ঘুরে আসুন মহালছড়ির ধুমনিঘাট থেকে

Share on Facebook

খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলা শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে পাহাড়বেষ্টিত দুর্গম এলাকা ধুমনীঘাট এককথায় অপরূপ। চারদিকে জঙ্গল, পাহাড়, পাথরের বুক চিরে প্রবাহিত ঝরনা, সবুজাভ গাছপালার মাঝে পাখির কলকাকলি – সবই পর্যটকদের কাছে উপভোগ্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে এর রূপবৈচিত্র্যের কথা ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে এই স্পটের জনপ্রিয়তা এখন বাড়ছে।

পুরো শীতকালে ধুমনীঘাট পর্যটন স্পট হিসেবে সরব থাকে। স্থানীয়দের দাবি, রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার
জন্য পর্যটকরা এখানে এসে মুগ্ধ হন। ধুমনীঘাট এতই দুর্গম যে, ভ্রমণপিপাসুদের
মধ্যে অন্যরকম আকর্ষণ কাজ করে। দুর্গম ধুমনীঘাট যেকোনও পর্যটক বিশেষ করে
রোমাঞ্চপ্রেমীদের মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। এখানে যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাট ও
প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন হলে পর্যটন খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশাবাদী
স্থানীয়রা।

গ্রামপ্রধান কর্মচরণ
ত্রিপুরা বলেন, ‘এলাকাটি অত্যন্ত সুন্দর। পর্যটন স্পট হিসেবে এখানে যাতায়াতযোগ্য রাস্তা
নির্মাণ ও অবকাঠামোর উন্নয়ন হলে পুরো এলাকায় ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’

বিভিন্ন
কারণে ধুমনীঘাট ইতিহাসের সাক্ষী। কথিত আছে– রাম,
সীতা ও লক্ষ্মণের বনবাসকালীন একটি অংশ কেটেছিল ধুমনীঘাটে।
স্থানীয়দের মতে, পাথরের ওপরে এখনও সীতার পায়ের ছাপ,
রাম ও লক্ষ্মণের বসার পাথর, শিবলিঙ্গসহ
বিভিন্ন প্রাকৃতিক স্থাপনা দেখা যায়।

প্রচলিত আছে, একসময় গুরুত্বপূর্ণ
দিবসগুলোতে ধুমনীঘাটে ধর্মীয় কীর্তনসহ আরাধনা চলতো। স্থানীয় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীসহ
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিনে এখানে এসে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা
সম্পন্ন করেন। এখনও তাদের পূজা-অর্চনা আর গান-বাজনা হয়ে থাকে।

ধুমনীঘাট এলাকাবাসী
সত্য কুমার চাকমা বলেন, ‘ধুমনীঘাট হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিশেষ করে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর কাছে খুবই
মর্যাদাপূর্ণ স্থান। এখানে রাম, লক্ষ্মণ ও সীতার আসন,
পদচিহ্নসহ অনেক নিদর্শন রয়েছে। এখনও অনেক ভক্ত এগুলোর পূজা করে।’

মহালছড়ি উপজেলার পর্যটন স্পটগুলোর উন্নয়ন হলে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য একসঙ্গে উপভোগের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
ধুমনীঘাটকে পর্যটনবান্ধব করে তুলতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি নিরাপত্তা
ব্যবস্থা জোরদার করতে উপজেলা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা অনুপ মহাজন মনে করেন,
পাহাড়-পাথর-ঝরনার এমন অপূর্ব সম্মিলন ধুমনীঘাট ছাড়া কোথাও মেলে না।
তিনি রাস্তার উন্নয়নের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

চলমান
সিন্ধুকছড়ি-মহালছড়ি রাস্তার কাজ হয়ে গেলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে
মহালছড়ি উপজেলা প্রশাসন। তখন জায়গাটিকে ঘিরে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে
আশা করা হচ্ছে।

মহালছড়ি উপজেলা
নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রিয়াঙ্গা দত্ত বলেন, ‘সিন্দুকছড়ি-মহালছড়ি রাস্তা সংস্কারের কাজ
শেষ হলে ধুমনীঘাট স্পটে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফলে একদিকে
পর্যটকরা যেমন আনন্দ পাবেন, তেমনই এলাকাবাসীর আর্থিক সচ্ছলতা
আসবে।’

পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে ইউএনও আশ্বাস দেন যে, ‘পর্যটন
মন্ত্রণালয়ের কাছে আমরা ধুমনীঘাটের ছবি ও বিস্তারিত বর্ণনাসহ বিবরণ পাঠিয়ে দেবো।
এরপর মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নয়ন কাজে হাত দেবো। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা
ব্যবস্থা রাখার দিকেও নজর দেওয়া হবে।’

Leave a Reply