এই শীতে ঘুরে দেখুন সেন্টমার্টিন
Tweet
নারিকেল জিঞ্জিরা
নামে পরিচিত সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। মাত্র ৮বর্গ কিলোমিটার
আয়তনের অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এই দ্বীপটি জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের
অন্যতম পর্যটন স্থান হিসেবে।
অসীম নীল আকাশের সাথে
সমুদ্রের নীল জলের মিতালী, সারি সারি নারিকেল গাছ এই দ্বীপকে করেছে অনন্য। ভ্রমণ
পিয়াসী মানুষকে দুর্নিবার আকর্ষনে কাছে টেনে নেয় কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে নয়
কিলোমিটার দক্ষিণে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত এই দ্বীপটি।
প্রায় ৫ হাজার বছর আগে টেকনাফের মূল ভূমির অংশ ছিল আজকের এই সেন্টমার্টিন। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি সমুদ্রের নিচে চলে যায়। পরবর্তীতে প্রায় ৪৫০ বছর আগে বর্তমান সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ পাড়া জেগে উঠে। এর ১০০ বছর উত্তর পাড়া এবং পরবর্তী ১০০ বছরের মধ্যে বাকি অংশ জেগে উঠে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক মোস্তফা কামাল পাশার মতে, ২৫০ বছর আগে আরব বণিকদের নজরে আসে এই দ্বীপটি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে বাণিজ্যের সময় আরব বণিকেরা এখানে দ্বীপটিতে বিশ্রাম নিতো। তখন তারা এ দ্বীপের নামকরণ করেছিল ‘জাজিরা’। পরবর্তীতে যেটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামে পরিচিত হয়।
ব্রিটিশ শাসনামলের
১৯০০ সালে ভূমি জরিপের সময় এ দ্বীপটিকে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া
হয়। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, খ্রিস্টান সাধু
মার্টিনের নাম অনুসারে দ্বীপটির নামকরণ করা হয়। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা
বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক শেখ বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, দ্বীপটিকে
যখন ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখন চট্টগ্রামের
জেলা প্রশাসক মার্টিনের নাম অনুসারে দ্বীপটির নামকরণ করা হয়।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে আছে ৬৮ প্রজাতির প্রবাল। ১৫১
প্রজাতির শৈবাল, ১৯১ প্রজাতির মোলাস্ক বা কড়ি-জাতীয়
প্রাণী, ৪০ প্রজাতির কাঁকড়া, ২৩৪
প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪ প্রজাতির উভচর, ২৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ১২০ প্রজাতির পাখি,
২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। এছাড়াও ১৭৫ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২ প্রজাতির বাদুড় ও ৫
প্রজাতির ডলফিন দেখা যায়।
যেভাবে যাবেন-
সেন্টমার্টিন যেতে হলে প্রথমে কক্সবাজার জেলার টেকনাফে যেতেই হবে। ঢাকা থেকে বাসে করে সরাসরি টেকনাফে যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে শ্যামলী, সেন্টমার্টিন পরিবহন, ঈগল, এস আলম, মর্ডান লাইন, গ্রীন লাইন ইত্যাদি বাস ১০-১২ ঘন্টায় সরাসরি টেকনাফ যায়। ভাড়া সাধারণত ৯০০-২০০০টাকা।
অথবা ঢাকা থেকে প্রথমে কক্সবাজার এসে তারপর সেখানে থেকে টেকনাফও যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী বাসগুলোর মধ্যে সৌদিয়া, এস আলম মার্সিডিজ বেঞ্জ, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এস আলাম পরিবহন, মর্ডান লাইন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ভাড়া ১০০০-২৫০০ টাকা পর্যন্ত। কক্সবাজার থেকে লোকাল বাসে কিংবা মাইক্রো/জীপ ভাড়া করে টেকনাফ যাওয়া যায় এক-দুই ঘন্টার মাঝেই।
ঢাকা থেকে ট্রেনে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে চাইলে কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, তূর্ণা-নিশীখা, মহানগর প্রভাতী/গোধূলী, চট্টগ্রাম মেইলে যাত্রা করা যায়। এরপরে চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এলাকা অথবা দামপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে এস আলম, হানিফ, ইউনিক ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণ ও মানের বাসে করে ২৮০-৫৫০ টাকা ভাড়ায় কক্সবাজারে যাওয়া যায়।
এছাড়াও ঢাকা থেকে বিমানে করে সরাসরি কক্সবাজারে যাওয়া যায়। তবে সেখানে থেকে টেকনাফে যেতে হবে আগে।
টেকনাফ গিয়ে সেখান থেকে সচরাচর চলাচলকারী জাহাজ সি-ট্রাক বা ট্রলারে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়। সমুদ্র পথে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা।
এছাড়াও বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত নয়নাভিরাম ছেড়া দ্বীপ। সেন্টমার্টিন থেকে ট্রলারে ৪০ মিনিটে এবং ভাটার সময় পায়ে হেঁটেও ছেড়া দ্বীপে যাওয়া যায়। হেঁটে গেলে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা।
তবে যাওয়ার আগে চাইলে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির আয়োজন করা ট্যুর প্ল্যানেও অংশ নিতে পারেন। অভিজ্ঞ গাইডদের সাহায্যেই ঘুরে নিতে পারেন পুরো সেন্টমার্টিন। ফলে কোথায় কিভাবে যাবেন, তা নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না বিন্দুমাত্রও। আপনি উপভোগ করবেন কেবল অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে।