২০১৯ সালে বিশ্ব পর্যটনে নাটকীয় ৩ ঘটনা
Tweet
বিশ্ব রাজনীতি ও
আবহাওয়ার সাথে সাথেই পর্যটন ক্ষেত্রেও ২০১৯ সালে ঘটেছে নাটকীয় সব ঘটনা, যার
প্রেক্ষিতে আমূলে পালটে গিয়েছে বিশ্ব পর্যটনের বর্তমান ও ভবিষ্যত। অসংখ্য
পরিবর্তনের মাঝে সবচাইতে নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে ৩ টি।
থমাস কুকের পতন ও
পুনঃরুত্থান
আধুনিক
বিশ্ব পর্যটনশিল্পের ইতিহাসে সবচাইতে পুরনো ও বিখ্যাত নাম হচ্ছে থমাস কুক। ১৭৮ বছরের সেপ্টেম্বর
মাসে নিজেদেরকে দেউলিয়া ঘোষনা করে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্রিটিশ কোম্পানি থমাস কুক আবারো
উঠে দাঁড়ায় নভেম্বর মাসেই। তবে সেটা সম্ভব হয় চীনের যৌথ কোম্পানি ফসুন ১৪.২ মিলিয়ন
মার্কিন ডলারে থমাস কুককে কিনে নেয়ায়। ফলে বিখ্যাত এই ব্রিটিশ কোম্পানির বিশ্বজুড়ে
ছড়িয়ে থাকা খ্যাতিমান হোটেল কাসা কুক ও কুক’স ক্লাবসহ
সমস্ত ট্রাভেল এজেন্সি, রেস্টুরেন্ট, ট্রেডমার্ক, ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমে থাকা অ্যাকাউন্টের মালিকানা চলে যায় চীনা ফোসুনের কাছে।
দেশে চলমান অর্থনৈতিক
মন্দার কারনে বেশ কিছু সময় ধরেই লোকসানের মুখে চলছিলো পর্যটনশিল্পের অগ্রদূত
হিসেবে পরিচিত এই ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানটি। ব্যক্তিগত বিনিয়গকারীদের ২৫ কোটি মার্কিন
ডলার রক্ষা করতে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে নিজেদেরকে দেউলিয়া ঘোষণা করে
এজেন্সিটি। ফলে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা প্রায় বাইশ হাজার কর্মচারী চাকুরী
হারায়। এছাড়াও, উক্ত সময়ে থমাস কুকের মাধ্যমে ঘুরতে বের হওয়া ১.৪ মিলিয়ন পর্যটককেও
দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছিলো দেশটির সরকার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এটিই
ছিলো ব্রিটেনের সবচাইতে বড় প্রত্যাবাসন।
থমাস কুকের সবচাইতে
বড় শেয়ারের মালিক ছিলো হংকংয়ের এই ব্যবসায়িক জোটের প্রধান কোম্পানি ফোসুন আগে
থেকেই। ফোসুন ফ্রান্সের বিখ্যাত ক্লাব মেড জয়েন্টেরও মালিক। থমাস কুক স্থায়ীভাবে
বন্ধ হয়ে যাবার আগেই চীনা এই কোম্পানি শেষ রক্ষা করতে এগিয়ে আসে। কিনে নেয়
প্রতিষ্ঠানটির নাম এবং একইসাথে উদ্ধার করে কোম্পানির সাথে জড়িত থাকা ব্যবসায়ীদেরকে।
আর এর ফলে চাইনিজ
আউটবাউন্ড ট্যুরিজমেরও বেড়ে উঠবার সম্ভাবনা বেড়ে যায় আগের চাইতে অনেক বেশি।
এছাড়াও, ভিং গ্রুপ
নামে পরিচিত থমাস কুকের স্কেণ্ডিনেভিয়ান ব্যবসায়ের অংশ কিনে নিয়েছে নরওয়ের
কোটিপতি ব্যবসায়ী পিটার স্টোরডালেন।
কালের গর্ভে হারিয়েছে ২৩ এয়ারলাইন্স
ইউরোপ ও মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় এয়ারলাইন্সগুলো লাভের অংক গুণে যাচ্ছিলো যখন, ঠিক তখনই দিনকেদিন
খারাপ হচ্ছিলো ছোট ছোট এয়ারলাইন্সগুলোর অবস্থা। দেউলিয়া হয়ে এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে
গেছে ২৩ টি এয়ারলাইন্স গত ২০১৯ সালে। এর মাঝে সবচাইতে বেশি আলাপচারীতায় উঠে
এসেছিলো ভারতের জেট এয়ারওয়েজ ও আইসল্যান্ডের ওয়াও এয়ারলাইন্সের দেউলিয়া হবার ঘটনা।
