সিকিমে চালু হলো বিমান বন্দর; বাংলাদেশিদের অনুমতি মিলবে কবে
Tweet
জোংগুর কথা কারও মুখে শুনেছেন? না শুনলে দোষের কিছু নেই! কারণ বাংলাদেশিদের জন্য সিকিম যাওয়ার পারমিশন নেই। সিকিমের একটা নিরিবিলি সুন্দর পরিচ্ছন্ন গ্রামের নাম জোংগু।এই গ্রামে লেপচারা আজও নিজেদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। সবকিছু থেকে আলাদা হয়ে রক্ষা করে চলেছেন সিকিমের আসল চেহারাকে। লেপচারাই তো সিকিমের মূল অধিবাসী। সেইজন্যই আপনি সিকিমের যেখানেই যান না কেন জোংগু না ঘুরলে আসল সিকিমের সৌন্দর্য আপনার কাছে অধরাই থেকে যাবে।
বাংলাদেশিরা সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে যেতে পারে কিন্তু গ্যাংটকে তো সিকিমকে খুঁজে পাওয়া দায়! সেখানে না আছে তেমন ঠান্ডা যা পাহাড়ে যাওয়ার আনন্দ দেয়! না আছে বিশুদ্ধ পাহাড়ি মানুষের সঙ্গ। নানা ভাষাভাষীর ভিড় মিলিয়ে গ্যাংটক আদতে সিকিমের নানা দিকে ঢোকার দরজা। তারই একটা দিক চলে গিয়েছে জোংগুর পথে। যেখানে রয়েছে সিকিমের আসল মজা!
পাহাড়ে ভ্রমণের মজা পেতে বাংলাদেশিরা সিকিমের আশেপাশে শিলিগুড়ি, মিরিক, দার্জিলিং ও কালিম্পং পর্যন্ত ঘুরে আসতে পারে কিন্তু সিকিমের সৌন্দর্য আজও অধরা। সিকিমে প্রবেশের অনুমতি না থাকলেও বাংলাদেশী পর্যটকদের সিকিম নিয়ে আগ্রহের কমতি নাই। সিকিমে এতোদিন কোনো বিমান বন্দর ছিল। সিকিমের আশেপাশে একমাত্র এয়ারপোর্ট ছিল বাগডোগরা যা রাজধানী গ্যাংটক থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের নয় বছরের মাথায় এসে আজ সিকিমের একমাত্র এয়ারপোর্ট পাকইয়ং উদ্বোধন করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্মান কাজ শেষ হলেও উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত হতে লেগে যায় আরও কিছু সময়। নির্মান ব্যয় প্রথমে ৩০৯ কোটি টাকা ধরা হলেও শেষ পর্যন্ত লেগে যায় ৬০৫ কোটি টাকা। এই বিমানবন্দরের রানওয়ে ছোট, তাই ৭০ আসনের ছোট এটিআর চলবে কলকাতা-পাকইয়ং বা বাগডোগরা-পাকইয়ং রুটে। আগামী ৪ অক্টোবর হতে শুরু হবে বাণিজ্যিক ফ্লাইট।
সহজতর ভ্রমণ মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষ সিকিমে ভ্রমণে যাবে। উপভোগ করবে নীলাভ আকাশের বুকে মেঘ এবং পর্বত শিখরের লুকোচুরি। বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার উপর সূর্যোদয় এবং আলোকরশ্মির সুবর্ণ রঙের ধারায় রঙিন ঘুরে আসবে দুরন্ত থোলুং চু নদীর উপরে ঝুলন্ত বাঁশের সাঁকো বেয়ে থোলুং মনাস্ট্রি।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত সিকিমকে “পূর্বের সুইজারল্যান্ড” নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। সুউচ্চ, কুয়াশা-আবৃত পর্বতমালা সিকিমের দিগন্ত জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে। তিস্তা নদী এই পার্বত্য উপত্যকা অঞ্চলের উত্তেজনাপূর্ণ সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করে থাকে। বাংলাদেশী প্রবেশ নিষিদ্ধ এই আরশী নগরে রয়েছে মনোরম হ্রদ। সেই হ্রদের পানি এতটাই স্বচ্ছ যে তলা পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায়। ফুলে ফুলে ছাওয়া সুউচ্চ জুনিপার এবং রডোডেনড্রন অরণ্য ও হাজার প্রজাপতির মিলন মেলাও বসে আছে এই আরশি নগরে।
উদ্বোধনের আগেরদিন নরেন্দ্র মোদী টুইট করে বলেছিলেন, আমি পাকইয়ং বিমানবন্দর উদ্বোধন করতে যাচ্ছি আগামীকাল। যা উদ্বোধন করলে আমাদের যোগাযোগের আরও উন্নয়ন হবে এবং সিকিমের লোকজন অনেক সুবিধা পাবে।
সিকিমের লোকজন অনেক সুবিধা পাবে কথা সত্য, সিকিমের যোগাযোগ ব্যবস্থাও হবে উন্নত। সিকিমের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে, পর্যটনেরও উন্নয়ন হবে নিশ্চিত করে বলাই যায়। জোংগুদের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হবে, শুধু বলা যায় না, বাংলাদেশী পর্যটক কবে সিকিম যাওয়ার পারমিশন পাবে। নিশ্চিত করে তো নয়ই সম্ভাবনার কথাও বলা যায় না। বাংলাদেশী সৌন্দর্য পিপাসুদের তাই হয়তো লালনের কথার সুর ধরেই আফসোসের গান গেয়ে যেতে হবে, বাড়ির পাশে আরশি নগর সেথায় এক পড়শি বসত করে, আমি একদিনও না দেখিলাম তারে ………