ঘুরে আসুন আভিজাত্যের সবুজ প্রাসাদে
Tweet
চারিদিকে সবুজের সমারোহে মন জুড়াবে যে কোনো মানুষের। অপূর্ব স্থাপত্য শৈলীর দিকে তাকালে চোখ আটকে যাবে সবার। চোখের সামনে দৃশ্যমান হবে প্রকৃতির সবুজ ক্যানভাসে ইট কাঠের শৈল্পিক আচরণ। অবকাশ যাপনে যারা বিলাসবহুল হোটেল বা রিসোর্ট প্রাধান্য দিয়ে থাকেন তাদের জন্য হবিগঞ্জে রয়েছে দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট। হ্যাঁ, রিসোর্টটির নামের মধ্যেই এর বিশেষত্ব ফুটে ওঠে। রাজকীয় আভিজাত্যের পাঁচ তারা মানের এই রিসোর্টটি দেশে-বিদেশে প্রচুর খ্যাতি কুড়িয়েছে। এখানে প্রবেশ করলে আপনার মনে হবে আপনি ঢুকে পড়েছেন দেশের বাইরের কোনো বিলাসবহুল রাজ্যে।
হবিগঞ্জের বাহুবল
উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই পুটিজুরী পাহাড়ে পাঁচ তারকা মানের দ্য প্যালেস
রিসোর্টটি অবস্থিত। ১৫০ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা এই বিলাসবহুল রিসোর্টে রয়েছে
অবকাশ যাপনের সব ধরণের উন্নত সুযোগ-সুবিধা। ৩০ হাজার গাছ, ঝর্ণা, চা বাগান, রাবার বাগান ইত্যাদি দিয়ে সাজিয়ে দ্য
প্যালেস রিসোর্টের ভিলাগুলো গড়ে তোলা হয়েছে। আর পাহাড়ের উপর রয়েছে পাঁচ তারকা
মানের বিশাল হোটেল।এখানকার চারপাশের সবুজে মন জুড়াবেই। চোখ আটকে যাবে এর অপূর্ব আধুনিক
স্থাপত্যশৈলীতে। প্রকৃতির সবুজ ক্যানভাসে যেন পাশ্চাত্যের ছোঁয়া। তবে সবকিছু
এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যাতে প্রকৃতির গাঁয়ে এতটুকুও আঁচড় না লাগে। সবুজের স্বর্গে
বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধার এত বেশী সমাবেশ বাংলাদেশের আর কোনো রিসোর্টে খুঁজে পাওয়া
যাবেনা। এ যেন আভিজাত্যের রাজ্য।
রিসোর্টে প্রবেশ করে
যেদিকেই চোখ যাবে শুধু সবুজ আর সবুজ। ১৫০ একর জমিতে শুধু পাহাড়ি উঁচু টিলা। টিলায়
টিলায় রিসোর্ট ভবন। আবাসনের জন্য এখানে রয়েছে পাহাড়ের চূড়ায় পাঁচ তারকাসুবিধা সমেত
পাখিডাকা, ছায়াঢাকা
২৩টি ভিলা। তন্মধ্যে ১ বেডরুমের ৮টি বাংলোর প্রতি রাতের ভাড়া ১৫ হাজার টাকা। ২ বেডরুমের
৮টি বাংলোর ভাড়া প্রতি রাতে ২৫ হাজার টাকা। ৩ বেড রুমের ৪টি বাংলোর ভাড়া প্রতি
রাতে ৩৫ হাজার টাকা। ২টি প্রেসিডেন্সিয়াল ভিলার প্রতি রাতের ভাড়া ১ লাখ ২৫ হাজার
টাকা। এগুলোতে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। আর নামকরণে রয়েছে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের
পটভূমি। আমেরিকায় মুক্তিযুদ্ধের তহবিল গঠনে কাজ করা পণ্ডিত রবি শংকর ও জর্জ
হ্যারিসনের নামে নামকরণ করা হয়েছে ভিলা দুটির।
প্রধান টাওয়ারের
বহুতল ভবনে থাকার জন্য আছে ১০৭টি রুম। আর রুমগুলো সাজানো হয়েছে প্রাসাদ বলতে যা
বুঝায় তার সার্থকতা নিশ্চিত করতে যা প্রয়োজন তার সব দিয়ে। রুমগুলোর ভাড়াও
আলাদাভাবে নির্ধারণ করা। এক্সিকিউটিভ কিং ৫৫টি রুমের ভাড়া ১০ হাজার টাকা করে।
সিগনেচার কিং ২২টি রুমের ভাড়া ১১ হাজার টাকা করে। আর সিগনেচার টুইন ৩০ রুমের ভাড়া
১২ হাজার টাকা করে।
প্যালেসে রয়েছে চারটি
বড় সভাকক্ষ, ৪শ’জনের ব্যাংকুয়েট হল, ছোটদের
