দু’শো বছরের ঐতিহ্যের রাশমেলা

Share on Facebook

বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী
পৃথিবীর একমাত্র ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের নাম দুনিয়াজোড়া খ্যাত। গহীন এই
অরণ্যের পাশে সাগরের সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য অতীব চমৎকার। যা সারা বিশ্বের পর্যটকদের
মনকে করে তোলে
আরও রূপময়। সুন্দরবনের পাশেই ছোট্ট একটি নয়নাভিরাম দ্বীপ দুবলার চর।
বঙ্গোপসাগরের বুকে কুঙ্গা ও মরা পশুর নদীর তীরে জেগে ওঠা এ চরে দীর্ঘ দুইশো বছর ধরেই চলে আসছে রাসমেলা।

প্রকৃতির অপার
সৌন্দর্য্যের এই চরে প্রতি বছরই কার্তিক মাসে হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীদের মেলা বসে। এই
মেলায় গ্রামীণ অনেক খাবার, মিষ্টি, সন্দেশ, অনেক রকম শুটকি, পুতুল নাচ, যাত্রাপালাসহ অনেক ঐতিহ্যবাহী জিনিসের সন্ধান মেলে।

পূজারত পুণ্যার্থীরা

মেলায় হিন্দু
সম্প্রদায়ের লোকেরা দেবতা নীলকমল ও গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করে থাকে। এসময়ে হিন্দু
ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরা পুণ্যস্নানের জন্য এখানে আসেন। স্থানীয়
লোকালয়ে এই মেলা নীল কমল নামে পরিচিত। এই মেলায় স্থানীয় লোকজন ছাড়াও দূর-দূরান্তের
শহরবাসী এমনকি অনেক বিদেশি পর্যটকেরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে থাকেন।

রাসমেলায় প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনায় বসেন
পুণ্যার্থীরা। তারা সাগরকে সামনে নিয়ে নির্জনে কৃষ্ণপূজার সঙ্গে দেবতা নীল কমল আর
গঙ্গাদেবীর আরাধনায় নিমগ্ন হন। পাপমোচন করেন সমুদ্রস্নানে। সূর্যোদয়ে পানিতে
ভাসিয়ে দেন ফল-ফুল। অতঃপর ঢাক-ঢোলক-কাসা-মন্দিরা বাজিয়ে ভজন-কীর্তনে নিনাদিত করেন চারপাশ।
পূজা-অর্চনার ফাঁকে সূর্যাস্তের পর সাগরকে সাক্ষী করে আকাশের বুকে উড়িয়ে দেওয়া হয়
ফানুস।

পুণ্যস্নানের জন্য পুণ্যার্থীরা এখানে আসেন

দুবলার চরের ঐতিহাসিক এই রাসমেলার ইতিহাস বেশ পুরনো। প্রচলিত আছে, ঠাকুর হরিচাঁদের অনুসারী হরিভজন নামের এক হিন্দু সাধু এ মেলার প্রচলন করেছিলেন। প্রায় দুই যুগ ধরে তিনি সুন্দরবনে গাছের ফলমূল খেয়ে অলৌকিক জীবন-যাপন করতেন। অনেকে আবার বিশ্বাস করেন শ্রীকৃষ্ণ শত বছর আগের কোনো এক পূর্ণিমা রাতে পাপমোচন ও পুণ্যলাভের উদ্দেশ্যে স্বপ্নে গঙ্গাস্নান করেন। সেই থেকে শুরু হয় রাসমেলা। কারও কারও মতে, শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাসনৃত্যে মেতেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। এ উপলক্ষেই দুবলার চরে রাসমেলা হয়ে থাকে।

এছাড়াও সন্তানহীন ধর্মানুরাগী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা দুবলার চরের মেলায় মানত করেন এবং মেলায় এসে মানতকারীরা আনুষঙ্গিক অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করে থাকেন। মেলায় বাদ্য, নৃত্য, গীত ও বিবিধ প্রকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে। পসার সাজিয়ে বসে কুটির শিল্পের দোকান ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, ফল-ফলাদি, মিষ্টান্ন, মনোহারী সামগ্রীর।

Leave a Reply