রহস্যে ঘেরা খোয়া সাগর দীঘি দেখে আসুন এই হাড়কাঁপানো শীতে

Share on Facebook

২২ একর জমিজুড়ে
দীঘিটির সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর। চারপাশে হাঁটার পথ। শীতকালে দীঘির এক পাড় থেকে অন্য
পাড়ে কুয়াশার জন্য কিছুই দেখা যায় না। কুয়াশাকে আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় খোয়া। দীঘিটি
দেখতে সাগরের মতোই বিশাল। তাই এর নাম ‘খোয়া সাগর দীঘি’। লক্ষ্মীপুর
শহরের অদূরে দালাল বাজারের কাছে এটি অবস্থিত। দালাল বাজারকে জেলার উপশহরও বলা হয়।

প্রতিদিন বিকালে
ভ্রমণপ্রেমীদের ভিড়ে মুখর থাকে খোয়া সাগর দীঘির পাড়। খোলা আকাশের নিচে মুক্ত
প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকতে জেলা শহর থেকে বিভিন্ন বয়সীরা আসেন এখানে। দীঘির জল
ছুঁয়ে আসা কোমল হাওয়া ছুঁয়ে যায় তাদের মন। ভ্রমণপিপাসুদের ছায়া হিসেবে কাজ করে বেশকিছু
কড়ই গাছ।

খোয়া সাগর দীঘিকে
ঘিরে ইতোমধ্যে পর্যটন মন্ত্রণালয় বিশেষ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। একইসঙ্গে দীঘিকে ঘিরে
পর্যটনের উন্নয়নে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। দীঘির পাড়ে গেলে কিছু পরিবর্তন চোখে পড়ে এখন।
পর্যটকদের চলাচলের জন্য ইট দিয়ে রাস্তা নির্মাণের পাশাপাশি তাদের বসার ব্যবস্থাও
করা হয়েছে। রাতে এখানে গল্প জমে ল্যাম্পপোস্টের আলোয়। দীঘির একপাশে মসজিদ। দিঘির
সিঁড়িতে পা রেখে স্বচ্ছ জলে হাত-মুখ ধুয়ে নেন কেউ কেউ। কেউবা সেরে নেন গোসলও।

খোয়া সাগর দীঘির
সঙ্গে মিশে আছে এক রূপকথার গল্প। একবার এক বর তার নববধূকে নিয়ে দীঘির পাড় দিয়ে
যাচ্ছিলেন। তখন বরের পানির পিপাসা হলে যাত্রাবিরতি টেনে দীঘিতে নেমে পানি পান
করেন। নববধূও পানি পানের জন্য নেমেছিলেন। কিন্তু নববধূ অঞ্জলি ভরে পানি পান করতে
গেলে তার পা দুটি ধরে কে যেন নিচের দিকে টেনে নিয়ে যায়। ওই বধূ আর ফিরে আসেননি।
সেই স্থানে গভীর গর্ত হয়ে আছে। শুষ্ক মৌসুমে প্রচণ্ড খরায় দীঘিটি শুকিয়ে গেলেও ওই
জায়গাটি শুকায় না কোনোভাবেই!

লক্ষ্মীপুর জেলার
ইতিহাস, ঐতিহ্য
ও তথ্যকোষ সমৃদ্ধ গ্রন্থ ‘লক্ষ্মীপুর ডায়েরি’ থেকে জানা যায়, দীঘিটি খনন করা হয় ২০০ বছর আগে। মূলত
চারপাশের এলাকার মাটি ভরাট ও মানুষের ব্যবহার্য পানি সংরক্ষণের প্রয়োজনে এই উদ্যোগ
নেন তৎকালীন রাজা জমিদার ব্রজবল্লভ রায়।

যেভাবে যাবেন
ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর স্টেশন যেতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি অথবা অটোরিকশায় দালাল বাজার নামলেই পূর্ব পাশে খোয়া সাগর দীঘি।নদীপথে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে চাঁদপুর পৌঁছাতে হবে। এরপর রায়পুর। তারপর সিএনজিতে উঠে লক্ষীপুরের দালাল বাজার। লঞ্চে খরচ হবে যাওয়া-আসা ৫৮০ টাকা। আর বাসে খরচ পড়বে ৮২০ টাকা।

সতর্কতা
দীঘিটি যেহেতু বিশাল আকৃতির, তাই এর বিস্তৃতি অনেক গভীর। সেক্ষেত্রে দীঘিতে নেমে বেশি সময় ধরে গোসল করা এবং অপ্রয়োজনে বেশি সময় কাটানো বিপদের কারণ হতে পারে।
দীঘিতে মাঝে মধ্যে সাপ চোখে পড়েছে। সেক্ষেত্রে একটু সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
এছাড়াও দীঘির পাড়ের সৌন্দর্য নষ্ট করা চিপস, বিস্কুটের প্যাকেট যত্রতত্র না ছুড়ে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন। আবর্জনা রাখার জন্য ছোট আকারের কিছু ডাস্টবিনের ব্যবস্থা আছে।

Leave a Reply