সুন্দরবনে তৈরি হচ্ছে চারটি নতুন পর্যটন কেন্দ্র
Tweet
খুলনা প্রতিনিধিঃ দেশের ইকো-ট্যুরিজমকে আরও বিকশিত করতে সুন্দরবনে তৈরি হচ্ছে চারটি নতুন পর্যটন কেন্দ্র। প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ইকো-ট্যুরিজম বিকাশের সাথে সাথে সুন্দরবনের উপর দেশি-বিদেশি পর্যটকের ক্রমবর্ধমান চাপ সামাল দেয়া সহজ হবে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগ।
ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র চারটি গড়ে উঠছে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের আলীবান্ধা ও চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক এলাকায় আর খুলনার পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের শেখেরটেক ও কৈলাশগঞ্জ এলাকায়। এগুলোতে হরিণ ও কুমিরসহ বন্যপ্রাণীর মুক্ত বিচরণ ব্যবস্থার পাশাপাশি থাকবে পর্যটকদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তাও।
এসব পর্যটন কেন্দ্রে নির্মান করা হবে আধুনিক গ্যাংওয়ে বা জেটি। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক চিরসবুজ রূপ দেখতে ওয়াচ টাওয়ার নির্মানের পাশাপাশি পায়ে হাঁটার জন্য থাকবে পর্যাপ্ত কাঠের রাস্তা (উডেন ট্রেইল) বিশ্রামাগারসহ কিছু আধুনিক ওয়াশরুমও নির্মাণ করা হবে। ফলে সুন্দরবনে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য বর্তমানের তুলনায় সুযোগ-সুবিধা কিছুটা বাড়বে।
১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জীববৈচিত্র্যে ভরপুর সুন্দরবনের তিনটি পর্যটন এলাকাকে ৭৯৮তম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করে ইউনেস্কো। এর মধ্যে রয়েছে পূর্ব অভয়ারণ্য কটকা-কচিখালী, নীলকমল দক্ষিণ অভয়ারণ্য ও পশ্চিম অভয়ারণ্যের ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ হেক্টর বন।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বনে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েই চলেছে ফিবছর। ২০১৬-১৭ পর্যটন মৌসুমে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৪৯০ জন পর্যটক সুন্দরবন দেখতে এসেছিল। ২০১৭-২০১৮ পর্যটন মৌসুমে সুন্দরবন দেখতে আসা পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ২১ হাজার ৯৬৯ জনে। গত অর্থবছরে শুধুমাত্র সুন্দরবনের পর্যটন খাত থেকে বন বিভাগের রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা।
বর্তমানে সুন্দরবনের অধিক জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলো হলো করমজল, হাড়বাড়িয়া, কটকা, জামতলা, টাইগার পয়েন্ট, বাদামতলা সমুদ্র সৈকত, কচিখালী, দুবলা শুটকি পল্লী, দোবেকী, কলাগাছিয়া, মান্দারবাড়িয়া ও হিরণ পয়েন্ট বা নীলকমল। ঘুরে ফিরে এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেই দেশি-বিদেশি পর্যটকগন আসা-যাওয়া করেন প্রতি পর্যটন মৌসুমে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের প্রতি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের বাড়তি আগ্রহ রয়েছে। তাই বর্তমান জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর ওপর চাপ কমাতে ও পরিকল্পিত ইকো-ট্যুরিজম বিকাশ করতে নতুন চারটি ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান জানান, সুন্দরবন হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। পৃথিবীর হাতেগোনা মাত্র যে কয়েকটি বন ইউনেস্কোর চোখে হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি পেয়েছে সুন্দরবন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। তিনি বলেন, ‘সুন্দরবন রাত-দিন ২৪ ঘণ্টায় ৬বার তার রূপ-রঙ বদলায়। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের কটকার বাদামতলা সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখা যায়।
তিনি আরও জানান ‘জলবায়ু পরির্বতনের প্রভাব, ফারাক্কা বাঁধের কারণে উজান থেকে নেমে আসা মিঠা পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া ও মানুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে রয়েছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর প্রজনন। তাই সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের অধিকতর সুরক্ষা দিয়েই পরিবেশ-প্রতিবেশবান্ধব পরিকল্পিত ইকো-ট্যুরিজমে গুরুত্ব দিচ্ছে বন বিভাগ।