পর্যটনে সম্ভাবনা অপার, নেই বিপনন
Tweet
বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নবম আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা। ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত দিনব্যাপী মেলায় অংশগ্রহন করছে দেশ বিদেশের ট্যুর অপারেটর ও বিমান প্রতিষ্ঠানগুলো। এপ্রিলের ১৮ থেকে ২০তারিখ পর্যন্ত আয়োজিত এই মেলায় দর্শনার্থী হিসেবে নেপাল থেকে এসেছেন বিনোদ আচার্য। তিনি নেপাল এভারেস্ট হলিডেজের চেয়ারম্যান। এপিভি হসপিটালিটি’র কর্ণধার পুনীত শর্মা এসেছেন ভারত থেকে । ‘পর্যটন আলাপ’-এ তারা মুখোমুখি হয়েছিলেন পর্যটনিয়ার সম্পাদক আবু রায়হান সুমনের সাথে। আলাপের চুম্বক অংশ –
সুমন: বাংলাদেশকে কেমন লাগছে?
পুনীত: খুব ভালো। বাংলাদেশের মানুষ সহজ-সরল। ভীষণ অতিথি পরায়ণ। এ দেশের মানুষ পর্যটক হিসেবেও অসাধারণ। ভারতে প্রতি বছর যতো বিদেশি পর্যটক ঘুরতে আসেন এরমধ্যে বাংলাদেশীরাই সংখ্যায় বেশি। সেই হিসেবে বাংলাদেশ আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ।
বিনোদ: বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষ দু’টোই সুন্দর। এ দেশের মানুষ তুলনামুলক বিচারে উদার প্রকৃতির এবং বন্ধুবৎসল। ইন্ডিয়া, নেপাল আর বাংলাদেশ তো ভৌগলিকভাবে খুবই ঘণিষ্ট। চরিত্রগতভাবেও আমাদের মিল অসাধারণ। পর্যটনের ক্ষেত্রে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক নেপালে ঘুরতে যায়। নেপালের পর্যটন উন্নয়নে বাংলাদেশী পর্যটকের বিশেষ অবদান আছে। বাংলাদেশের প্রত্যেক পর্যটকই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
সুমন: এটা কি বাংলাদেশে প্রথম সফর?
পুনীত: না, বাংলাদেশে এটা আমার প্রথম সফর নয়। প্রথমবার এসেছিলাম ২০১৭ সালে। এরপর ২০১৮তে একবার। এবার নিয়ে মোট তিনবার আসা হলো বাংলাদেশে। আগামীতেও আসবো।
বিনোদ: ২০১৪সালে প্রথমবার বাংলাদেশে এসেছিলাম। নেপালের একদল পর্যটক নিয়ে কক্সবাজার আর সেন্টমার্টিন দ্বীপে ঘুরেছি। নেপালে সমুদ্র সৈকত নেই। কক্সবাজার আর সেন্টমার্টিন দ্বীপ আমাকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। এবার নিয়ে মোট তিনবার আসা হয়েছে বাংলাদেশে। শেষ দু’বার বাণিজ্যিক প্রয়োজনে।
সুমন: বাংলাদেশ ভ্রমণের উদ্দেশ্য কি বেড়ানো না বাণিজ্যিক?
পুনীত: সাধারণতঃ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশে আসি। এ পর্যন্ত যতবার এসেছি ততবার এদেশের ট্যুর অপারেটর, ট্র্যাভেল এজেন্টসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সাথে সাক্ষাৎ করেছি, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলাপ করেছি। চলমান প্যাকেজগুলো কিভাবে আরও সহজ ও সাশ্রয়ী করা যায়, পর্যটকদের জন্য স্বস্তিদায়ক আর অপারেটরদের জন্য লাভজনক করা যায়- সেসব নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করার জন্য বারবার আসা।
বিনোদ: প্রথমবারের পর থেকে দু’বার বাংলাদেশে এসেছি। এ দু’বারই এসেছি বাণিজ্যিক কারণে। বিজনেস পার্টনারদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে পারস্পারিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে আলোচনা করেছি। নতুন নতুন বিজনেস পার্টনার তৈরী করেছি।
সুমন: ব্যবসা বাড়ানোর জন্য কী কী ব্যবসায়ীক কৌশল অবলম্বন করে থাকেন?
