সংকটে থাইল্যান্ড পর্যটন
Tweet
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একমাত্র দেশ থাইল্যান্ড যা যুদ্ধকালীন
সময় ব্যতীত কখনো কোনো বিদেশী
শক্তির নিয়ন্ত্রণে ছিল না। ১৭৮২ সাল থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত দেশটিতে পরম
রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত থাকলেও ১৯৩২ সালে সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে
প্রবেশ করে দেশটি। উল্লেখযোগ্য কোনো রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত ছাড়াই তখন থেকে আজ
পর্যন্ত বহু সামরিক ও বেসামরিক সরকার দেশটি শাসন করেছে এবং একই সাথে
উন্নয়নের চাকাও সচল রেখেছে।
থাইল্যান্ড মূলত কৃষিপ্রধান দেশ হলেও পর্যটন প্রসারের সাথে
সাথে উনিশ শতকের ৮০ দশক থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে দ্রুত। ক্রমবর্ধমান পর্যটন
প্রচার ও প্রসারে থাইল্যান্ড তার
প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জন করেছে খুবই অল্প সময়ে। তারই
ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে দেশটির জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান
ছিলো সর্বোচ্চ, শতকরা ১৮ শতাংশ। আশা করা যাচ্ছিলো যে ২০২০
সালে এই জিডিপি বেড়ে পৌছাবে ২০.২ শতাংশে। এবং ধারণা করা হচ্ছিলো যে ২০৩০ সাল নাগাত
থাইল্যান্ডের মোট জিডিপির শতরা ৩০ শতাংশ আসবে পর্যটনশিল্প থেকে।
থাইল্যান্ডে সারাবিশ্ব থেকে পর্যটক ভ্রমণ করতে আসলেও
প্রতিবেশি দেশ চায়না থেকেই পর্যটক আসতো সবচেয়ে বেশি। দেশটিতে আগত মোট বিদেশি পর্যটকের মধ্যে বেশি
অর্ধেক সংখ্যকই আসতো চীন থেকে। বছরে প্রায় ২.২ মিলিয়ন। দেশটিতে সবচেয়ে বেশি
ভ্রমণ করতে যাওয়া পর্যটকের দেশের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে মালয়েশিয়া ও তৃতীয় স্থানে আছে
রাশিয়া। গতবছর ট্যুর বোটে ঘটে
যাওয়া একটি দুর্ঘটনায় ৪৭ জন চীনা নাগরিক প্রাণ হারালে সেই দেশ থেকে
থাইল্যান্ডগামী পর্যটকের সংখ্যা কমতে থাকে আশংকাজনকভাবে। পরবর্তীতে তারই প্রভাব
পড়ে থাইল্যান্ডের অর্থনীতিতে।
যদিও সেই মন্দা কাটিয়ে উঠতে থাইল্যান্ড এখন নজর দিচ্ছে ইন্ডিয়ার পর্যটন
মার্কেটে। তারা ইন্ডিয়ান পর্যটকদেরকে আকর্ষণ করতে ভিসা সুবিধাসহ নানা রকম সুবিধা
দেওয়ার কথা ভাবছে।
অতিরিক্ত পর্যটকের চাপ থেকে ফি-ফি লেহ কোরাল দ্বীপটিকে
রক্ষা করার জন্য মাত্র বছর দেড়েক
আগেই সেখানে পর্যটক যাওয়া নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তারা আশাবাদী যে দ্বীপটির
প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার করবার পর ২০২১ সালে আবারও চালু করা হবে দ্বীপটিকে।
তবে বর্তমানে পর্যটক সংকটে
ফুকেটের মতো জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যেগুলোতেও বেহাল দশা। ভরা মৌসুমেই অনেক হোটেল
রুম থাকছে অবিকৃত। পর্যটক আকর্ষণ করতে হোটেলগুলোও দিচ্ছে বিশাল মূল্যছাড়।
থাইল্যান্ড পর্যটনের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত বড় কোনো ধাক্কার মুখোমুখি হয়নি দেশটি। উন্নয়নের চাকা মসৃণভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা ও বিভিন্ন শ্লোগান ব্যবহার করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করলেও নতুন এই চীনা পর্যটক সংকট তারা কীভাবে কাটিয়ে ওঠে সেটাই দেখার বিষয়।