এই গ্রামের সব পুরুষই পারদর্শী রান্নায়!
Tweet
এমন একটি গ্রামের কথা কি চিন্তা করতে পারেন, যেখানকার সব পুরুষই পারদর্শী রান্নায়? তেমনই একটি গ্রাম হলো ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রমানাথাপুরাম জেলার কালায়ুর। এই গ্রামে ঢুকলেই বাতাসে ভেসে আসে নানান রকমের মসলার সুগন্ধ। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আছে রান্নায় পারদর্শী কেউ না কেউ। বর্তমান ভারতের সেরা পুরুষ রন্ধনশিল্পীদের প্রায় ২০০ জনেরই বসবাস এই গ্রামটিতে!
কালায়ুর গ্রামের
পুরুষ রন্ধনশিল্পীদের ব্যাপক চাহিদা। তাই বছরের ছয় মাস সারা দক্ষিণ ভারত চষে
বেড়াতে হয় তাদের। লোভনীয় নতুন পদ রান্না করতেই ডাক পান তারা। অন্যান্য সময়ে বিয়ে
ও জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বিশেষ খাবার তৈরির কাজ দেওয়া হয় তাদের। রান্নার
প্রয়োজনীয় সমস্ত উপাদান হাতের কাছে থাকলে মোটামুটি তিন ঘণ্টার মধ্যেই
একহাজার লোকের খাবার বানিয়ে ফেলতে পারেন তারা!
কালায়ুর গ্রামে রন্ধনশিল্পী হিসেবে সুনাম কুড়ানো চাট্টিখানি কথা নয়, কেননা সেখানকার সব পুরুষই রান্নায় পারদর্শী। ফলে খাবারের মানও অনেক ভালো। যদিও রন্ধনশিল্পী হতে ইচ্ছুক ছেলেদের নির্দিষ্ট কোনও বয়সসীমা নেই। শক্ত ভিত্তি তৈরির জন্য অল্প বয়স থেকেই তারা প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। যেমন শাকসবজি কাটা, মাঠ থেকে টাটকা উপাদানসমূহ সংগ্রহ করা ইত্যাদি। এভাবে আরও অনেক ধাপ পেরোনোর পর একজন মানুষ রান্নায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। কমপক্ষে ১০ বছর ধরে এই চর্চা অব্যাহত থাক। এই সময়ে অন্যান্য রন্ধনশিল্পীকে সহযোগিতা করেন তারা।
প্রায় ৫০০ শতাব্দী
আগে এই অঞ্চলের বাসিন্দা ধনী বণিক সম্প্রদায় রান্নার কাজ দেয় নিম্ন বর্ণের ভানিয়ার গোষ্ঠীকে।
তারা রান্নাবান্নায় দক্ষ ছিল। তাদের নিজস্ব বেশকিছু গোপন রেসিপি ছিল।
ব্রাহ্মণ রন্ধনশিল্পীদের চেয়ে ভানিয়ারদের বানানো খাবারের সুনাম ছিল
তুলনামূলক বেশি।
সেই সময় কৃষিকাজ তেমন লাভজনক ছিল না। পুরুষদের অন্য কোনও কাজে দক্ষতা না থাকায় রান্নার প্রতি আগ্রহ জন্মে তাদের। এভাবে করেই খাবার তৈরিতে পুরুষদের পারদর্শী হওয়ার ঐতিহ্য শুরু হয়।
বলে রাখা ভালো যে, কালায়ুর গ্রামের পুরুষ রন্ধনশিল্পীরা কিন্তু নিজেদের পরিবারের জন্য রান্না করেন না! আর দশটা পরিবারের মতোই ঘরের রান্নাবান্নার দায়িত্ব সামলান সাধারণত নারীরাই।
তামিলনাড়ুর চেন্নাই ও মাদুরাই কিংবা অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতি বেড়াতে গেলে কালায়ুর গ্রামের পুরুষদের রান্না করা খাবারের স্বাদ নিতে পারেন ভ্রমণপিপাসুরা। এছাড়া গ্রামটিতে গেলেও সেই সুযোগ হতে পারে।