সেন্টমার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পর্যটকদের ভ্রমন বিধিনিষেধ
Tweet
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ২০১৯ সালের ১ মার্চ থেকে সেখানে পর্যটকদেররাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে সরকার সেন্টমার্টিনে যাওয়া নিষিদ্ধ করছে না। কিন্তু জানা গেছে, সেন্টমার্টিন দীপে পর্যটকদের রাতযাপন সীমিত করার কথা ভাবা হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের চিত্র তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। এর পরিপেক্ষিতে ২৩ সেপ্টেম্বর দ্বীপ রক্ষায় গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের রাতযাপন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়।
এছাড়াও অন্য সিদ্ধান্তগুলো হলো—ছেঁড়াদ্বীপ ও গলাচিপায় পর্যটকদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। মোটরসাইকেল, গাড়ি ও স্পিডবোট চলাচল করতে পারবে না। কচ্ছপের প্রজনন ব্যাহত হওয়ায় রাতে আলো জ্বালানো যাবে না। বঙ্গোপসাগরে জাহাজ চলাচলের ওপর গতিবিধি আরোপ করা হয়েছে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫০০ পর্যটক বেড়ানোর জন্য সুযোগ পাবেন। সকল প্রকারের নতুন স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জেনারেটর নিষিদ্ধ থাকবে। প্রয়োজনে সৌরশক্তি ব্যবহার করতে হবে। জমি ক্রয়বিক্রয় করা যাবে না। সব হোটেল-মোটেল ও স্থাপনা উচ্ছেদ করে জমি অধিগ্রহণ করে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে।
আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে কার্যকর করতে মন্ত্রণালয় এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ নিয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (পর্যটন ও আইসিটি) এসএম সরওয়ার কামাল বলেছেন, ‘পর্যটকদের অতিরিক্ত যাতায়াতের কারণে সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পথে চলে গেছে। এ কারণে ২০১৯ সালের ১ মার্চ থেকে সেন্টমার্টিনে রাত্কালীন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। পর্যটকরা শুধু দিনের বেলায় সেখানে বেড়াতে পারবেন।’ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক জানান, নিষিদ্ধের পরিবর্তে সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের রাতযাপন সীমিত করা হবে। তার আশা, এতে দ্বীপটির ওপর চাপ কমে আসবে। তিনি মনে করেন পর্যটকদের রাতযাপন হঠাৎ বন্ধ করে দিলে বিরূপ প্রভাব পড়বে। কারণ স্থানীয়দের আয়ের একটি বড় উৎস পর্যটন।
পর্যটকদের কেন্দ্র করে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান নির্ভর করে। তাছাড়া সেখানে অনেক হোটেল-মোটেলে বিনিয়োগ রয়েছে। এসব বিবেচনায় বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে। পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের যাওয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। দিনে কতজন যেতে পারবেন তা নির্ধারিত থাকবে। এজন্য সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের যাওয়ার আগে অনলাইনে নিবন্ধন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। নির্ধারিত ফি দিয়ে নিবন্ধন করে যেতে হবে পর্যটকদের। ওই অর্থ ব্যয় করা হবে দ্বীপটির উন্নয়নে। এ ব্যাপারে কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল দাশগুপ্ত জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে দেরীতে হলেও একে আমরা স্বাগত জানাই। এর ফলে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি দ্বীপের বালিয়াড়ি গঠন, কাছিমের প্রজনন বৃদ্ধি ও লাল কাকঁড়া প্রজননও বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে বিলুপ্ত সামুদ্রিক শৈবালও উত্তোলনও বন্ধ হবে। তিনি আরও জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপে স্থানীয় ব্যতিত সকল বহিরাগত ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে কারণ এদের জন্যই দ্বীপের মারাত্বক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। সেই সাথে একটি মাত্র জাহাজ চলাচলের অনুমতি তাও মাত্র তিন মাসের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এর জন্য আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। এদিকে সেন্টমার্টিনে রাতে পর্যটকদের অবস্থান নিষিদ্ধ হলে পর্যটন শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করে আসছেন স্থানীয় মনোপলি ব্যবসায়ীরা।
প্রসঙ্গত দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনেই ৬৮ প্রজাতির প্রবাল রয়েছে। আরও আছে ১৫১ প্রজাতির শৈবাল, ১৯১ প্রজাতির মোলাস্ক বা কড়ি-জাতীয় প্রাণী, ৪০ প্রজাতির কাঁকড়া, ২৩৪ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪ প্রজাতির উভচর, ২৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ১২০ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। এছাড়া এই প্রবাল দ্বীপে ১৭৫ প্রজাতির উদ্ভিদ, দুই প্রজাতির বাদুড় ও পাঁচ প্রজাতির ডলফিন দেখা যায়।
কক্সবাজার কলাতলীর হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেমের কথায়, এই প্রবাল দ্বীপে বেড়ানোর উদ্দেশে অনেক পর্যটক তিন দিন অথবা এক সপ্তাহের জন্য কক্সবাজারে আসেন। সেন্টমার্টিনে রাতে থাকতে না পারলে কক্সবাজারবিমুখ হয়ে যাবে ভ্রমণকারীরা। এতে পর্যটন খাত থেকে আসা রাজস্ব হ্রাস পাবে।