মুজিবনগর সম্পর্কে কিছু কথা
Tweet
মুজিবনগর মেহেরপুর জেলায় অবস্থিত সবচেয়ে ছোট উপজেলা। মুজিবনগর উপজেলার উত্তরে মেহেরপুর সদর উপজেলা, পূর্বে চুয়াডাঙ্গা জেলা, দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য অবস্থিত। মুজিবনগর উপজেলার নামকরণের সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। তবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বৈদ্যনাথতলা আম্রকাননে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের হেডকোয়াটার্স স্থাপিত হয় এবং ১৭ এপ্রিল এস্থলেই অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রি পরিষদ শপথ গ্রহণ করে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অস্থায়ী সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নামের সাথে মিল রেখে এ স্থানের নামকরণ করা হয় মুজিবনগর।
দর্শনীয় স্থান: মুজিবনগরে কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে যা সহজেই পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষন করে
মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স :
মুজিবনগর এর প্রধান আকর্ষন হল মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স। এই আকর্ষনের কারনে প্রতি বছরে দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক এখানে ছুটে আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানতে। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার মেহেরপুর সদর থানার (বর্তমান মুজিবনগর উপজেলা) বাগোয়ান ইউনিয়ন বৈদ্যনাথতলা গ্রামের ঐতিহাসিক আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে দেশ বিদেশের সাংবাদিকেরা উপস্থিত থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী প্রচার করেন। এই ঐতিহাসিক ঘটনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নতুন প্রাণ সঞ্চার করে। ঐতিহাসিক শপথ গ্রহণের স্থানে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ তৈরি হয়েছে। উক্ত স্মৃতিসৌধ ও ঐতিহাসিক আম্রকানন যেকোন পর্যটকের সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণের স্থান হিসেবে মুজিবনগর ঐতিহাসিকভাবে আমাদের দেশ ও জাতির জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান। শপথ গ্রহণের স্মৃতিকে অম্লান করে ধরে রাখার উদ্দেশ্যে, শপথগ্রহণের স্থানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানের আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলার লক্ষ্যে উক্ত কমপ্লেক্সে একটি মানচিত্রের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন সেক্টরকে তুলে ধরা হয়েছে। এই কমপ্লেক্সটিতে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলীর স্মারক স্থাপন করা হয়েছে। সার্বিকভাবে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স, ঐতিহাসিক আম্রকানন, ঐতিহাসিক ছয় দফার রূপক উপস্থাপনকারী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক জীবন্ত প্রদর্শন হিসাবে বিবেচিত হবার দাবী রাখে। মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সের ভিতরের অংশে মুক্তিযুদ্ধকালীন কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার ভাস্কর্য তূলে করা হয়েছে। স্মৃতি কমপ্লেক্সের বাইরের অংশে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ এবং পাকিস্থানি বাহিনীর আত্নসমর্পণ এর দৃশ্যসহ আরও ঐতিহাসিক ঘটনার ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত উক্ত ভাস্কর্যগুলি যেকোন বিদগ্ধ পর্যটককে আকর্ষণ করবে। মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন সেক্টরের অবস্থান বাংলাদেশের মানচিত্রে প্রদর্শন করে মানচিত্রটি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরস্থ মূল আঙ্গিনায় স্থাপন করা হয়েছে। সুদৃশ্য এ মানচিত্রটিতে মুক্তযুদ্ধকালীন বিভিন্ন সেক্টরের অবস্থান ও উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী তুলে ধরা হয়েছে।
মুজিবনগর স্মৃতিসৌধঃ
এই স্মৃতিসৌধটি মুজিবনগর কমপ্লেক্সের অন্যতম স্থাপনা। মুজিব নগর সরকার গঠিত হয় ১৯৭১ সালে ১০ এপ্রিল। ১৯৭১-এর অস্থায়ী সরকারের শপথসহ মুক্তিযুদ্ধের নানান ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে ১৯৮৭ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে উদ্বোধন করা হয় স্মৃতিসৌধটি। এটি নকশা করেন স্থপতি তানভীর করিম।স্মৃতিসৌধটির বৈশিষ্ট্য হল , ১৬০ ফুট ব্যাসের গোলাকার স্তম্ভের উপর মূল বেদিকে কেন্দ্র করে ২০ ইঞ্চি পুরু ২৩টি দেয়াল, যা উদীয়মান সূর্যের প্রতীক। সৌধের ২৩টি স্তম্ভ ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরের সংগ্রামের প্রতীক। ৩০ লাখ শহীদের স্মৃতিকে স্মরণ করে রাখতে সৌধে বসানো হয়েছে ৩০ লাখ পাথর। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক স্মৃতিসৌধের বেদিতে আরোহণের ৯টি ধাপ।
কিভাবে যাবেন
প্রথমে ঢাকা থেকে বাসে মেহেরপুর সদরে যেতে হবে। মেহেরপুর শহর থেকে রাজধানী ঢাকার দুরত্ব ২৬৫ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে সড়ক পথে মেহেরপুরে যে বাসগুলো যায়, জে আর পরিবহন, শ্যামলী পারিবহন, হানিফ পরিবহন ইত্যাদি। জনপ্রতি বাসের ভাড়া এসি ৮০০ টাকা, ননএসি ৪৫০ টাকা। এছাড়াও সড়ক পথে মেহেরপুর জেলা সদর থেকে দেশের প্রায় সকল জেলায় যাতায়াতের সুব্যবস্থা আছে। মেহেরপুর সদরে পোঁছানোর পরে, বাস অথবা অটোরিক্সাতে মুজিবনগর যাওয়া যায়। মেহেরপুর জেলা সদর থেকে সড়ক পথে মুজিনগরের দূরত্ব ১৮ কি:মিঃ।
কোথায় থাকবেন
সরকারী (১) পর্যটন মোটেল, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন (২) সূর্যোদয়, জেলা পরিষদ ডাকবাংলো জেলা পরিষদ, মেহেরপুর। (৩) পিডব্লিউডি (গণপূর্ত) রেষ্ট হাইজ, গণপূর্ত বিভাগ, মেহেরপুর। এছাড়াও রয়েছে ফিন টাওয়ার হোটেল, নাইট বিলাস হোটেল।