কেন তুলে দিতে হয় বিমানের উইন্ডো শেড?
Tweet
আপনি
যদি উড়োজাহাজে ভ্রমণ করে থাকেন তবে নিশ্চই বিমানসেবিকাদেরকে (এয়ারহোস্টেস) বিমানের টেক অফ (উড্ডয়ন) ও
ল্যান্ডিংয়ের (অবতরণ) সময়ে উইন্ডো খোলা রাখবার অবুরোধ করতে শুনেছেন। বিমানে সফর
করলে শেডের (জানালার পর্দা) বিষয়টি অবশ্যই আপনার পরিচিত। তবে বিমানসেবিকাদের এমন অনুরোধে
যাত্রীদের মধ্যে বিরক্তও হন অনেকেই। তবুও অনুরোধ মেনে নিয়ে বিমানের উইন্ডো শেড বা
জানালার কাঁচের ওপর থাকা ঢাকনা তুলে দেন সবাই।
কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন বিমানসেবিকারা এমন অনুরোধ কেন
করেন? যদি এর কারণ না জানা থাকে, তবে জেনে নিন ছয় কারণ-
১. টেক অফ ও ল্যান্ডিংয়ের
সময় বিমানের জানলার শেড খোলা রাখলে আপনি যেকোনো ইমার্জেন্সি বা বিপদের সময় বাইরে
পরিবেশটা দেখতে পারবেন। এ কারণেই বিমানের সেবিকারা আপনাকে জানালার পর্দা খুলে
রাখতে বলেন। তবে আপনার ফ্লাইটটি দিনে বেলায় হয়, তাহলে জানালার পর্দা না উঠালেও সমস্যা নেই।
কিন্তু যদি ফ্লাইটটি রাতের হয় তবে অবশ্যই বিমানের সেবিকার কথা আপনার শোনা উচিত।
২. জানলার শেড
খোলা রাখলে কোনো বিপদ ঘটলে আপনি ও বিমানসেবিকারা বিমান থেকে বাইরের পরিস্থিতি দেখে
সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কোন দরজা দিয়ে যাত্রীদের বের করা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ হবে।
জানলা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকলে বিপদের সময় খুব অসুবিধায় পড়তে হবে। শুধু তাই নয়, আপদকালীন সময় বাইরে
থেকেও প্লেনের ভিতরটা ভালোভাবে দেখতে পাওয়া জন্য জানালার শেড খোলা থাকা দরকার। এতে
উদ্ধার কাজ পরিচালনা করতে সুবিধা হয়।
৩. বিমানের
বাইরে কোনো বিপদ দেখলে যেন যাত্রীরা সেটা সঙ্গে সঙ্গে কেবিন ক্রুদের জানাতে পারেন
সেজন্য জানলার শেড খোলা রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়। অনেক সময়ই দেখা যায় ইঞ্জিনে
আগুন বা ইঞ্জিন ড্রপ অফের মতো সমস্যাগুলো যাত্রীদের চোখেই আগে পড়ে। উইন্ডো শেড
বন্ধ থাকলে সেটা বোঝা যাবে না। তাই জানলার শেড খোলা রাখতে বলা হয়।
৪. কোনো কারণে
টেক অফ ও ল্যান্ডিংয়ের সময় উড়োজাহাজের ভিতরের আলো বন্ধ হয়ে যেতেই পারে। তাই উইন্ডো
শেড খোলা রাখলে বাইরের আলো এসে প্লেনের ভিতরের অন্ধকারভাবটা কিছুটা কমিয়ে দিতে
সাহায্য করে।
৫. ইমার্জেন্সি
বা বিপদের সময় জানলা দিয়ে কেবিনক্রু বা বিমানসেবিকারা বিমানটির অবস্থান ও গতিবিধি
বুঝতে পারেন। বিমানটি কোনো দুর্ঘটনার শিকার হলে যদি জানালা খোলা থাকে তবে উদ্ধার
কাজ পরিচালনা করা সহজ হয়।
৬. টেক অফ ও
ল্যান্ডিংয়ের সময় উড়োজাহাজের জানালার শেড খোলা থাকলে যাত্রীদের মধ্যে উদ্বেগ
অনেকটা কম হয়। এ কারণে উড়োজাহাজের জানালার শেড খোলা রাখার পরামর্শ দেন বিমানের
সেবিকারা।
উড়োজাহাজে
বিপদের সময় উপরে আলোচিত ছয় ফর্মুলা কি সত্যিই কাজ করে?
এমন
প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে লোনলি প্ল্যানেট ডট কম। জবাবে ওয়েবসাইটটি জানিয়েছে,
বিমানের
সেবিকাদের নিয়োগ দেওয়ার পর তাঁদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। উড়োজাহাজ
কখনো দুর্ঘটনার শিকার হলে যেন যাত্রীদের মাত্র ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে বাইরে বের করে
আনতে পারেন ওই প্রশিক্ষণে তা শেখানো হয়। শুধু কেবিনক্রু না,
বিমানের
সব জানালাও এমনভাবে নকশা করা হয় যাতে আক্ষরিক অর্থেই যাত্রীদের ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে
বাইরে বের করে আনা সম্ভব হয়। ওই প্রশিক্ষণে বিমানের সেবিকাদের
আরেকটা জিনিস শেখানো হয়, আর তা হল যাত্রীদের সঙ্গে সহজ থাকা।
বিমানে যাত্রীদের তাঁরা বলে রাখেন, জানালা দিয়ে অস্বাভাবিক কিছু যেমন—
আগুন
কিংবা ধোঁয়া দেখা মাত্রই যেন বিমান সেবিকাদেরকে বিষয়টি অবিহিত করেন।