মন্দা কাটাতে থাইল্যান্ডের টার্গেট মার্কেট এবারে ইন্ডিয়া
Tweet
আন্দামান সাগরে ঘেরা
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের আধার থাইল্যান্ডের ফুকেট বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একটি
পর্যটন কেন্দ্র। ব্যাংককের পরে ফুকেটেই সর্বোচ্চসংখ্যক পর্যটকের সমাগম হয় দেশটিতে।
থাইল্যান্ডের অর্থনীতিতে
পর্যটন শিল্পের অবদান ১৮ শতাংশ। সারাবছর দেশটিতে আগত পর্যটকের এক-চতুর্থাংশই আসে
চায়না থেকে। থাইল্যান্ডের সরকারী পরিসংখ্যান অনুযারী ২০১৮ সালেও ২.২ মিলিয়ন চাইনিজ
ঘুরতে এসেছে। কিন্তু এই ২০১৯ সালে চাইনিজ পর্যটকের সংখ্যা কমে গেছে আশংকাজনকভাবে।
পরিসংখ্যান বলছে গত বছরের তুলনায় এবছর জানুয়ারী-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭ মাসে চাইনিজ
পর্যটকের সংখ্যা কমে গেছে অন্ততপক্ষে ৫ শতাংশ।
বিখ্যাত পাতং সমুদ্র সৈকত এলাকার হোটেল মোটেল মালিকদের ভাষ্যমতে সাধারণত অফ-সিজনেও চাইনিজ পর্যটকরা ফুকেটে ঘুরতে আসে সবসময়।’ ‘তবে এবছর তেমনটা হয়নি।’ তারা বলেন, রুমের ভাড়া প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনার পরও পর্যটক খরা কাটাতে পারছেন না।
পর্যটক কমে যাওয়ার এই
সমস্যাটা কেবল ফুকেটেই সীমাবদ্ধ নেই আর। থাইল্যান্ডের সমুদ্রতীরবর্তী পাতায়া এবং
কোহ সামুই দ্বীপের রিসোর্টগুলোতেও পর্যটক সংখ্যা অনেক কমে গেছে । প্রায় প্রতিটি
হোটেলেই ফাকা থাকছে অনেক রুম।
গত বছর ‘ফিনিক্স’ ট্যুর
বোট দূর্ঘটনায় ৪৭জন চাইনিজ পর্যটক মারা যাওয়ার পর থেকে চাইনিজ পর্যটকদের সংখ্যা
কমতে শুরু করেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এছাড়াও চাইনিজ ইয়েনের (চাইনিজ মুদ্রা)
বিপরীতে থাই বাথের মূল্য ১০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধিও একটি কারন হতে পারে বলে মতামত
দিচ্ছেন দেশটির পর্যটন বিশেষজ্ঞরা।
পর্যটন শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে থাইল্যান্ডের হোটেল এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ভিজিত রিসোর্টের পরিচালক কোংসাক খুপংসাকর্ন বলেন, ‘বাণিজ্যিক দৃষ্টিতে এটা খুব খারাপ অবস্থা কারন পর্যটকদের তুলনায় হোটেল রুম, রেস্টুরেন্ট, কফিশপ সবই আছে অনেক বেশি সংখ্যায়। এছাড়া আর প্রায় ৩০০০ হোটেল রুম নির্মানাধীন আছে, এখন পর্যটকই যদি না আসে তাহলে এসব রুমে থাকবে কারা?’
তবে থাইল্যান্ড ট্যুরিজম
অথোরিটি’র গভর্নর ইয়ুথাসাক সুপাসর্ন ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী
হয়ে বলেন, ‘এই বছর আমাদের ৩৯.৮ মিলিয়ন বিদেশী পর্যটকের লক্ষ্যে পৌছানো উচিত।’
বর্তমানে থাইল্যান্ডের হোটেল মালিক ও ট্যুর প্যাকেজ আয়োজকরা ঝুকছে ইন্ডিয়ার দিকে। পর্যটক বিশেষজ্ঞদের মতে ইন্ডিয়া হতে পারে থাইল্যান্ডের জন্য অনেক বড় একটা পর্যটন মার্কেট। কোংসাক খুপংসাকর্ন বলেন, ‘পর্যটন খাতকে ঘুরে দাড়ানোর জন্য আমরা নজর দিচ্ছি ইন্ডিয়ার দিকে। ইন্ডিয়ার অর্থনীতিতে মধ্যবিত্তের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। এজন্য ইন্ডিয়ান পর্যটকদের থাইল্যান্ড ঘুরতে আমরা আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছি। তাদের জন্য আমরা দিচ্ছি ভিসা-মুক্ত ভ্রমণের সুবিধা।’
এছাড়া ইন্ডিয়া-থাইল্যান্ডের
সরাসরি ফ্লাইট সুবিধাও রয়েছে আগে থেকেই। ইন্ডিয়ার অর্থনীতিতে ক্রমাগত মধ্যবিত্তের
সংখ্যাকে লক্ষ্য করেই এসব ভ্রমণ সুবিধা দিচ্ছে থাইল্যান্ড।
বছরের প্রথম সাত মাসে প্রায় ২৫ শতাংশ পর্যটক বৃদ্ধি পাওয়ার
ফলে এই বছরে মোট ২ মিলিয়ন ইন্ডিয়ান পর্যটকের টার্গেট করেছে এখন থাইল্যান্ড।
তবে বর্তমানে পর্যটক খরার ছাপ পাওয়া যাচ্ছে ফুকেটের
সবখানে।। টানা ১৫বছর ধরে নিয়মিত থাইল্যান্ড ঘুরতে আসা অস্ট্রেলিয়ান পর্যটক পল স্কট
বলেন, ‘এখনকার মতো খারাপ অবস্থা এর আগে আমি আর কখনো দেখিনি।’