আজমির শরিফ; ধর্ম, ইতিহাস আর স্থাপত্য সমন্বয় ঘটেছে যেখানে
Tweet
মুসলিম শরিফ তীর্থ আজমির শহরটি আজকের নয়। পাহাড় বেষ্টিত আনা সাগরের তীরে ৪৮৬ ফুট উচ্চে রমনীয় পরিবেশে সবুজ মরুদ্যানের মত রুপ পেয়েছে শহর। ধর্ম, ইতিহাস আর স্থাপত্য সমন্বয় ঘটেছে এখানে। তেমনই সর্বধর্ম সমন্বয়ে মিলনক্ষেত্র ও পূণ্যভূমি এই আজমির। ধর্মগগুরু খাজা মৈনুদ্দিন চিস্তি ১১৯২ খ্রিষ্টাব্দে মহম্মদ ঘোরীর সঙ্গে ভারতে আসেন।কিংবদন্তী প্রবাদপুরুষ খাজা মৈনুদ্দিন চিস্তি ১১৪২ খ্রিষ্টাব্দে পারস্যের সঞ্জারে জন্মগ্রহন করেন।তিনি গরিবে নেওয়াজ নামেও পরিচিত। মইনুদ্দিন চিশতীই উপমহাদেশে প্রথম এই ধারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত করেন। তিনি ভারতে চিশতী ধারার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক ধারা বা সিলসিলা এমনভাবে পরিচিত করেন ;পরবর্তীতে তাঁর অনুসারীরা যেমন, বখতিয়ার কাকী, বাবা ফরিদ, নাজিমদ্দিন আউলিয়াসহ (প্রত্যেকে ক্রমানুযায়ী পূর্ববর্তীজনের শিষ্য) আরো অনেকে ভারতের ইতিহাসে সুফি ধারাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান।
খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী ভ্রমণ করতে পছন্দ করতেন তিনি বহু দেশ ভ্রমণ করেন। তৎকালীন বিভিন্ন জ্ঞানী, গুণী, পন্ডিত, দার্শনিকসহ অসংখ্য সুফি সাধকের সাথে সাক্ষাত করেন বলে নানা গ্রন্থে তথ্য পাওয়া যায়। তিনি ইরাকের বাগদাদে আবদুল কাদির জিলানীর সাহচর্যে ৫৭ দিন অবস্থান করেন। তাঁর জীবনীতে বর্ণিত আছে যে, এ সময় আব্দুল কাদির জিলানী তাকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, ইরাকের দায়িত্ব শায়েক শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীকে আর হিন্দুস্থানের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হলো। একই সংবাদ নিজ পীর খাজা ওসমান হারুনীর সাথে মদীনায় অবস্থান ও জিয়ারতকালে নবী মুহাম্মদ (স.) এর পক্ষ থেকে পেয়েছিলেন। তিনি আরব হতে ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান হয়ে প্রথমে লাহোর পরে দিল্লী হয়ে আজমিরে বসতি স্থাপন করেন।তিনি মক্কা হয়ে মদীনায় যাওয়ার পথে আল্লাহর নির্দেশ পান যে, তাকে ভারতবর্ষে ইসলাম ধর্মের মহাত্ত প্রচার করতে হবে। তিনি তখন ভারতে আসেন। এই আজমীরেই আস্তানা করে বিভিন্ন স্থানে ইসলাম ধর্মের প্রচার করতে থাকেন। ১২৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ৯৪ বছর বয়সে এই আজমীরেতেই তার জীবনাবসান হয়। এখানেই তাকে সমমাধিস্থ করা হয়। এটাই আজমীর শরিফ।
আজমির শরিফটি সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান। আজমির শরিফের ভিতরে রয়েছে ভেলভেটে মোড়া শ্বেত মর্মরের সমাধি বেদী, রূপোর রেলিং দিয়ে ঘেরা, সোনায় মোড়া গম্বুজাকৃতি সিলিং। ভক্তরা এখানে ফুল চাদর চড়ান। এই সমাধী বেদীর অদূরে আছে মৈনুদ্দিন চিস্তির কন্যা বিবি হাফিজ জামাল ও শাহজাহান কন্যা চিমনি বেগমের সমাধি। এই মাজার ঘিরে গড়ে উঠেছে দুটি মসজিদ, একটি সম্মেলন কক্ষ। রুপার পাতে মোড়া বুলন্দ দরজা।
১২৩৬ খ্রিষ্টাব্দে দাস সুলতান ইলতুতমিশ এই মসজিদের নির্মান কাজ শুরু করেছিলেন আর ১৬ শতকে মোঘল সম্রাট হূমায়ূনের হাতে এটি শেষ হয়। এর প্রবেশদ্বারটি তৈরি করেছিলেন হায়দারাবাদের নিজাম। ডাইনে আকবরী মসজিদ ৩২৩ মিটার উচু মূল প্রবেশদারের বুলন্দ দরওয়াজা। ১৫৭০-৮০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রতি বছর আগ্রা থেকে পায়ে হেটে সম্রাট এই দরগায় আসতেন। জাহাঙ্গীরও এখানে মসজিদ গড়েন।
আজমির শরিফ মাজারকে কেদ্র করে গড়ে ওঠেছে দারুণ এক বাবসা , এখানে বিক্রি হয় ফ্লাওয়ার বাস্কেট , ভেলভেটের চাদর, সুগন্ধি আগরবাতি , টুপিসহ নানারকম জামাকাপড় আর খাবার দাবার। এখানে অনেক খাবারের দোকান গড়ে ওঠেছে, এগুল বেশ ভালই চলে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এই দরগাহ পরিচালিত হয় ভারত সরকারের খাজা বাবা অ্যাক্ট-১৯৫৫ এর আওতায় সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত দরগাহ কমিটি মাজারের জন্য প্রাপ্ত সকল প্রকারের ডোনেশন ব্যবস্থাপনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ সহ বিভিন্ন জনহিতকর প্রতিষ্ঠান যেমন ডিসপেনসারি , গেস্ট হাউস ইত্যাদি পরিচালনা করে থাকেন।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাস অথবা বিমান যোগে কলকাতা। কলকাতা থেকে বিমান অথবা ট্রেন যোগে দিল্লী। এর পর সড়ক বা ট্রেনযোগে আজমির শরীফ অথবা সরাসরি কলকাতা থেকে আজমির।
বাঙালী অধ্যুষিত আজমির শরীফ মাজরের আশে পাশে আপনার পছন্দমত যে কোন এলাকায় বিভিন্ন মূল্যমানের হোটেলে থাকা ও খাওয়াদাওয়া করতে পারেন। অথবা খাদেমদের বাড়িতে বিনা মূল্যে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।