দেখে আসুন বাড়বকুণ্ডের গরম পানির প্রাচীণ কূপ
Tweet
হাজার বছরের প্রাচীণ সভ্যতার চিহ্ন থাকা বাংলাদেশে রয়েছে অদ্ভুত আর বিরল সব জায়গা। তারই একটি চট্টগ্রামের এই বিরল গরম পানির কূপ বা উষ্ণ জলের প্রাকৃতিক খুম। চট্টগ্রামের বাড়বকুণ্ড ট্রেইলে কয়েকশ’ বছরের পুরনো কালভৈরবী মন্দিরের ঠিক পাশেই আছে বিরল এই গরম পানির কূপটি। অনেকের মতে, হাজার বছরেরও পুরনো এটি।
কালভৈরবী মন্দির আর গরম জলের কূপ নিয়ে প্রচলিত আছে নানানরকমের মিথ ও গল্প। বৈজ্ঞানিক মতে, মিথেন গ্যাসের কারণে সবসময় কূপটিতে আগুন জ্বলে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এর পাশে দাঁড়ালে গা ছমছমে ব্যাপার কাজ করে! মানুষজনের পদচারণা নেই বলে পাহাড়ি গাছপালা আর লতাপাতায় ভরে গেছে মন্দিরটি।
কালভৈরবী মন্দিরটির দেখাশোনা করেন একজন পুরোহিত। গরম জলের কূপ প্রসঙ্গে তিনি জানান- শিব ও পার্বতী ছিলেন স্বামী-স্ত্রী। পার্বতীর বাবা একদিন শিবকে অপমান করেন। পার্বতী তা সহ্য করতে না পেরে দেহত্যাগ করেন। শিব খবরটি পেয়ে রাগে পার্বতীকে নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেন। এ কারণে তখন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল। শিবকে শান্ত করার জন্য ও পৃথিবীর ধ্বংস ঠেকাতে বিষ্ণু তার চক্র দিয়ে পার্বতীর শরীরকে ৫১ ভাগ করেন। ওই টুকরোগুলোর একটি ভাগ পড়েছে বাড়বকুণ্ডের এই জায়গাটিতে। এজন্যই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে সীতাকুণ্ড পবিত্র একটি স্থান।
বাড়বকুণ্ড ট্রেইলটি খুব ছোট আর সহজ। তবে দেখার মতো এখানে আছে অনেক কিছুই। শত বছরের প্রাচীন কালভৈরবী মন্দিরের পাশেই আরও দুই-একটি শতবর্ষী মন্দির আছে। তবে সেগুলোর অবস্থা এখন ভঙ্গুর প্রায়।
এছাড়াও কালভৈরবী
মন্দির থেকে একটু সামনে এগোলে ঝিরিপথের রুট আছে। এই রুট ধরে এগুলেই দুই-তিনটি
ছোট বড় ঝরনার দেখা মেলে। বর্ষার সময়ে দেখতে অপূর্ব লাগে এই ঝরনাগুলো। যদিও
সেগুলো শুকনো থাকে বছরের বেশিরভাগ সমইয়েই।
ট্রেইলটির সবকিছু দেখার জন্য আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা যথেষ্ট। তারপর এখান থেকে অনায়াসেই চট্টগ্রামের আরেকটি ট্রেইলে চলে যাওয়া যায়।
যেভাবে যাবেন –
যেকোন গাড়িতে চড়ে চট্টগ্রামের বাড়বকুণ্ড বাজারে যেতে হবে। সীতাকুণ্ডের পরেই রয়েছে বাড়বকুণ্ড বাজার। ঢাকা থেকে বাসে উঠলে বাড়বকুণ্ড বাজারেই নামা যায় সরাসরি। তবে ট্রেনে চড়লে পেরোতে হবে কয়েক ধাপ।
বাড়বকুণ্ড বাজার থেকে চট্টগ্রামের দিকে ঘুরলে বাঁ-দিকে একটি পাকা রাস্তা চলে গেছে। এই পথ ধরে ৪০-৫০ মিনিটের মতো হাঁটলেই পৌঁছানো যায় কালভৈরবী মন্দিরে। এক্ষেত্রে দুই ধরনের পথ মিলবে। একটি পাকা রাস্তা, আর পাকা রাস্তা শেষে মাটির রাস্তা৷ রিকশায় পাকা রাস্তা পেরোনো যায়। তবে বৃষ্টি হলে মাটির রাস্তা যেন চোরাবালিতে রূপ নেয়।