ইসরায়েলে আবিষ্কৃত হলো ৫ হাজার বছরের প্রাচীন ‘নিউ ইয়র্ক’
Tweet
সম্প্রতি ইসরায়েলি প্রত্নতাত্ত্বিকগণ কমপক্ষে ৫,০০০ বছরের প্রাচীন একটি শহর আবিষ্কার করেছেন। যাকে তারা বর্ণনা করেছেন ‘ব্রোঞ্জ যুগের নিউ ইয়র্ক’ হিসেবে। ‘অন আসুর’ নামের এই শহরটিতে প্রায় ৬,০০০ জন মানুষ বসবাস করতো বলে তারা ধারনা করছেন। খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দ পুরনো এই শহরটিতে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা আবাসিক এবং পাবলিক এলাকার পাশাপাশি দূর্গ, পরিকল্পিত বড় রাস্তা এবং গলির অবশেষও খুঁজে পেয়েছেন। শহরটির মাটির নীচেও এমন স্থাপনা পাওয়া গেছে, যা সম্ভবত ৭,০০০ বছরেরও বেশি পুরনো। বিশেষজ্ঞদের মতে, সবদিক থেকেই সুসংগঠিত সমাজ ব্যবস্থায় জীবনযাপন করতো মানুষ তখন। এজন্য একে প্রাচীন সময়ের ‘নিউ ইয়র্ক’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

তেল আবিব ও হাইফা শহরের মাঝামাঝি থেকে হারিশ শহরকে সংযুক্ত করার জন্য একটি নতুন সড়কের নির্মাণকাজ চলাকালে ১৬১ একর জায়গা জুড়ে থাকা এই শহরটি উন্মোচিত হয়। ওই অঞ্চলে এটাই সবচেয়ে বৃহৎ ও প্রাচীন আবিষ্কার। প্রায় আড়াই তিন বছর আগে ইসরায়েলি পুরাকীর্তি কর্তৃপক্ষের শুরু করা এই খনন কর্মসূচিতে পাঁচ হাজার তরুণ-তরুণী ও স্বেচ্ছাসেবী সহযোগিতা করেছে। খনন পরিচালকরা এক বিবৃতিতে বলেন, “এই শহরের ধ্বংসাবশেষটি ইসরায়েলের সময়ের ও নগরায়ণের ইতিহাসে নাটকীয় পরিবর্তন এনে দিয়েছে।”

আবিষ্কৃত জায়গায় কাজ করা প্রত্নতত্ত্ববিদরা বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলটি ব্রোঞ্জ যুগের শুরুর দিককার নিউ ইয়র্ক। এটি ছিল সর্বজনীন ও পরিকল্পিত শহর, যেখানে হাজার হাজার বাসিন্দা বাস করতো।’ ইসরায়েলি পুরাকীর্তি কর্তৃপক্ষের পুরাতত্বজ্ঞ দিনা সালেম বলেন, “ইতিহাসের এতো প্রাচীন একটি শহর খুঁজে পাওয়ার কথা আমাদের কল্পনাতেও চিন্তা করতে পারিনি কখনো।”

শহরের সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এলাকায় একটি মন্দির আবিষ্কার করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। এর চত্বরে বিশাল একটি পাথরের বেসিন আছে। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে এটি ব্যবহৃত হতো বলে ধারণা করা হয়। মন্দিরের অভ্যন্তরে মানুষের বিরল মূর্তি ও বলি দেওয়া পশুর পোড়া হাড়ের কাঠামো পাওয়া গেছে। মন্দিরের বিষয়ে দিনা সালেম বলেন, “মন্দিরের এই বিল্ডিংটি একটি অনন্য স্থাপনা। এরকম কোন স্থাপনা এর আগে অন্য কোথাও কখনো দেখা যায়নি। আমরা এর সম্পর্কে কিছুই জানি না।” এছাড়াও সেখানে মানব ও প্রাণীর বিরল মূর্তি, মৃৎশিল্পের টুকরো এবং বিভিন্ন সরঞ্জাম সহ প্রায় চল্লিশ লক্ষ টুকরো পাওয়া গিয়েছে, যার কয়েকটি মিশর থেকেও এসেছে।

প্রত্নতত্ত্ববিদ ইৎজাক পাজ বলেন, ‘আবিষ্কৃত জায়গাটি ৫ হাজার
বছর আগে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় এলাকার চেয়ে দুই-তিন গুণ বড়। বেশিরভাগ জায়গা খুব অল্প
আয়তনে খনন করা হয়, তবে আমাদের জায়গাটির খনন কাজ হয়েছে বড়
পরিসরে।’

পাজের মন্তব্য, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, উপকূলীয় সমভূমিতে বন্যার সৃষ্টি হওয়ায় শহরটি হারিয়ে যায়। জলাবদ্ধতার কারণে এখানে বসবাস করা দুরূহ হয়ে পড়েছিল। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, এর সঠিক উত্তর অজানা। কারণ হঠাৎ ধস বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কোনও চিহ্ন নেই এখানে।

ইসরায়েলি পুরাকীর্তি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এই ধ্বংসাবশেষকে সংরক্ষন করার কাজ করা হবে।