ঘুরে আসুন সমুদ্র সুন্দরী দীঘা!
Tweet
একটার পর একটা, ক্লান্তিহীন, অবিরত সমুদ্রের বুকে তৈরি হওয়া বিরাট বিরাট ঢেউ আছড়ে পড়ে সমুদ্রতটের বালিয়াড়িতে। যতদূর চোখ যায়, ঠিক যেখানে জল আর আকাশ একে অপরের সঙ্গে মিশে গেছে ঠিক সেই জায়গাটায় অন্ধকার সরিয়ে প্রথম ভোর হয়। দিগন্ত পার থেকে গোটা আকাশে খুশির রক্তিম আবির ছড়িয়ে হয় সূর্যোদয়। রাতের গভীর অন্ধকার উত্তীর্ণ হয়ে গোটা চরাচর জুড়ে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে থাকে ভৈরবী রাগ। সূর্যের প্রথম ছটা বিচ্ছুরিত হয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সমুদ্র। ঘুম থকে জেগে ওঠে সমুদ্র সুন্দরী ‘দীঘা’। সকালের সমুদ্র তটে দেখা মেলে পায়ে পায়ে হেঁটে চলা নানা বর্ণের শামুক, ঝিনুক এবং ছোট বড় শঙ্খের।
পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র সমুদ্র কেন্দ্রীক ভ্রমণ কেন্দ্র দীঘা ৭ কিলোমিটার লম্বা এক সমুদ্রতট। এক পাশে গভীর সমুদ্র আর অন্যপাশে ঝাউ গাছের অগভীর জঙ্গল। ভেঙ্গে পড়া ঢেউ-এর জলে পা ভিজিয়ে হেঁটে যাওয়া যায় দীর্ঘ পথ। আর আছে অপরূপ প্রকৃতি, যা দীঘায় ঘুরতে আসা পর্যটককে মোহিত করে।
দীঘায় সৈকত রয়েছে দুইটি। একটি পুরনো দীঘার সৈকত, অপরটি নতুন দীঘার সৈকত নামে পরিচিত। দীঘার বীচ শক্ত, জমাট। ভারতের সবচাইতে শক্ত এই সৈকতভূমিতে ছোট
গাড়ি চলে অনায়াসে। এমনকি হেলিকপ্টারও নামতে পারে সেখানে।
ইংরেজ আমলে দীঘা ছিল বীরকুল নামে পরিচিত। ১৭৮০ সালে ওয়ারেন হেস্টিন্স স্ত্রীকে লেখা তার এক চিঠিতে বীরকুলের অপূর্ব প্রাকৃতিক রূপে মুগ্ধ হয়ে এটিকে ‘প্রাচ্যের ব্রাইটন’ উল্লেখ করেছিলেন।
পরবর্তীতে ১৯২৩ সালে ইংরেজ পর্যটক জন ফ্রাঙ্ক স্মি্থ হাজির হন বীরপুরে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি আজীবন থেকে যান এই সমুদ্রের পাড়ে। তারই লেখালেখির ফলে দীঘা সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। ভারতের স্বাধীনতার পর তিনি পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ডঃ বিধানচন্দ্র রায়কে উৎসাহ দেন এখানে পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধি করতে।
কিভাবে যাবেন-
কলকাতা থকে ১৮৭ কিলোমিটার দূরত্বের এই সমুদ্র শহরে যাওয়ার জন্য আছে রেলপথ। কলকাতা থেকে ট্রেনে দীঘায় পৌছনো যায় সাড়ে ৩ ঘণ্টার মাঝে। এছাড়া যাওয়া যায় সড়কপথেও। কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে সরকারি-বেসরকারি বাসের ব্যবস্থা আছে। বাসে ৫ থেকে সাড়ে ৫ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন দীঘা।
দীঘাতে সমুদ্র সৈকত ছাড়াও অমরাবতী লেক, দ্য মেরিন অ্যাকরিয়াম অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, সর্প উদ্যান, সায়েন্স পার্ক, দীঘা বিজ্ঞান কেন্দ্র ইত্যাদি আছে ঘুরে দেখবার মতো। এছাড়াও মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ওড়িশার উদয়পুর সৈকত এবং ৬ কিলোমিটার দূরে ওড়িশার চন্দনেশ্বর মন্দির রয়েছে দর্শনাস্থানের তালিকায়।