যদি থাকে ঢাকার খুবকাছেই প্রকৃতির মাঝে রিসোর্টের সন্ধান
Tweet
নাগরিক এই ইটপাথরের অট্টালিকা আর কোলাহল জানজটের শব্দ থেকে নিজেকে একটু ছুটি দিয়ে দূরে কোথাও নিরিবিলি ঘরে আসতে নগরবাসির মন কেমন যেন করে। ছুটে চলা জীবনে হাঁপিয়ে ওঠা ঢাকাবাসির মনের কোনে একটাই চিন্তা কখন একটি ছুটি পাব, কখন প্রকৃতির স্পর্শে যাবো। সামান্য অবসরে হারিয়ে যেতে চায় সবুজ আর নীলের মাঝে। রাজধানীবাসীর এ চাহিদার মাথায় রেখে ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলোতে বেশকিছু রিসোর্টও গড়ে উঠেছে। কিন্তু দূরত্ব আর যানজটের ঝক্কিঝামেলা সেই আকুলতা পূরণে এক বড় বাধা।
তবে সুখবর— ঢাকার একদম কাছেই গড়ে ওঠা শাহ মেরিন রিসোর্ট আপনাকে সেই ঝামেলা থেকেও মুক্তি দিয়ে নিয়ে যেতে পারে প্রকৃতির খুব কাছে।
গাবতলীর আমিনবাজার ব্রিজ থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরত্বে ধলেশ্বরী নদীর কোলে গড়ে উঠেছে এই রিসোর্ট। প্রকৃতির ছায়াতলে আধুনিকতার মিশেলের এই রিসোর্টে যেতে সময় লাগবে মাত্র ২৫ মিনিট। মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার জমিরতা ইউনিয়নে ৩০০ শতাংশ জায়গার উপর গড়ে উঠেছে শাহ মেরিন রিসোর্ট।
স্থানীয়ভাবে এই এলাকার নাম বকচর। সিংগাইর ব্রিজ পার হয়ে রিসোর্টের সংযোগ সড়কে প্রবেশ করতেই এই নামকরণের সার্থকতা চোখে পড়ে। দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের দুই পাশে ধান ও শাকসবজির ফসলি জমি। অবারিত এসব জমিতে যেন রোদ পোহাচ্ছে শ্বেত শুভ্র বকের পাল। এছাড়াও চোখে পড়বে গ্রামীণ ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ মহিষ টানা গাড়ি। স্থানীয় কৃষকেরা এসব গাড়িতে করেই ফসল ও মানুষ পরিবহন করেন।
সড়ক থেকেই নজরে আসবে জাহাজের নকশায় গড়ে উঠতে থাকা রিসোর্ট ভবন। রিসোর্টের পুরো কাজ শেষ হলে বিশাল এক ক্রুজ জাহাজের রূপ পাবে রিসোর্টটি। আর রাজকীয় গেট পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই মনে হবে যেন নদীর পাশেই অপেক্ষা করছে কোনো জাহাজ। যাত্রী উঠলেই ছেড়ে যাবে দূর অজানার উদ্দেশে।
শাহ মেরিন রিসোর্ট থেকে ধলেশ্বরীর দৃশ্যপটতবে এই রিসোর্টে এসে মোটেও নিরিবিলি পরিবেশ পাবেন না আপনি। বিভিন্ন ধরনের পাখির ডাক মাতিয়ে রাখবে সারাক্ষণ! রিসোর্টের চতুর্দিকে থাকা গাছগুলোতে পাখির কিচিরমিচির যেন থামতেই চায় না। আর নদীর পানির কুলকুল শব্দ অথবা দূর থেকে আসা ট্রলার-স্টিমারের আওয়াজ নদীমাতৃক বাংলাদেশের সংস্পর্শে নিয়ে যাবে আপনাকে। চাইলে অবশ্য নদীর পাড়ে বসে মন জুড়ানো বাতাসের সাথে চুমুক দিতে পারেন চায়ের কাপে। অথবা রিসোর্টের ট্রলারে করে বেরিয়ে পড়তে পারেন নদীর বুকে ‘ট্রলার ক্রুজে’।
রিসোর্টে অবস্থানকালে থাকা-খাওয়া নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না মোটেও। রিসোর্টের রুমগুলো এমনভাবে বানানো হয়েছে যেন, রুমে বসেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন এখানকার অতিথিরা। রুমের একপাশে থাকা পর্দা শুধু কষ্ট করে সরিয়ে দিলেই দৃশ্যপটে ভেসে উঠবে নদীর নীল আর গ্রামীণ সবুজের ক্যানভাস। আরেকটু কষ্ট করে কাচের গ্লাস খুলে দিলে গ্রামীণ সুবাস আর বাতাসে ভরে যাবে রুমগুলো।
শাহ মেরিন রিসোর্টে শাকসবজি ও ফসলের ক্ষেতআর খাওয়ার জন্য আশেপাশের ফসলি ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা সতেজ খাদ্যশস্য দিয়ে সাজানো হয় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা। আছে মাছ-মাংসও। রিসোর্টের ভেতরে ছোট একটি পুকুরে চাষ করা হচ্ছে মাছ। রিসোর্টের বাইরে গ্রামের জমিগুলোতেও বেড়াতে যেতে পারেন। অথবা রিসোর্টে থাকা বরই গাছ থেকে মিষ্টি বরইও পেড়ে খেতে পারেন। আম খেতে হলে যেতে হবে গ্রীষ্ম মৌসুমে। এখন আমে গাছে কাছে সবে মুকুল ধরেছে।
প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গেলেও চাইলে আধুনিকতার ছোঁয়াও পাওয়া যাবে রিসোর্টটিতে। মোবাইল নেটওয়ার্ক, ওয়াইফাই ইন্টারনেট, সুইমিং পুলের পাশাপাশি রাতে বারবিকিউ-এর ব্যবস্থাও আছে শাহ মেরিন রিসোর্টে।
রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, ডে-লং অথবা নাইট-স্টে দুইভাবেই এখানে অবস্থান করতে পারবেন অতিথিরা। রিসোর্টের রুমগুলোতে প্রায় ৬০ জন অতিথির ধারণক্ষমতা আছে। তবে দিনভর কর্পোরেট ইভেন্ট, পিকনিক অথবা গেট টুগেদারের জন্য প্রায় ১ হাজার অতিথির ধারণক্ষমতা আছে শাহ মেরিন রিসোর্টে।