ঘুরে আসুন রোজ গার্ডেন
Tweet
ঢাকার মধ্যে যে কয়টি প্রাচীন স্থাপনা আছে তার মধ্যে রোজ গার্ডেনের নাম না বললেই নয়। ঢাকার মধ্যে এত সুন্দর নান্দনিক একটি প্রাসাদ রয়েছে, তা না দেখলে বিশ্বাস করা কষ্ট হবে।
নিতান্তই সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা ব্যবসায়ী ঋষিকেশ দাস সমসাময়িক জমিদারদের উপর অনেকটা জেদের বশেই ১৯৩০ সালে তৈরি করেন এই চমৎকার শুভ্র অট্টালিকা। ভবনটির মোট আয়তন সাত হাজার বর্গফুট। উচ্চতায় পঁয়তাল্লিশ ফুট। ছয়টি সুদৃঢ় থামের উপর এই প্রাসাদটি স্থাপিত। প্রতিটি থামে লতাপাতার কারুকাজ করা। ভবন নির্মাণের কিছুদিন পর ঋষিকেশ দাশ দেউলিয়া হয়ে যান। ১৯৩৭ সালে রোজ গার্ডেন বিক্রি হয়ে যায় খান বাহাদুর আবদুর রশীদের কাছে। এর নতুন নামকরণ হয় ‘রশীদ মঞ্জিল’। এই বাড়িটিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) গঠনের প্রাথমিক আলোচনা সভা এই বাড়িতে হয়েছিল। ১৯৬৬ সালে কাজী হুমায়ুন বসির এর মালিকানা লাভ করেন।
১৯৭০ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘বেঙ্গল স্টুডিও’ কে লীজ দেয়া হয়। এ সময়ে চলচ্চিত্রের শুটিং স্পট হিসাবে এই ভবনটি ব্যবহৃত হয়। এখানে চিত্রায়িত কাহিনী চিত্র ’হারান দিন’ এ রোজ গার্ডেনের সেই সময়কার চিত্র সংরক্ষিত আছে। প্রায় ২২ বিঘা জমির উপর নির্মিত দোতলা এই প্রাসাদের চারদিক ঘিরে ছিলো দেশি বিদেশি গোলাপের চারা। এই গোলাপ বাগানের জন্যই বাগানবাড়িটি সেসময় বিখ্যাত হয়ে ওঠে ‘গোলাপ বাগ’ নামে, যা আমাদের কাছে এখন ‘রোজ গার্ডেন’ নামে পরিচিত। বর্তমানে চারপাশ ঘেরা সেই গোলাপ বাগান না থাকলেও প্রাসাদের সামনে কৃত্রিম ফোয়ারা ও ভাস্কর্যগুলো রয়েছে।
যা দেখবেন
রোজ গার্ডেনের পাশেই আসলে দেখতে পাবেন নয়নাভিরাম দুধ-সাদা ভবনটি। জমিদার ঋষিকেশ দাস নির্মিত এই জলসা-ঘরের সামনে শ্বেত মার্বেলের অনেক মানব মূর্তি আছে। ভেঙ্গেও গেছে কোথাও কোথাও। তারপরও সুন্দর মূর্তিগুলো। ভবনের সামনে বেশ বড়সর আঙিনা। আঙিনার মাঝখানে একটা ফাউন্টেন। এখানেই এক সময় গোলাপ বাগান ছিল। এখন শুধুই সবুজ ঘাস। সবুজ আঙিনার পর একটা পুকুর, সিঁড়িও আছে। পানি খুব একটা স্বচ্ছ না। সিঁড়ির সামনেই লোহার তোরণ। সামনের গোলাপ বাগানটা এখন না থাকলেও প্রাসাদের ঐশ্বর্য এখনো অটুট আছে। বাড়িটির বাম পাশে থাকা কৃষ্ণচূড়া গাছটি বাড়ির সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে রেখেছে। গাছটি কৃষ্ণচূড়ায় ছেঁয়ে লাল হয়ে আছে তখন। নিচে পড়ে থাকা ঝরা কৃষ্ণচূড়াগুলো আরো মনোমুগ্ধকর করে রেখেছে। প্রাসাদটি দোতলা বিশিষ্ট। প্রাসাদটির নিচতলায় একটি হলরুম, একটি কোরিনথিয়ান কলাম এবং আটটি কক্ষ রয়েছে। প্রাসাদের উপর তলার মাঝে নৃত্য করার জন্য হল ছাড়াও রয়েছে পাঁচটি কক্ষ।
কীভাবে যাবেন
ছুটির দিন ছাড়া সবদিনই রোজ গার্ডেনে যাওয়া যায়। তবে মূল ভবনে ঢোকার ক্ষেত্রে পূর্ব অনুমতির প্রয়োজন হয়। ঢাকার গুলিস্তান বা যাত্রাবাড়ী দিয়ে রিকশায় চড়ে টিকাটুলির কেএম দাস লেনে অবস্থিত রোজ গার্ডেনে যেতে পারেন। তবে রিকশাচালকরা হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি বললেই বেশি চিনবে। বেড়ানোর ফাঁকে খেতে পারেন পুরান ঢাকার আল রাজ্জাক, হাজির বিরিয়ানি, কাস্মীর কাচ্চি, বিউটি বোর্ডিং কিংবা সুলতানের চা।আর ভাড়া মাত্র মতিঝিল থেকে ৩০ টাকা ।