খেলার জায়গা তিনটা, বিলিয়ার্ড, ফুটবল,
বাস্কেটবল, ২টি টেনিস কোর্ট, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, ক্রিকেট নেট প্র্যাকটিস এর
সুবিধা, দুটি জিম, রিমোট কন্ট্রোল কার
রেসিংয়ের ব্যবস্থা। দুটো সুইমিংপুল (১টি পুরুষ আর একটি মহিলা), একদিক থেকে জলধারা এসে পাহাড়ের গা বেয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে, এটাকে বলে ইনফিনিটি পুল। এর চতুর্দিকে সবুজ ছন গাছগুলোও সিলেটের ঐতিহ্য।
দুটো সিনেপ্লেক্স এর মধ্যে ১টি থ্রিডি ও অন্যটি টুডি। স্থাপত্যশৈলীর দেখা মেলে
দুটি ঝুলন্ত সেতুতে। মসজিদটিতেও রয়েছে নির্মাণশৈলী। দুটো নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্র
থাকায় নেই কোন ভোগান্তি। এখানে হেলিকপ্টার নামার হেলিপ্যাড আছে তিনটা। এগুলোও
দেখার মত করে নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়াও লেকে মাছ ধরা
যায়। মাছ ধরার জন্য রয়েছে বড়শি আর আধারের ব্যবস্থা। এক সাথে ৫০ জন এখানে মাছ শিকার
করতে পারবেন। তবে মাছ শিকারের পর তা রান্না করতে যেতে হবে রেস্টুরেন্টে। এর জন্য
দিতে হবে আলাদা চার্জ। এ ধরনের ৫টি রেস্টুরেন্ট রয়েছে প্যালেসে। এগুলো হল অলিভ
রেস্টুরেন্ট, রেভ্যুলেশন ক্যাপে, নস্টালজিয়া, সাইগন ও সিসা লাউঞ্জ। আর বড়শিতে যাতে মাছ ধরে তার জন্য লেকে চাষ করা হয়েছে
অনেক রকম মাছ। অচিরেই সেখানে বোটিং করা যাবে। হাঁটার জন্য রয়েছে ৭ কিলোমিটার
ট্রেইল। বাই-সাইকেল চালানোর জন্যও ট্রেইল রয়েছে। আর হাটা চলার সময় পুরো এলাকা জুড়ে
রয়েছে সাউন্ড সিস্টেমে মিষ্টি মধুর সঙ্গীত উপভোগ করার। ওয়াইফাই সুবিধা রয়েছে পুরো
এলাকাজুড়ে। এখানে রয়েছে সব ধরনের মৌসুমী ফলের গাছ। অতিথিদেরকে এই ফল আপ্যায়ন করানো
হয়। আর সব ধরনের সবজি চাষ করা হয় কমপ্লেক্সের ভিতরে। ফলে এখানে নেই কোন ভেজাল
খাবার। সেখানে রয়েছে ২টি ট্যারেস। একটি হল ফাউন্টেইন ভিউ ট্যারেস আর অপরটি হল
টি-গার্ডেন ভিউ ট্যারেস।
শুধু বিনোদন আর
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই না, এখানকার খাবারেও রয়েছে ভিন্নতা। ভারত, মেক্সিকান,
ভিয়েতনামসহ আরো অনেক দেশের খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এখানে বেশি ফলো
করা হয় চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল ও বাঙালী খাবার।
এখানে আসলে যেমন দেখা যাবে নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তেমনি উপভোগ করা যাবে বিলাসবহুল জীবন। এখানকার দিনের সৌন্দর্য একরকম আর রাত বাড়ার সাথে সাথে একই জায়গা অন্যরকম এক সুন্দর রুপ নিয়ে হাজির হয়। সন্ধ্যা নামলেই শোনা যায় ঝিঝি পোকার ডাক, রাতের প্রকৃতি নিয়ে আসে অন্য রকম এক ভালোলাগা।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে গাড়ি, বাস অথবা ট্রেনে করে হবিগঞ্জ যেতে হবে আগে।
হবিগঞ্জ জেলার পুটিজুরি বাজারে এসে সিএনজি করে দি প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টে পৌঁছানো যাবে। তবে সিলেট এসে এছাড়া নির্দিষ্ট চার্জের বিনিময়ে রিসোর্টের গাড়িতে করেও আসতে পারেন।