পর্যটকদের হতাশ করে বন্ধ হলো ‘ট্রেন স্ট্রিট’
Tweet
ওভারটুরিজম এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ট্রেন স্ট্রিটকে বন্ধ করেছে পর্যটকদের জন্য। ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ফরাসি ঔপনিবেশিক যুগের এই রেলপথটি ইনস্টাগ্রামের সুবাদে বিখ্যাত। সেখানে তোলা ছবি হাজার হাজার মানুষ শেয়ার করেছেন এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
গত ১০ অক্টোবর ‘বিপজ্জনক
এলাকা’ লেখা সাইনবোর্ড স্থাপনের মাধ্যমে এলাকাটিতে মানুষকে
ছবি তোলা ও ভিডিও করা থেকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছে স্থানীয় পুলিশ। ফলে পর্যটকরা আর সেখানে ছবি
তোলার জন্য যেতে পারবেন না।
ইতোমধ্যে হতাশা নিয়ে ফিরে গেছেন অনেক পর্যটক। তাদেরই একজন মালয়েশিয়ার নাগরিক মুস্তাজা বিন মুস্তাফা। তিনি বলেন, ‘আমি খুব হতাশ, কারণ আজ রেলপথে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে পারিনি।’ তবে আবারও হ্যানয়ের এই জায়গায় বেড়ানোর জন্য আসতে আগ্রহী তিনি।
ব্রিটিশ পর্যটক হ্যারিয়েট হেইস অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘হ্যানয়ে ট্রেন চলাচল দেখতেই সারা পৃথিবী থেকে মানুষ আসে। আমিও এসেছি। অথচ এখন বলা হচ্ছে, আমাদের চলে যেতে হবে। এটা তো রীতিমতো অপমান।’
ব্যস্ত হ্যানয় শহরের সরু রাস্তা ও গোলকধাঁধার মতো অলিগলির ওল্ড কোয়ার্টার ‘ট্রেন স্ট্রিট’ নামেই খ্যাত। রাস্তাটিতে রেলপথ আর বাড়িঘরের মাঝে অবশিষ্ট কেবল ফুটখানেক জায়গা। জনবহুল এই আবাসিক এলাকার পথে চলার সময়ে দেখা যায় হ্যানয়ের সাধারণ জীবনযাত্রা। এই রেলপথ রাস্তাতেই চলে মানুষ, খেলাধুলা করে বাচ্চারা, বয়স্করা বসে খেলে পাশা কিং দাবা, বন্ধু-বান্ধবেদের চলে আড্ডা, ক্যাফেগুলোতে বিক্রি হয় কফি ও স্ন্যাকস, চলে স্থানীয়দের স্বাভাবিক প্রতিটা কাজ। দুপুর ৩টা আর সন্ধ্যা ৭টায় সরু এই ব্যস্ত গলির ভেতরে দিয়েই ছুটে চলে ট্রেন। রাস্তায় থাকা প্রত্যেকে তখন চেপে দাঁড়ায় বাড়িগুলোর দেয়ালের কাছে। সাধারণ জীবনের বৈচিত্রে ভরা ট্রেন স্ট্রিটে বসবাস করা মানুষেরা আকর্ষিত করে পর্যটকদেরকে।
এই রেলপথ এতোটাই বিখ্যাত যে এখানে ছবি তুলে ইনস্টাগ্রামে দেওয়ার জন্য অনেক পর্যটকই পেশাদার আলোকচিত্রী ভাড়া করে নিয়ে যান সাথে। একটি কথাও প্রচলিত সেখানে। পর্যটকদের ভাষায় তা হলো ‘ডু ইট ফর গ্রাম’। অর্থাৎ ইনস্টাগ্রামে শেয়ার দিতে ছবি তোলা!
১৯০২ সালে ফরাসিরা তৈরি করে এই রেলপথটি। একসময় ফ্রান্সের ইন্দোচিনা কলোনিতে পণ্য সরবরাহ ও মানুষের যাতায়াতের জন্য ব্যবহার হতো এটি। তবে মাদক ব্যবহারকারীদের আখড়া ছিল এই জায়গাটি। ধীরে ধীরে পর্যটকদের মাধ্যমে এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ায় তাদের উৎপাত কমে আসে।
এছাড়াও রেলপথের পাশাপাশি গতকাল (১২ অক্টোবর) থেকে বন্ধ হয়ে গেছে সেখানকার ক্যাফেগুলোও। হুট করে নেয়া কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে নাখোশ ক্যাফে মালিকেরা। একটি ক্যাফের পরিচালক লে তুয়ান আনের দাবি, ‘এখানে দুঃখ করার মতো কখনও কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। শহরের অন্য যেকোনও ব্যস্ত সড়কের তুলনায় এটি বরং অনেক নিরাপদ।’
গত ৬ অক্টোবর ওই রেলপথে অসংখ্য পর্যটকের ভিড় থাকায় একটি ট্রেনকে বাধ্য হয়ে নতুন রুটে যেতে হয়েছে। মূলত এ ঘটনার পরই পৌরসভা কর্তৃপক্ষ স্পটটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
ভিয়েতনাম ন্যাশনাল
অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব ট্যুরিজমের ভাইস চেয়ারম্যান হা ভান সিও বলেন, ‘রেলপথের ক্যাফেগুলো পর্যটকদের আকর্ষণ
করলেও তারা কিছু বিধি লঙ্ঘন করছে।’ তবে তিনি নির্দিষ্ট করে কিছু উল্লেখ
করেননি। তার মন্তব্য, রেলপথটি
উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
ভ্রমণপ্রেমীদের সমাগম নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশের প্রবণতা এশিয়ায় পর্যটন শিল্পের অন্যতম সমস্যা। এর অংশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার কমোডো আইল্যান্ডে টিকিটের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে অনেক গুণ। দেশটির কাছেই থাইল্যান্ডের মায়া বে’র সামুদ্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে গত বছর থেকে নিষিদ্ধ রয়েছে সেখানে পর্যটকদের ভ্রমণ।