এখনই সময় কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ দৃশ্য দেখার
Tweet
ঢাকা
থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা। হাজার বছরের গৌরবগাথা আর
প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্যের অগণিত স্মৃতিমণ্ডিত জেলা পঞ্চগড়। হিমালয়ের পাদদেশে
জেলাটির ভৌগলিক অবস্থান হওয়ায় পঞ্চগড়কে বলা হয় হিমালয় কন্যা।
স্থানীয়রা
জানান, সাধারণত
অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত শীতের আগে মেঘমুক্ত নীলাকাশে ভেসে ওঠে তুষার
শুভ্র হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘা। বছরের এই নির্দিষ্ট সময়ে বাংলাদেশ থেকে
দৃশ্যমান হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখতে প্রতি বছরই অসংখ্য পর্যটক সেখানে
যান।
সকালে
সূর্যোদয়ের পর থেকেই চোখে ধরা পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার নয়নাভিরাম নৈসর্গিক রূপ। সূর্যকিরণের
তেজ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সকাল দশটা থেকে
এগারটা পর্যন্ত বেশ ভালোভাবেই দেখা যায়। তারপর ক্রমান্বয়ে আবার ঝাপসা হয়ে হারিয়ে
যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। তবে শেষ বিকেলে সূর্যকিরণ যখন তির্যকভাবে বরফাচ্ছাদিত পাহাড়ে পড়ে
তখন অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে আবারও ধরা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। চোখের কাছে ভেসে
থাকা হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্লভ মায়াবী দৃশ্য! বাংলাদেশ আর ভারত
সীমান্তের মাঝখানে বুক চিরে বয়ে যাচ্ছে মহানন্দা নদী। অপরুপ এই দৃশ্যে চোখ কার না
জুড়োবে!
অবস্থানগত কারণে
পঞ্চগড় একটি শীতপ্রবণ জেলা। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত
এখানে প্রচণ্ড কুয়াশাসহ শীত পড়ে। আর নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এখানকার
তাপমাত্রা ৪-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। ফলে যারা শীত উপভোগ করতে চান তাদের জন্য
আদর্শ জেলা হতে পারে পঞ্চগড়। আর হিমালয় ছুঁয়ে আসা হিমেল হাওয়াতো থাকছেই। পঞ্চগড়ের
বাংলাবান্ধা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব মাত্র ১১ কিলোমিটার। কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গ নেপাল ও ভারতের সিকিম
সীমান্তে অবস্থিত। তৃতীয় অবস্থানে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার বা
২৮ হাজার ১৬৯ ফিট। যদিও ১৮৫২ সালের আগে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে পৃথিবীর সৰ্বোচ্চ শৃঙ্গ বলে
মনে করা হতো। ১৯৫৫ সালের ২৫ মে মাসে ব্রিটিশ পবর্তারোহী দলের সদস্য জোয়ে ব্রাউন
এবং জর্জ ব্যান্ড সর্বপ্রথম কাঞ্চনজঙ্ঘায় আরোহণ করেন।
তবে
যাদের এসব সুযোগ মেলে না সেইসব বাংলাদেশি পর্যটকেরা কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ অবলোকন করতে
ছুটে যান তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধায়। এখানে মেঘমুক্ত আকাশে দিনের প্রথম সূর্যকিরণের
সঙ্গে সঙ্গেই চোখে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা। একটু বেলা বাড়লেই তেজোদীপ্ত রোদ যখন ঠিকরে পড়ে
বরফাচ্ছাদিত পাহাড়ের গায়ে,
কাঞ্চনজঙ্ঘা তখন ভিন্নরূপে ধরা দেয় পর্যটকের চোখে। যে রূপের টানে
প্রতি বছর হাজারো পর্যটক আসেন তেঁতুলিয়ায়।
স্থানীয়রা
জানান, দিনের
শুরুতে কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রথমে একটু কালচে, এরপর ক্রমান্বয়ে
টুকটুকে লাল, কমলা, হলুদ এবং সাদা বর্ণ
ধারণ করে। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ পরিবর্তন দেখতে দূরবীন বা বাইনোকুলারের প্রয়োজন
হয় না। তাছাড়া দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকলে তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে খালি চোখে
হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। অনেকে বলেন, তেঁতুলিয়া থেকে
কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়ার বিষয়টি অপেক্ষাকৃত কম সামর্থ্যবান পর্যটকদের জন্য “সৃষ্টিকর্তার উপহার”।
এদিকে, শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘা
দেখতে যাওয়া পর্যটকদের জন্যই তেঁতুলিয়া ও বাংলাবান্ধা এলাকার আশেপাশে গড়ে উঠেছে
বেশ কয়েকটি হোটেল-মোটেল ও পিকনিক স্পট।
স্থানীয়
ব্যবসায়ী শেখ ফরিদ জানান,
গত বৃহস্পতিবার থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে
কয়েকজন পর্যটকও এসেছেন। তবে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হলে পর্যটকদের ঢল নামবে।
তেঁতুলিয়ার
বাসিন্দা শামীম রেজা জানান,
“হঠাৎ করেই কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ দৃশ্য চোখে পড়েছে। বন্ধু-বান্ধবদের
জানিয়েছি, তারা তেঁতুলিয়া আসছে।”
তেঁতুলিয়া
রওশনপুরের কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেটের ব্যবস্থাপক এ কে এম ওয়াহিদুল হক বলেন, “মাঝে মাঝে
কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। চা বাগান, আনন্দ ধারা
(পিকনিক স্পট) এবং কাঞ্চনজঙ্গা দেখতে এখানে প্রতিবছর অনেক পর্যটক ভিড় করেন। শীত
কেবল নামছে। পুরোপুরি শীত নামলে পর্যটকের সংখ্যাও বেড়ে যাবে।”
তেঁতুলিয়া
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রহিদুল ইসলাম রহিদ ঢাকা
ট্রিবিউনকে বলেন, “মেঘমুক্ত আকাশে রূপোলি চকচকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে। আকাশ মেঘমুক্ত থাকা
ও উত্তরবঙ্গে সাম্প্রতিক বৃষ্টির কারণে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ কমে যাওয়াতেই
কাঞ্চনজঙ্ঘা দৃশ্যমান হয়েছে।”
কীভাবে যাবেন-
ঢাকা থেকে পঞ্চগড় কিংবা তেঁতুলিয়া অথবা বাংলাবান্ধায় সরাসরি দূরপাল্লার
(দিবারাত্রি) বাস রয়েছে। রাজধানী থেকে সরাসরি তেঁতুলিয়ায় যাওয়ার একাধিক পরিবহন
রয়েছে। এছাড়া ঢাকা থেকে বিমানে নীলফামারীর সৈয়দপুর হয়ে বাস, মাইক্রোবাস বা
প্রাইভেট কারে চড়েও তেঁতুলিয়া যাওয়া যায়। ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে
স্টেশন থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা বা দ্রুতযান এক্সপ্রেসে
করে সরাসরি পঞ্চগড় নামতে পারবেন। যাত্রাপথে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ও ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা
খরচ পড়বে।