যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় মিয়ানমার, নাইজেরিয়াসহ ৬ দেশ

Share on Facebook

মিয়ানমার, নাইজেরিয়াসহ আরও ছয়টি দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্যে আফ্রিকার জনবহুল দেশ নাইজেরিয়াসহ তিনটিই মুসলিমপ্রধান দেশ। শুক্রবার এ বিধিনিষেধ দিয়ে বিস্তৃত ভিসা নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে নাইজেরিয়া, ইরিত্রিয়া, মিয়ানমার, কিরগিজস্তান, সুদান ও তানজানিয়ার নাগরিকদের ওপর। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি শ্যাড ওলফ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ২০১৫ সালে নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করা হবে। পরে তা বাস্তবায়নও করেছিলেন। ২০২০ সালের নির্বাচন সামনে রেখেও তিনি একই ইস্যু তুলছেন বলে অভিযোগ সমালোচকদের। খবর বিবিসি ও এএফপির।

যুক্তরাষ্ট্র

নতুন নিষেধাজ্ঞায় ইরিত্রিয়া, নাইজেরিয়া, মিয়ানমার ও কিরগিজস্তানের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ কমে আসবে। সুদান ও তানজানিয়ার নাগরিকদের জন্য বন্ধ হবে ‘ডাইভারসিটি ভিসা’ (ডিভি লটারি)। যুক্তরাষ্ট্রে অল্পসংখ্যক অভিবাসী থাকা দেশের নাগরিকদের জন্য লটারির ভিত্তিতে এই ভিসা দেয়া হয়। তবে এই নীতিও পছন্দ নয় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। তিনি অনেকবারই এই নিয়মের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তবে দেশ ছয়টির নাগরিকদের ভ্রমণ ভিসা, শিক্ষার্থী ও ব্যবসা সংশ্লিষ্ট ভিসা আগের মতোই চালু থাকবে। অর্থাৎ পর্যটক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের সুযোগ পাবেন এসব দেশের নাগরিকরা। নিরাপত্তা ও তথ্য ভাগাভাগি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বেঁধে দেয়া মান অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় নতুন এ ছয় দেশকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে বলে শ্যাড ওলফ জানিয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন এ নীতি ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। ইরান, উত্তর কোরিয়া, লিবিয়া, সোমালিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন ও ভেনিজুয়েলার ওপর আগের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলেও শুক্রবারের আদেশে বলা হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যুক্তরাষ্ট্র নাইজেরিয়া থেকে তুলনামূলক বেশি অভিবাসী নেয়ায় ট্রাম্পের নতুন ঘোষণায় আফ্রিকার এ দেশটিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন। নিষেধাজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত নতুন দেশগুলোর মধ্যে চারটিই আফ্রিকার। তাদের মধ্যে তিনটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। মূলত পাসপোর্ট সংক্রান্ত প্রযুক্তির আধুনিকায়ন না ঘটানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সন্দেহভাজন জঙ্গি ও অপরাধীদের বিষয়ে তথ্য ভাগাভাগি না করার কারণেই এ দেশগুলোকে ভিসা নিষেধাজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে ওলফ জানিয়েছেন। তালিকায় বেলারুশের নামও অন্তর্ভুক্ত করার কথা বিবেচনা করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় তারা বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়ায় তাদের নাম বাদ পড়ে বলে জানিয়েছেন শ্যাড ওলফ।

নতুন নিষেধাজ্ঞায় থাকা ছয়টি দেশের মধ্যে কিরগিজস্তান, নাইজেরিয়া ও সুদান মুসলিমপ্রধান। ইরিত্রিয়া, তানজানিয়া, মিয়ানমারেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিমদের বসবাস। এসব দেশের মধ্যে নাইজেরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া অভিবাসীর সংখ্যা বাকি পাঁচটি দেশের চেয়ে দিগুণ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় আট হাজার নাইজেরিয়ান নাগরিককে অভিবাসী ভিসা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। একই বছরে দেশটি দুই হাজার সুদানি, ২৯০ তানজানীয় এবং মাত্র ৩১ জন ইরিত্রিয়ার নাগরিককে ভিসা দিয়েছিল।এসব দেশের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পরিধি বা এর কারণ এখনও প্রকাশ করেনি মার্কিন প্রশাসন। তালিকাভুক্ত দেশের নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ পাবেন না। তবে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ড ও ভিসাপ্রাপ্ত এবং শরণার্থীরা এর আওতায় নাও থাকতে পারেন।
এর আগে ছয় মুসলিম দেশ– ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের ওপর ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে ট্রাম্প প্রশাসন। উত্তর কোরিয়ার নাগরিক আর ভেনিজুয়েলার সরকারি কর্মকর্তারাও রয়েছেন নিষেধাজ্ঞার আওতায়।সুইজারল্যান্ডের দাভোসে গত সপ্তাহে বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প এ কথা জানান।

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার জন্য নতুন করে বিবেচিত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আবার এসব দেশের কয়েকটি থেকে সম্প্রতি অপেক্ষাকৃত বেশিসংখ্যক শরণার্থী গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া ৩০ হাজার শরণার্থীর মধ্যে চার হাজার ৯৩২ জনই মিয়ানমারের। ২০১৭ সাল থেকে দেশটিতে বড় আকারের নিধনযজ্ঞের শিকার হয়ে আসছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। ধারণা করা হচ্ছে, মিয়ানমারের ক্ষেত্রে কয়েকজন নির্দিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও নির্দিষ্ট ধরনের ভিসা বাতিল করা হতে পারে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন যখন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে, তখন প্রেসিডেন্টের এ সংক্রান্ত ক্ষমতা কমাতে কংগ্রেসে বিল আনতে যাচ্ছে বিরোধী দল ডেমোক্র্যাট।

Leave a Reply