তবে মানুষকে সবচাইতে বেশি প্রভাবিত করেছিলো এক্সএল এয়ারওয়েজ ও আইগল আজুরের দেউলিয়া
হবার খবর।
বর্তমানে দেউলিয়া হবার
রাস্তায় আছে বিভিন্ন দেশীয় আরও কিছু ছোট এয়ারলাইন্স। এর মাঝে আছে ইউরোপের
এয়ারফ্রান্স-কেএলএম, থাইল্যান্ডের থাই এয়ারওয়েজ প্রভৃতি। এছাড়াও, গত কয়েক বছর ধরেই
লোকসানের কথা বলে আসছে ইতালীয় বিমানসংস্থা অ্যালিটালিয়া। ২০২০ সালের মে মাস
পর্যন্তই সময় রয়েছে এর হাতে উঠে দাঁড়াবার জন্য।
এমনকি চলতি বছরেই বন্ধ
হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ফ্লাইবিয়েরও। অথচ একটা সময়ে এই ফ্লাইবিই
ছিলো আভ্যন্তরীন ফ্লাইটে ইউরোপের সবচাইতে বড় বেসরকারী বিমানসংস্থা। এই
এয়ারলাইন্সটি বন্ধ হয়ে গেলে চাকরী হারাবে প্রায় ২ হাজার কর্মচারী।
১ হাজার কর্মচারীর চাকরি
হারাবার সম্ভাবনা বহাল রেখে এই বছরেই দেউলিয়া হবার ঝুঁকিতে আছে আফ্রিকান এয়ারলাইন্স
সাউথ আফ্রিকান এয়ারওয়েজ। গত কয়েক বছরে তাদের লোকসান গুণতে হয়েছে প্রায় ৫৭০ মিলিয়ন
ইউরো।
এছাড়াও, ২০২১ সালে দেউলিয়া
হবার ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে নরওয়েইয়ান এয়ারলাইন্স। কেবল গতবছরেই তাদের লোকসান হয়েছে
৩ বিলিয়ন ইউরো। অবশ্য বর্তমানে ১০০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে নতুন করে উঠে দাঁড়াবার
পরিকল্পনা করেছে তারা।
বোয়িং সংকট
২০১৯ সালের মার্চে থেকে উৎপাদন
বন্ধ হয়ে আছে আমেরিকান বোয়িং কোম্পানির ৭৩৭ ম্যাক্স এয়ারক্রাফট। এয়ারবাসের সাথে
প্রতিযোগীতা করে দ্রুত তৈরী করে বাজারে ছাড়া ৭৩৭ ম্যাক্স হয়ে ওঠে ঝুঁকিপূর্ণ।
২০১৮ সালের ২৯শে অক্টোবর জাকার্তা থেকে উড্ডয়নের ১৩ মিনিট পর লায়ন এয়ারের একটি ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজ
বিধ্বস্তের ঘটনায় ১৮৯ জনের প্রাণহানি হয় এবং ২০১৯ সালের ১০ই মার্চ ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ৭৩৭ ম্যাক্স বিধ্বস্তের ঘটনায় ১৫৭ জন
নিহত হয়। পাঁচ
মাসের ব্যবধানে
দুটি দুর্ঘটনার কারণে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৪৬ জন। এরপর মডেল নিয়ে তদন্ত করতে যাত্রীসেবা
থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স। গ্রাউন্ডিংয়ে নেয়া হয় বিমানগুলোকে।
বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স গ্রাউন্ডিংয়ের ফলে এক বছরে
শতকোটি ডলার লোকসান গুনেছে বিভিন্ন এয়ারলাইন সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম
ম্যাক্স ব্যবহারকারী সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্স বলছে, গ্রাউন্ডিংয়ের
ফলে গত প্রান্তিকে তাদের লোকসান হয়েছে ২১ কোটি ডলার। ইন্দোনেশিয়া ও ইথিওপিয়ায়
বিমান দুর্ঘটনার পর গ্রাউন্ডিং শুরু হওয়ার সময় সাউথওয়েস্টের হাতে ছিলো ৩৪টি ম্যাক্স বিমান; যা যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো
এয়ারলাইন্সের
চেয়ে বেশি।
৭৩৭ ম্যাক্সের
সফটওয়্যারের ওপরে প্রায় ৯০০টির মতো পরীক্ষা চালানো হয় আবারও বিমান শিল্পে ফিরে
আসবার আশাতেই। পরবর্তীতে অনেক নাটকীয় ঘটনার পরে স্থায়ীভাবে বোয়িং এয়ারক্রাফট ৭৩৭
ম্যাক্সের উৎপাদন বন্ধের সরকারী ঘোষনা দেয়া হয় গত ডিসেম্বরে মাসে।