ঘুরে আসুন আলুটিলা গুহা থেকে
Tweet
বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় মূল শহর হতে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে সমুদ্র সমতল হতে ৩০০০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট আলুটিলা বা আরবারী পাহাড়ে আলুটিলা গুহা অবস্থিত। স্থানীয়রা একে বলে মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা। এটি খাগড়াছড়ির একটি নামকরা পর্যটন কেন্দ্র। এই গুহাটি খুবই অন্ধকার ও শীতল। কোন প্রকার সূর্যের আলো প্রবেশ করে না বলে মশাল নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়। সুড়ঙ্গের তলদেশ পিচ্ছিল এবং পাথুরে ও এর তলদেশে একটি ঝর্ণা প্রবাহমান। গুহাটি দেখতে অনেকটা ভূ-গর্ভস্থ টানেলের মত যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ ফুট। গুহাটির এপাশ দিয়ে ঢুকে ওপাশ দিয়ে বের হতে আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে। গুহাটির উচ্চতা মাঝে মাঝে খুব কম হওয়ায় নতজানু হয়ে হেটে যেতে হয়। গুহাটির চারপাশে রয়েছে ঘন সবুজের অরণ্য। পাহাড়ের ভেতরে এই গুহা যেকোনো ভ্রমণপ্রেমীকে আনন্দ দিতে পারে।
কীভাবে যাবেন
আলুটিলা গুহাটি পাহাড়ি মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। গুহাটিতে প্রবেশের আগেই এর আশপাশের পাহাড়ি মনোরম পরিবেশ আপনার মনকে আনন্দে ভরিয়ে তুলতে পারে।
গুহাটি দেখতে হলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে খাগড়াছড়ি সদরে। ঢাকা থেকে শ্যামলী, হানিফ, সৌদিয়া, রিফাতসহ অসংখ্য বাস প্রতিদিন খাগড়াছড়ি যাতায়াত করে।
ভাড়া ৫২০ টাকা (নন-এসি)। আপনি যদি রাত ১০টা বা তার পর বাসে চড়ে বসেন, তাহলে পরদিন ভোর ৬টার মধ্যে আপনি খাগড়াছড়ি পৌঁছে যাবেন। সকালের নাশতা সেরে রওনা হয়ে যান দর্শনীয় স্থানটি দেখতে। আপনি শান্তি পরিবহনের বাসস্ট্যান্ড থেকে অথবা শাপলা মোড় থেকে আলুটিলা যাওয়ার অনেক গাড়ি পাবেন। তবে মনে রাখবেন, সব ধরনের গাড়ি পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে ওপরে উঠতে পারে না। তবে এখানে একধরনের অটোজাতীয় গাড়ি পাওয়া যায়, যেগুলোতে চড়ে আপনি সহজেই চলে যেতে পারেন আলুটিলা গুহায়। সে ক্ষেত্রে পুরো গাড়িটি আপডাউনসহ ভাড়া পড়বে আটশ থেকে হাজার টাকা। খাগড়াছড়ি সদর থেকে আলুটিলা পৌঁছাতে সময় লাগতে পারে ৪০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা। গুহাটি এবং তার চারপাশ দেখতে প্রবেশ গেটে আপনাকে টিকেট কাটতে হবে। প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা।
লক্ষণীয় বিষয়
টিকেট কেটে মূল গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই যা আপনার মনকে আনন্দে ভরিয়ে তুলবে তা হলো চারপাশের পরিবেশ। উঁচু পাহাড়ের চারপাশে সবুজের স্বর্গ। পাহাড়ের নিচে দূরে খাগড়াছড়ি সদরটির প্রায় পুরোটাই এখান থেকে দেখা যায়। আপনি যে শহর থেকে আপনার যাত্রা শুরু করেছিলেন, প্রায় ৪০ মিনিট পথ পাড়ি দেওয়ার পর সেই শহরটিকে আবার উঁচু পাহাড়ে দাঁড়িয়ে দেখার অনুভূতি সত্যি অন্য রকম।
গুহাটিতে প্রবেশ করতে হলে প্রথমে আপনাকে বেশ কয়েকটি সিঁড়ি বেয়ে নিচের দিকে নামতে হবে। নামার সময় ভাবতে পারেন যে ওঠার সময় আপনাকে হয়তো এমন অনেক সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হবে। তবে ভয়ের কোনো কারণ নেই, নামার সময় অনেক সিঁড়ি নামতে হলেও ওঠার সময় এত বেশি সিঁড়ি আপনাকে উঠতে হবে না। ওঠার সময় সিঁড়ির সংখ্যা কম। গুহামুখে আপনি মশাল কিনতে পাবেন। প্রয়োজনে দুটি মশাল কিনে নিন। প্রতিটি মশালের দাম ১০ টাকা।
সাবধানতা
১. গুহাটি অন্ধকার এবং চলার পথ উঁচু-নিচু। সুতরাং সাবধানে হাঁটবেন। তবে ভয় নেই, গুহাটি পিচ্ছিল নয়। এখানে কোনো জন্তু-জানোয়ার নেই।
২. একা একা প্রবেশ না করে দলের সঙ্গে প্রবেশ করুন।
৩. একের অধিক মশাল রাখুন। সঙ্গে যাতে একটি নিভে গেলে আরেকটি জ্বালাতে পারেন।
৪. গুহাটি কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু। সুতরাং সাবধানে দেখে চলুন।
৫. বন্ধুদের নিয়ে গুহার ভেতর হৈ-হুল্লোড় না করাটাই ভালো।
৬. গুহাটির ভেতর প্রবেশের সময় সঙ্গে ভারী কিছু রাখবেন না। এতে আপনার চলতে সুবিধা হবে।
৭. মোবাইল ও টাকা সাবধানে রাখুন। নিচে পড়ে যাতে ভিজে না যায়।
৮. গুহার ভেতর কিছু ফেলা থেকে বিরত থাকুন। এতে এর পরিবেশ নষ্ট হতে পারে বা অন্যদের চলাচলে অসুবিধা হতে পারে।