রুপালি ইলিশ ও একদিনের ভ্রমণে চাঁদপুর
Tweet
পদ্মায় ইলিশ মাছ ধরার মরসুম চলিয়াছে। দিবারাত্রি কোন সময়েই মাছ ধরবার কামাই নাই। সন্ধ্যার সময় জাহাজঘাটে দাঁড়াইলে দেখা যায় নদীর বুকে শত শত আলো অনির্বাণ জোনাকির মত ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। জেলে-নৌকার আলো ওগুলি। …… শেষরাত্রে ভাঙা ভাঙা মেঘে ঢাকা আকাশে ক্ষীণ চাঁদটি উঠে। জেলে-নৌকার আলোগুলি তখনো নেভে না। নৌকার খোল ভরিয়া জমিতে থাকে মৃত সাদা ইলিশ মাছ। লন্ঠনের আলোয় মাছের আঁশ চকচক করে,মাছের নিষ্পলক চোখগুলিকে স্বচ্ছ নীলাভ মণির মত দেখায়। ১৯৩২ সালে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন তার পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসে।
এই মৃত সাদা ইলিশ মাছগুলোই সবচেয়ে টাটকা। বরফের নিচে ঢাকা পরার আগে কুবের মাঝির ইলিশের চেয়ে টাটকা ইলিশ কেউ কোনোদিন খেতে পারে নাই। টাটকা ইলিশ খাওয়া নিয়ে জ্ঞানতাপস জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘ইলিশ যেদিন কিনবা সেদিনই রান্না করবা। আর চেষ্টা করবা রান্না কইরাই খাইতে দিতে। দুইবার গরম করলে ইলিশের স্বাদ নষ্ট হয়। পদ্মার ইলিশ কিনতে চেষ্টা করবা’।
ইলিশের আসল স্বাদ পেতে হলে খেতে হবে পদ্মার ইলিশ। আসল ইলিশ পাওয়া যায় চাঁদপুর আর মাওয়া ঘাটে। অনেকেই বলে যে, চাঁদপুরের যেখানে পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনা সেখানকার ইলিশ সেরা। বাজার থেকেও আপনি ইলিশ মাছ কিনে খেতে পারবেন। বাজারে নানা রকম ইলিশ পাওয়া যায়। বরিশাল, ভোলা, কুয়াকাটার নদী আর সাগরেও ইলিশ পাওয়া যায়, এমনকি মিয়ানমার হতেও আমদানি হয়ে আসছে ইলিশ। পদ্মার বাইরের ইলিশগুলো আকারে বড় কিন্তু স্বাদে ভিন্নতা থাকে। পদ্মার ইলিশ চেনার উপায় হলো, রুপালি ইলিশের পেটের অংশে লালচে, সোনালি আভা থাকে। পদ্মার ইলিশের মধ্যে আবার পিঠ মোটা ইলিশের স্বাদ বেশি। মোটকথা, আসল ইলিশের স্বাদ পেতে হলে আপনাকে ইলিশ খাওয়ার জ্যামিতি বুঝতে হবে। এসব জ্যামিতিক উপপাদ্য পাশ কাটিয়ে ইলিশের আসল স্বাদ পেতে একদিনের জন্য বেড়িয়ে আসুন চাঁদপুর থেকে। চাঁদপুর ইলিশের রাজধানী।
রেস্টুরেন্টগুলোতে খেতে পারবেন একদম টাটকা ইলিশ। শহরের মাদ্রসা রোডের নদীবন্দর এলাকার রেস্টুরেন্টগুলোর মান ভালো। ইলিশ ছাড়াও আছে বিভিন্ন প্রজাতির নদীর মাছ, পোড়া মরিচ এবং বেগুন ভাজি। বড় স্টেশনের পাশের মোকাম থেকে ইচ্ছে হলে পছন্দের ইলিশ কিনে নিতে পারেন। সঙ্গে নিয়ে আসার জন্য বরফ দিয়ে ইলিশ প্যাকেট করারও ব্যবস্থা আছে এ বাজারে।
বাংলাদেশের যেকোনো স্থান থেকেই চাঁদপুর যাওয়া যায়। যারা ঢাকা থেকে যেতে চান তারাও অনেক উপায়ে যেতে পারেন চাঁদপুর। তবে সদরঘাট থেকে লঞ্চে যাওয়াই সবচেয়ে আরামদায়ক হবে আশাকরি। কোনো একদিন সকালে সদরঘাট থেকে লঞ্চে উঠে যেতে পারেন সময় লাগবে তিনঘণ্টা; আবার বিকেল অথবা সন্ধ্যার পর ফিরেও আসতে পারেন ঢাকায় তিনঘণ্টায়। ঢাকা ও চাঁদপুর থেকে সকাল ৬টা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত প্রায় প্রতি ঘণ্টায় লঞ্চ পাওয়া যায়। ভাড়া প্রথম শ্রেণীর সিঙ্গেল কেবিন ৩০০-৫৫০ টাকা, ডাবল কেবিন ৬০০-১০০০ টাকা। এছাড়া ডেকে বসেও যাওয়া যায়।
হাতে যদি কিছু সময় থাকে তাহলে কিছুক্ষণ গিয়ে বসতে পারেন পদ্মারতীরে ইলিশ পার্কে। এখান থেকে নৌকা ভাড়া করে নিয়ে তিননদীর মোহনা থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। ঘুরে আসতে পারেন ডাকাতিয়া নদীর উপর নির্মিত গাছতলা ব্রীজ থেকেও।