আটকে আছে ৩ লাখ পাসপোর্ট
Tweet
এমআরপির পাসপোর্ট ইস্যু করার মতো বই হাতে না
থাকায় সারা দেশে আটকে আছে লাখ লাখ পাসপোর্ট। গত তিন মাস ধরে পাওয়া যাচ্ছে না নবায়নের মতো সাধারণ পাসপোর্টও।
এই পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি ভিত্তিতে বই আনা হচ্ছে দুই লাখ পাসপোর্টের।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের একজন কর্মকর্তা
জানিয়েছেন, চাকরি, অধ্যয়ন,
চিকিৎসা, পর্যটন যেকোনো প্রয়োজনে দেশের
বাইরে যেতে হলে পাসপোর্ট নিতে হয়। বর্তমানে দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষের হাতে
রয়েছে পাসপোর্ট। এছাড়াও প্রতিদিন প্রায় বিশ হাজার
মানুষ নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে।
একসময় হাতে লেখা পাসপোর্ট দিয়ে ভ্রমণ করার সুযোগ ছিল। ১৯৮০ সালের
পর উন্নত বিশ্বে চালু হয় মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা এমআরপি। বাংলাদেশে এমআরপি চালু
হয় ২০১০ সালে। দেশে যখন এমআরপি চালু হচ্ছে তখন উন্নত বিশ্বে ইলেকট্রনিক্স পাসপোর্ট
বা ই-পাসপোর্ট চালু হয়ে গেছে। উন্নত দেশগুলোতে ২০০৮ সাল থেকেই চলে আসছে ই-পাসপোর্টের ব্যবহার। বর্তমানে ১১৮টি দেশে
ই-পাসপোর্ট চালু করা হয়েছে। ১১৯তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালু করার জন্য
২০১৭ সালে ৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ওই বছরের ১৮
ফেব্রুয়ারি জার্মানির সরকারি প্রতিষ্ঠান ভেরিডোস জেএমবিএইচের সঙ্গে ই-পাসপোর্ট
চালুর ব্যাপারে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় এবং চুক্তি সম্পন্ন হয়। গত বছরের ডিসেম্বরের
মধ্যে ই-পাসপোর্ট চালু করবে বলে কথা দিয়েছিল তারা। প্রাথমিকভাবে জার্মানি
থেকে বিশ লাখ ই-পাসপোর্ট ছাপিয়ে আনার পর বাকিগুলো ঢাকার উত্তরায় ছাপানোর কথা।
জার্মানি থেকে ই-পাসপোর্টের গেটসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনার কথা
থাকলেও নির্ধারিত সময়ে সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। এতে করে ডিসেম্বরের পরিবর্তে
গত জানুয়ারিতে ই-পাসপোর্ট চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। তা-ও ব্যর্থ হওয়ার পর বলা হয় জুন
মাসে চালু হবে। এরপর বলা হয়, জুলাইয়ে ই-পাসপোর্টের যুগে
প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। কিন্তু হয়ে ওঠেনি তাও।
এখন বলা হচ্ছে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো
হবে শুরু হবে।
দেশে পাসপোর্টের বই ছাপানো হয় না। ডে লা রো নামে্র একটি কোম্পানি বই ছাপিয়ে বাংলাদেশে রপ্তানি
করে। বিদেশ থেকে আসা বইয়ে প্রয়োজনীয় নাম-ঠিকানাসহ বিভিন্ন তথ্যাদি ছাপিয়ে পাসপোর্ট দেয়া হয়
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে।
ই-পাসপোর্ট চালুর আশায় এমআরপি পাসপোর্টের বই আমদানি বন্ধ করে
দেয়া হয়। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় সাড়ে চার লাখ পাসপোর্ট বই লাগে। অথচ সর্বশেষ বইয়ের চালান
এসেছে কয়েক মাস আগে। জুলাইয়ে ই-পাসপোর্ট চালু হলে এমআরপি বই নষ্ট হয়ে যাবে,
তাই অর্ডার দেয়া হয়নি। এতে করে এমআরপির সংকট চলছে। নতুন পাসপোর্ট
পাওয়া যাচ্ছে না, নবায়নের পাসপোর্টও পাচ্ছেন না।
হালিশহরের শেখ আবদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি বলেছেন, তিন মাস আগে পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেছি। জরুরি ফি-ও পরিশোধ
করেছি। কিন্তু এখনো পাইনি।
মৌলোভীবাজারের কাতার প্রবাসী লোকাস মিয়া জানান, তিনি দেশে এসে পাসপোর্ট নবায়ন করতে দিয়েছেন। তার বিদেশ যাওয়ার সময় ঘনিয়ে
আসছে। এখনো পাননি। আর কয়েকদিন গেলে সমস্যায় পড়বেন তিনি। পাসপোর্ট পেতে এখন তাই ছুটে এসেছেন তিনি ঢাকায়। এমনই করে সারাদেশ
থেকে ঢাকায় ছুটে এসেছেন লাখ লাখ পাসপোর্ট আবেদনকারী, ভীড় জমিয়েছেন আগারগাঁওয়ের
পাসপোর্ট অফিসে।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ই-পাসপোর্টেও
এমআরপির মতো বই থাকবে। তবে এমআরপি পাসপোর্টের শুরুতে ব্যক্তির তথ্য সংবলিত যে দু’টি পাতা আছে ই-পাসপোর্টে
থাকবে না সেটা।
সেখানে পলিমারের তৈরি বিশেষ একটি কার্ড থাকবে। ওই কার্ডে একটি এমবেডেড ইলেকট্রনিক
মাইক্রো প্রসেসর চিপ থাকবে। এই চিপে পাসপোর্টধারীর বায়োগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক (ছবি, আঙুলের ছাপ ও চোখের মণি) তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। ই-পাসপোর্টের সব তথ্য
কেন্দ্রীয়ভাবে পাবলিক কি ডাইরেক্টরিতে (পিকেডি) সংরক্ষিত
থাকবে। আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন
ই-পাসপোর্টে মেয়াদ থাকবে ৫ এবং ১০ বছরের জন্য।