ঘুরে আসুন ঐতিহ্যবাহী তারা মসজিদ থেকে

Share on Facebook

মসজিদের শহর ঢাকার শহরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অগুণিত মসজিদ। প্রতি ওয়াক্তে
চারদিক থেকে ভেসে আসে আজানের সুমধুর সুর। ৪০০ বছরের বেশি পুরনো এই শহরের বুকে আজও টিকে
রয়েছে অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী
মসজিদ শহরের সোনালী ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে।

শহরের অন্যান্য
এলাকার মতো পুরান ঢাকাতেও রয়েছে
বেশকিছু ইসলামিক স্থাপত্য বা মসজিদ। এর মধ্যে অন্যতম একটি মসজিদ হলো আরমানিটোলার আবুল খয়রাত সড়কে অবস্থিত
ঐতিহ্যবাহী তারা মসজিদ। স্থানীয়দের মাঝে
আরও কিছু প্রচলিত নাম আছে এর। যেমন— মির্জা
গোলাম পীরের মসজিদ বা সিতারা মসজিদ।

মসজিদের সামনে এলে দর্শনার্থীদের প্রথমেই চোখে পড়ে যায় বিশাল আকৃতির ফোয়ারাবেষ্টিত একটি তারা।

ধারণা করা হয়, অষ্টাদশ শতকের
দিকে নির্মিত হয় তারা মসজিদ। সাদা মার্বেলের গম্বুজের ওপর নীলরঙা তারায় খচিত এই
স্থাপনাটি দেখতে মনোমুগ্ধকর।
মসজিদের সামনে এলে দর্শনার্থীদের প্রথমেই চোখে পড়ে যায় বিশাল আকৃতির ফোয়ারাবেষ্টিত একটি
তারা।

জানা যায়, অষ্টাদশ শতকে
ঢাকার মহল্লা আলে আবু সাঈয়ীদে (পরবর্তীতে এলাকাটির
নাম হয় আরমানিটোলা) আসেন জমিদার মির্জা গোলাম পীর (মির্জা আহমদ জান)। ঢাকার
ধনাঢ্য ব্যক্তি মীর আবু সাঈয়ীদের নাতি ছিলেন তিনি। মির্জা গোলাম পীর নির্মাণ করেন
তারা মসজিদ। ‌মির্জা সাহেবের মসজিদ হিসেবে তখন পরিচিতি লাভ করে মসজিদটি। ১৮৬০ সালে মারা যান মির্জা গোলাম
পীর। তখন, মসজিদে গম্বুজ ছিল ৩টি।
গম্বুজগুলো দৈর্ঘ্যে ৩৩ ফুট (১০ দশমিক ০৬ মিটার) ও প্রস্থে ১২ ফুট (৪ দশমিক ০৪ মিটার) ছিল
তখন।

দিনের আলোয় তারা মসজিদ

১৯২৬ সালে তারা মসজিদ সংস্কারের উদ্যোগ নেন ঢাকার তৎকালীন স্থানীয় ব্যবসায়ী আলী জান ব্যাপারী। সেই সময় মোজাইক কারুকাজের জন্য ব্যবহৃত হয় জাপানের রঙিন চিনি-টিকরি পদার্থ। সংস্কারের সময় মসজিদের পূর্ব দিকে বাড়ানো হয় একটি বারান্দা।

১৯৮৭ সালে, মসজিদের পুরনো একটি মেহরাব ভেঙে দুটি গম্বুজ ও
তিনটি নতুন মেহরাব বানানো হয়। ফলে তারা
মসজিদ তিন গম্বুজ থেকে রুপান্তরিত
হয় পাঁচ গম্বুজের মসজিদে। মসজিদের বতর্মান দৈর্ঘ্য ৭০ ফুট (২১
দশমিক ৩৪ মিটার), প্রস্থ ২৬ ফুট (৭ দশমিক ৯৮ মিটার)।

মসজিদের দেয়ালের নকশায় রয়েছে ফুলদানি, ফুলের ঝাড়, গোলাপ ফুল, এক বৃন্তে একটি ফুল, চাঁদ, তারা, নক্ষত্র ও আরবি ক্যালিগ্রাফিক লিপি।

মোঘল স্থাপত্য শৈলীর প্রভাব থাকা তারা মসজিদের জুল্লায় প্রবেশের জন্য পাঁচটি খিলানবিশিষ্ট পথ সৃষ্টি করা হয়েছে। এগুলো বহু খাঁজবিশিষ্ট এবং চারটি অষ্টভুজাকৃতির স্তম্ভ থেকে উত্থিত। মসজিদের অভ্যন্তর ও বাইরের পুরোটা দেয়াল জুড়েই মোজাইকে নকশা করা। বাইরের দেয়ালের কারুকার্যের জন্য চিনামাটির বাসন, পেয়ালা ইত্যাদির ছোট ভগ্নাংশ ও কাচের টুকরো ব্যবহৃত হয়েছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ‘চিনি টিকরি’ বা চিনি দানার কাজ।
আর মসজিদের দেয়ালের নকশায় রয়েছে ফুলদানি, ফুলের ঝাড়, গোলাপ ফুল, এক বৃন্তে একটি ফুল, চাঁদ, তারা, নক্ষত্র ও আরবি ক্যালিগ্রাফিক লিপি।

এছাড়াও মসজিদের
বারান্দায় জাপানের বিখ্যাত ফুজিসানের দৃশ্যসংবলিত টাইলস
উল্লেখযোগ্য। ‘ফাসাদ’-এর কেন্দ্রে আরবি লিপিসংবলিত সূক্ষ্ম অর্ধচন্দ্র ও
তারার অলঙ্করণ রয়েছে।
বৃত্তাকার শ্বেত-শুভ্র গম্বুজগুলোতে বসানো হয়েছে নীল রঙের অসংখ্য তারা বা
নক্ষত্র। সমগ্র নকশায় সবচেয়ে প্রাধান্য পেয়েছে তারকা চিহ্নটি। তাই মসজিদটি তারা মসজিদ নামেই খ্যাত।

যেভাবে যাবেন
ঢাকার যেকোনও জায়গা থেকে খুব সহজেই আসা যায় তারা মসজিতে। চানখারপুল, গুলিস্তান কিংবা বাবুবাজার সেতুতে রিকশাচালককে আরমানিটোলা স্কুল বা তারা মসজিদ বললেই চলবে। পৌঁছে যাবেন ঢাকার ইতিহাসের অন্যতম সাক্ষী, ঐতিহ্যবাহী তারা মসজিদে।

Leave a Reply