বিদেশে পাসপোর্ট হারালে কী করবেন?
Tweet
নানান কারণে বা দুর্ঘটনায় আপনার মহামূল্যবান পাসপোর্টটি হারিয়ে যেতে পারে কারণ বিপদ বলে কয়ে আসে না। সর্বপ্রথম যে কাজটি করবেন আপনি যেদিন আপনার পাসপোর্টটি হাতে পাবেন সেদিনই আপনার পাসপোর্টের অনেকগুলো ফটোকপি এবং স্ক্যান করে আপনার গুগল ড্রাইভ কিংবা মোবাইলে সেভ করে রাখুন।
তারপরে আপনি যেদেশের ভিসা পাবেন ভিসা পাওয়ার সাথে সাথে ভিসারও কয়েককপি ফটোকপি করে রাখুন এবং অবশ্যই গুগল ড্রাইভে বা ফেসবুকে আপলোড করে রাখুন প্রাইভেসি দিয়ে। এরপরে আপনি যে দেশে যাবেন সেখানে এরাইভাল হওয়ার সাথে সাথে আবারও ওই এরাইভাল হওয়ার সীলগুলো আপনাকে অবশ্যই ফটোকপি করে রাখতে হবে, পারলে নিজের মোবাইলে ছবি তুলে নিন।
আপনার যদি কোনো কারণে পাসপোর্ট হারিয়ে যায় তাহলে আপনার সর্বপ্রথম কাজটি হলো বাংলাদেশের দূতাবাস খুঁজে বের করা। বিদেশি বাংলাদেশের অ্যাম্বাসির তালিকা পাবেন।
বাংলাদেশের দূতাবাস খুঁজে বের করে সরাসরি চলে যান ওখানে। তারাই আপনাকে যাবতীয় সাহায্য করবে। তারা আপনাকে প্রথমে বলবে যেখানে আপনার পাসপোর্টটি হারিয়ে গিয়েছে ওই স্থানের আওতাধীন থানায় রিপোর্ট করে একটি জিডি করতে। আপনি সরাসরি থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়রী বা জিডি করে ফেলুন। তারপরে আপনি বাংলাদেশের দূতাবাসে গিয়ে ওখানে আপনার যাবতীয় কাগজপত্র যেমন-
১. হারানো পাসপোর্টের ফটোকপি
২. হারানো পাসপোর্টের ভিসা এরাইভাল হওয়ার কপি
৩. কয়েক কপি ছবি
৪. জিডি কপি
৫. C Form/সি ফর্ম (C Form এর মানে আপনি যদি ইন্ডিয়াতে থাকেন তাহলে আপনি ইন্ডিয়ার কোথায় আছে বা কোন হোটেলে আছেন তার একটি প্রমাণপত্র যা অতি দরকারি ও আবশ্যিক)
৬. সাথে একটি দরখাস্ত লিখবেন পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে এই মর্মে ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করার জন্য আবেদন মিনিস্টার কাউন্সিলর বরাবরে।
অতঃপর তারা আপনার কাছে এক বা দুইদিন সময় নিবে যদি আপনার কপাল ভালো থাকে তাহলে আপনি সেদিনই আপনাকে আপনার ট্রাভেল পারমিট দিয়ে দিবে। ট্রাভেল পারমিট-টি আপনার পাসপোর্টের মতো কাজ করবে আর ট্রাভেল পারমিটে একটা সিরিয়াল নম্বর দেয়া থাকে।
আপনি যদি ইন্ডিয়াতে পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন তাহলে আপনি বাংলাদেশ দূতাবাস হতে প্রাপ্ত ট্রাভেল পারমিট ও ট্রাভেল ইন্সুরেন্স নিয়ে ইন্ডিয়ার অবস্থিত Foreign Regional Registration Office (FRRO) এ গিয়ে এক্সিট পারমিট নিতে হবে। এক্সিট পারমিটের জন্য আপনাকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদন করতে হলে আপনাকে আপনার-
১. হারানো পাসপোর্টের ফটোকপি
২. হারানো পাসপোর্টের ভিসা ও এরাইভাল হওয়ার কপি
৩. কয়েক কপি ছবি
৪. জিডি কপি
৫. C Form/সি ফর্ম লাগবে।
যদি আপনি C Form ছাড়া আবেদন করতে যান তাহলে আপনাকে ফেরত আসতে হবে। তাই মনে রাখবেন আপনাকে অবশ্যই C Form নিতে হবে আপনি যে হোটেলে থাকেন সে হোটেল থেকে। সব কাগজ দিয়ে অনলাইনে আবেদন করে ফেলুন। করে FRRO অফিসের এর ভিতরে গিয়ে আপনার সমস্যা গুলো খুলে বলুন। আশা করি একদিন বা দুইদিনের মধ্যেই আপনি এক্সিট পারমিট নিয়ে দেশে চলে আসতে পারবেন।
