দেখে আসুন দুবলার চরের ঐতিহ্যবাহী রাশমেলা
Tweet
বাংলাদেশ একটি উৎসবমুখর দেশ। বছরের বিভিন্ন সময়ে এদেশের মানুষ বিভিন্ন রকম উৎসবে মেতে ওঠে। রাশমেলাও এমনই একটি উৎসব। সুন্দরবনের রাশমেলা শুধুমাত্র বাগেরহাটের জন্যই একটি বড় মেলা নয় বরং এটি নিঃশন্দেহে বাংলাদেশের সব থেকে বড়মেলা। এই মেলার ধর্মীয় তাৎপর্য রয়েছে, এটা রাসলীলা বা পূর্ণিমার ভিত্তিতে পালিত হয়। প্রতিবছর কার্তিক ও অগ্রাহায়ন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে ৫-৭দিন যাবত বসে এই মেলা। বাংলাদেশের মুণীপুরি হিন্দু সম্প্রদায়ের বিষ্ণুপ্রিয়া গোষ্ঠীর বেশিরভাগ মানুষজন এই উৎসব পালন করে থাকে। এটি তাদের প্রধান উৎসব। দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য হিন্দু পুণ্যার্থী আর পর্যটক এ উৎসবে শামিল হতে ছুটে আসেন সুন্দরবনের পাশের ছোট্ট এই চরে। প্রায় অর্ধলক্ষ লোকের সমাগম হয় এসময়ে এখানে।
রাশমেলা মূলত হিন্দু
সম্প্রদায়ের পুণ্যোৎসব হলেও একে কেন্দ্র করে সমুদ্র দর্শন, দুবলারচর থেকে
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত নিখুঁতভাবে দেখা যায়। অথচ এমন মনোরম দৃশ্য দেখার সুযোগ সহজে
মেলে না। তাই বর্তমান কালে প্রতিবছর রাশমেলার সময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে
পুণ্যার্থী ছাড়াও হিন্দু-মুসলমানসহ দেশি-বিদেশি পর্যটক আমোদ-প্রমোদ করতে দুবলারচরে
সমাবেত হয়। সবমিলিয়ে মেলার ক’দিন সুন্দরবনের অভ্যন্তরের
নির্জন দুবলারচর বর্ণিল আলোতে আলোকিত থাকে যা ছোট একটি শহরের মতো মনে হয়। মেলার
তীর্থযাত্রীরা পানির অভাবে পড়লে দুবলার বালুচরের কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করেন,
যা মেলার দর্শনার্থী ও পর্যটকদের জন্য আরও এক বড় আর্কষণের ব্যাপার।
সর্বোপরি পৃথিবীর বিখ্যাত ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের ঘন শ্যামল বৃক্ষরাজি ও পশুপাখির আকর্ষণে
এ মেলায় দিন দিন দর্শনার্থী বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রাশমেলায় যাওয়াআসার পথে বনবিভাগ-পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর টহল দল তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে থেকে সুন্দরবনের দুবলার চরে রাস মেলায় আগতদের দু’ভাগ ভাগ করা হয়েছে। যারা রাস পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে পূজা অর্চনা করবেন তাদেরকে পুণ্যার্থী ধরা হয়েছে। পুণ্যার্থীদের ৩ দিনের জন্য জনপ্রতি অনুমতি ফি ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অপরদিক মেলা উপভোগ করার জন্য আগতদের দর্শনার্থী ধরা হয়েছে। দর্শনার্থীদর ৩ দিনের জন্য জনপ্রতি অনুমতি ফি ২১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে আকার ভেদে বিভিন্ন নৌযানের জন্য আলাদা আলাদা ফি।
সববারের মতো এবারেও ১১ থেকে ১৩ নভেম্বর চন্দ্রিমার আলোকমালায় শোভিত নীরব চরাঞ্চল সরব হয়ে উঠবে পুণ্যার্থীদের প্রার্থনা আরাধনায়। তাই রাশমেলা উপভোগের ছলে সুন্দরবনের সৌন্দর্যও ঘুরে আসতে পারেন আপনি এই ফাঁকে।
কীভাবে যাবেন-
নিজস্ব
উদ্যোগে সুন্দরবনের গহীনে ভ্রমণ কঠিন। তাই রাসমেলা ভ্রমণে যেতে সাহায্য নিতে হবে
অভিজ্ঞ কোনো ভ্রমণ সংস্থার।
এবারের রাস উৎসব
উপলক্ষে সুন্দরবনে বিশেষ প্যাকেজের ব্যবস্থা নিয়েছে অসংখ্য বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থা।
রয়্যাল ভিশন ট্যুরিজম: ০১৭১২১০০৩৩৭।
রূপসী বাংলা ট্যুরিজম: ০১৭১১৪০৯৩০৯।
সুন্দরবন হলিডেস ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস: ০১৭১১৩৭৭৫৩৬।
দি ম্যানগ্রোভ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস: ০১৯১৭৭২১২৩৬।
এস আর ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস: ০১৭২৫২৩২০২৩।
সুন্দরবন পলি ট্যুরিজম: ০১৭১৫৬৩৪৬৯৪।
সাওদান ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস: ০১৭১২-৭৭৩৩৬১।
এসব ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠানের প্যাকেজে জনপ্রতি খরচ ননএসিতে ৮-১২ হাজার টাকা। আর
এসিতে ১২-১৫ হাজার টাকা।
এ ধরনের প্রায় ৪০টি
ট্যুরিস্ট কোম্পানি খুলনার বিআইডব্লিউটিএ’র লঞ্চঘাট থেকে সুন্দরবনের
রাসমেলায় যাবে। খুলনা থেকে লঞ্চে সুন্দরবন যাতায়াতে সবার জন্য থাকছে এসি/ননএসি
কেবিন ব্যবস্থা এবং একই মানের খাবার। দুবলার চরে রাসমেলা দেখা ছাড়াও এ প্যাকেজে
থাকছে হিরণ পয়েন্ট, আলোরকোল, কটকা,
জামতলা, টাইগার পয়েন্ট ও কচিখালী
ভ্রমণের সুযোগ। এছাড়া থাকবে বনের ভেতর র্ট্যাকিং, বিচভলিবল,
ফানুস ওড়ানো ও সাংস্কৃতিক আয়োজন।