ও চট্টগ্রামের হোটেল আগ্রাবাদ আয়োজন করেছে বাংলাদেশি ফুড ফেস্টিভ্যাল। এছাড়াও বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের অন্যান্য পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আয়োজন করেছে শোভাযাত্রা, মেলা, সেমিনার, ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।