বিদেশে চাকরির সময় পাসপোর্ট হারালে যা করবেন
মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে যারা চাকরি নিয়ে যান তাঁদের অনেককে মালিকের কাছে পাসপোর্ট জমা দিতে হয়। মালিক পক্ষ থেকে তাদের সরকারি বিভিন্ন অনুমোদ করিয়ে দেওয়া হয়। তবে নিজের প্রয়োজনে পাসপোর্টের ফটোকপি সঙ্গে রাখতে হবে। কিন্তু কেউ যদি ব্যবসা, ফ্রি ভিসায় চাকরি করতে যান তাঁদের উচিত পাসপোর্ট সব সময় সঙ্গে রাখা।
তারপরও দুর্ঘটনাবশত পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে আপনাকে বাংলাদেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করতে হবে। পাসপোর্টের ফটোকপি ও রোডপাস বা রাস্তায় চলাচলের প্রত্যয়নপত্র (যদি সঙ্গে থাকে) নিয়ে যোগাযোগ করলে দূতাবাসের পক্ষ থেকে আপনাকে নতুন পাসপোর্ট তৈরিতে সহায়তা করা হবে।
ভ্রমণের সময় পাসপোর্ট খোয়ালে যা করবেন
আপনার বিদেশ ভ্রমণের পুরো আনন্দটাই মাটি হতে পারে যদি আপনি পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন। কোনো কারণে যদি তা হারিয়েই ফেলেন তাহলে সবার আগে আপনাকে যোগাযোগ করতে হবে বাংলাদেশ হাই কমিশনে। কোনো ট্যুর অপারেটর বা ট্র্যাভেল এজেন্সি যদি আপনার ভ্রমণে সহায়তা করে থাকে তবে তারাই আপনাকে বাংলাদেশ হাই কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সহায়তা করবে।
এরপর আপনাকে সহায়তা করবে বাংলাদেশ হাই কমিশন। বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিস ও ইমিগ্রেশন আপনার সব তথ্য পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশ হাই কমিশনকে একটি পত্র বা দরখাস্ত পাঠাবে। এ পত্র বা দরখাস্তই আপনাকে সুন্দরভাবে দেশে ফিরে আসতে সহায়তা করবে।
পাসপোর্ট নিয়ে জালিয়াতি হলে যা করবেন
বিদেশে নিজের বৈধতার সনদ হচ্ছে পাসপোর্ট। এই পাসপোর্টের ভিত্তিতেই নির্ধারণ করা হবে আপনি বৈধ, না অবৈধ। তাই পাসপোর্ট যত্ন করে রেখে দেবেন। কোনোভাবেই হাতছাড়া করবেন না। বিদেশে বৈধ পাসপোর্ট অনেকে অবৈধভাবে বেচাকেনা করে। টাকার বিনিময়ে একজনের বৈধ পাসপোর্ট অবৈধ ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেয়।
তাই পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে দ্রুত পদক্ষেপ নিন। অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান কর্মীদের পাসপোর্ট রেখে এর বিনিময়ে একটি ‘পাস’ বা কার্ড দেয়। কর্মীরা যাতে পালিয়ে গিয়ে অন্য কোথাও কাজ করতে না পারে, তার জন্য এমনটি করা হয়। বাস্তবতা যাই হোক না কেন বিদেশে গেলে পাসপোর্টের প্রতি আপনাকে বাড়তি সতর্ক হতেই হবে।
বিদেশ থেকে পাসপোর্ট নবায়নে যা করবেন
বিদেশে অবস্থান করার সময় নিজের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবে সে দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস। দূতাবাসের কনস্যুলার শাখা থেকে বাংলাদেশিরা তাদের পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারবেন। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাসের আগেই নবায়ন করা ভালো