পুনীত: ইনবাউন্ড ট্যুর অপারেটর হিসেবে আমার উদ্দেশ্য থাকে বিদেশী বিজনেস পার্টনারদের সহযোগিতা নিয়ে ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি করা। গত সপ্তাহে ইউরোপ থেকে ২৫ জন ট্যুর অপারেটরকে দাওয়াত করে ভারতে এনেছি। দিল্লী, আগ্রা, আজমীর শরিফ থেকে শুরু করে কেরালা রাজ্য পর্যন্ত তাদের নিয়ে ট্যুর করেছি। ওনাদের বিদায় জানিয়ে বাংলাদেশে ছুটে এসেছি। এখানে বেশ ক’জন এজেন্ট ও বিজনেস পার্টনাদের সাথে দরকারি বিষয়ে সভা আছে। একই সাথে পর্যটন মেলা ঘুরে দেখেছি। বিভিন্ন ট্যুর অপারেটরের অফারগুলো দেখছি। নতুন কিছু পার্টনার খুঁজে পাবার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। প্রতিনিয়তই ব্যবসা সম্প্রসারণের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
বিনোদ: নেপালের পর্যটনগন্তব্যগুলো সম্পর্কে আমার বিদেশি এজেন্ট তথা বিজনেস পার্টনারদেরকে অবহিত করি। সিজন – অফসিজনের হরেকরকম অফার দেই। বিদেশি বিজনেস পার্টনারদেরকে নেপাল ভ্রমণে আমন্ত্রণ জানাই। তাঁরা এলে নেপালের পর্যটনগন্তব্যগুলো ঘুরিয়ে দেখাই।
সুমন: বাংলাদেশের কোন কোন পর্যটনগন্তব্যগুলোর নাম শুনেছেন?
পুনীত: আমি তো বেশ ক’বার ঢাকায় এসেছি। ঢাকা মোটামুটি চিনি। ঢাকার নিজের একটা ঐতিহাসিক ঐতিহ্য রয়েছে। ঢাকা নিজেই একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনগন্তব্য। এছাড়া সুন্দরবন আর কক্সবাজার আছে। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম নিরবচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত। বেশকিছু পাহাড়ি গন্তব্যের কথাও শুনেছি।
বিনোদ: নেপালের পর্যটকদের নিয়ে আমি নিজেই কক্সবাজার আর সেন্টমার্টিন দ্বীপে গিয়েছি। এছাড়া সুন্দরবন, কুয়াকাটা আর সাজেক ভ্যালির নাম শুনেছি।
সুমন: বাংলাদেশের পর্যটন সম্ভাবনা সম্পর্কে আপনাদের মতামত কি?
পুনীত: বাংলাদেশের পর্যটন সম্ভাবনা অনেক। এদেশের অনেক মানুষ নিয়মিত ভ্রমণ করে। বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটক আকর্ষন করার অপার সুযোগ রয়েছে। যেহেতু সুন্দরবন ও কক্সবাজারের মত গুরুত্বপূর্ণ এবং একই সাথে নান্দনিক পর্যটনগন্তব্য আছে। এই দু’টো পর্যটনগন্তব্যকে যথাযথভাবে বিশ্ব বাজারে বিপনন করা যায় গেলে ব্যাপকহারে পর্যটক আসবে। শুধু পর্যটনের উদ্দেশ্যেই ভারত থেকে প্রতিবছর অল্পসংখ্যাক পর্যটক বাংলাদেশে আসছে। অথচ, যথাযথ বিপননের মাধ্যমে এ সংখ্যা খুব সহজেই বাড়ানো যেতে পারে।
বিনোদ: নেপালে সমুদ্র সৈকত নেই। তাই সমুদ্রে বেড়াতে যেতে হলে নেপালের পর্যটকরা থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্যান্য দেশে ভ্রমণ করে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রতিবছর নেপালে বিশাল সংখ্যক বাংলাদেশি পর্যটক গেলেও, নেপালের খুব কম পর্যটকই বাংলাদেশকে পর্যটন ডেস্টিনেশন হিসেবে চেনে। কক্সবাজার এবং কুয়াকাটার মতো সাগরকেন্দ্রিক গন্তব্যগুলো নেপালে বিপনন করা হলে নেপালের পর্যটকরা বাংলাদেশ ভ্রমণে আগ্রহী হবে।
বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে একটা মাত্র ফ্লাইট নেপালে যাওয়া-আসা করে। আমার মনে হয়, ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতগুলোকে প্রমোট করা হলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। শুনেছি সুন্দরবনে জাহাজে করে অনেক সুন্দর ট্যুর করা হয়, এটি আন্তর্জাতিক পর্যটন বাজারে বিপনন করতে হবে।
ভারত এবং নেপাল ভৌগলিকভাবেই বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। বাংলাদেশ হতে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক এই দুই রাষ্ট্রে ভ্রমণ করেন। কিন্তু তুলনামূলক বিচারে বাংলাদেশ ভ্রমণে আসা ভারত ও নেপালের পর্যটকের সংখ্যা আশাব্যঞ্জক নয়। এই দু্ই রাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যে সকল পর্যটকরা শুধু ভ্রমণের উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশে আসছেন, তারা মূলত বেসরকারী ট্যুর অপারেটরদের কারণেই আসছেন। সরকারি উদ্যোগে যথাযথ পরিকল্পণা অনুযায়ী পর্যটনের বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের পর্যটনগন্তব্যগুলো বিপনন করা গেলে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের গতিময়তা নিশ্চিত হত। এমনটা মনে করছেন দেশের ট্যুর অপারেটররা, এবং একই সাথে প্রতিবেশী দেশের ট্যুর অপারেটররাও।