সিলেটের সাদা পাথর আর লালাখাল
Tweet
ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর আর জৈন্তাপুরের লালাখাল সিলেট ভ্রমণে দেবে বাড়তি আনন্দ।এমনিতে সিলেট শহর হযরত শাহজাল (রঃ), শাহপরান (রঃ)-সহ আরও অনেক মাজার দেখা মিলবে। তবে সিলেট ভ্রমণে বাড়তি পাওনা হিসেবে জুটতে পারে আশপাশের এলাকার মধ্যে ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর আর নয়ন জুড়ানো লালাখালের সৌন্দর্য। আর এই দুই জায়গায় ঘুরে এসে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন আহমেদ শাফি।
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর: সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানিগঞ্জে অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটারের পথl ভোলাগঞ্জ ধলাই নদ ধরে সীমান্তবর্তী জিরো পয়েন্ট ‘সাদা পাথর’ নামে পরিচিতl সাধারণত বর্ষাকালেই এখানে যাওয়া ভালো। কেননা তখন পানির প্রবাহ থাকে প্রচুর। তাই স্বচ্ছ ঠাণ্ডা পানিতে নেমে কাটিয়ে দেওয়া যায় ঘন্টার পর ঘন্টাl পানি আর পাথরের সখ্যতা সত্যিই আপনাকে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাবে।
আমার মতো হয়ত অনেকেই আছেন যারা কিছুটা নীরবতা পছন্দ করেন তারা চোখ বন্ধ চলে যেতে পারেন শীত মৌসুমে। একেবারেই ভিন্নরকম একটা পরিবেশ পাওয়া যাবে। নিজের মতো ঘুরে বেড়ান চারপাশ.. অতিরিক্ত মানুষের ভিড় একেবারেই পাবেন না। চারপাশটা একদম যুতসই একটা ছবির মতো। এ যেন ফটোশপে নিজের মতো সম্পাদনা করে নেওয়া একটা ব্যাপার l
যাওয়ার উপায়: সিলেট শহর থেকে বিআরটিসি বাস যায় ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত ভাড়া পরবে ৫০ টাকা। এছাড়া সিএনজি লোকাল ভাড়া ১৩০ টাকা জনপ্রতি। তবে যাওয়া আসা আর যতক্ষণ ঘুরবেন অপেক্ষা করে নিয়ে আসার জন্য রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া ৯০০ থেকে ১১০০ টাকায় পাওয়া যাবে। সময় লাগবে যানবাহন আর রাস্তার অবস্থা ভেদে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। আর ট্রলার ভাড়া প্রসাশন থেকে ঠিক করে দেওয়া আছে (৮00 টাকা দশ জনের মতো ওঠা যায়)। তবে মানুষ কম হলে অন্য কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করা গেলে ভাড়া কম পরবে। ঘাটে একটু অপেক্ষা করলেই অন্য পর্যটক পাওয়া যাবে।
লালাখাল: সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত লালাখাল। দূরত্ব সিলেট শহর থেকে প্রায় ৩৯ কিলোমিটার। লালাখালের সবচেয়ে নয়ন জুড়নো একটা দৃশ্য বিভিন্ন অংশে নীল আকাশি এবং স্বচ্ছ পানির দেখা মেলে।
এখানে অবশ্য শীতকালেই যাওয়ার উপযুক্ত সময়। কেননা ভরা বর্ষায় পানির প্রবাহ আর স্রোত বেশি থাকায় পানি অনেকটাই ঘোলাটে থাকে। আর শীত মৌসুমে গেলে পানির স্বচ্ছতা আপনাকে করবে বাকরুদ্ধ। এতটাই স্বচ্ছ যাতে পানির তলদেশ দেখে সেখানকার গভীরতাই ধারণা করতে পারবেন না।
শহুরে দূষিত বাতাস আর রুগ্ন বুড়িগঙ্গা কিংবা শীতলক্ষ্যা দেখে আমরা যারা অভ্যস্ত তারা লালাখালের এই পানি
দেখে নৌকায় বসে থাকাটা হবে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য ঘটনা। আবার কিছু জায়গায় পানির রং বদলে হয়ে যাবে; একেবারেই একটা আস্ত সুইমিং পুল। লালাখালের দুপাশে মায়াবী সুন্দর্য আর ছোট বড় পাহাড়ি ঢেউয়ের হাতছানি আপনাকে বিমোহিত রাখবে পুরোটা সময়। সঙ্গে চা বাগানে আলগোছে কাটিয়ে দিতে পারেন আরও কিছুটা সময়।
শরীরের অলসতাকে পুঁজি করে ছায়াশীতল বাগানে বিশ্রাম নিয়ে দেখতে পারেন। হয়তো জীবনের শেষের বসন্তগুলো কাটানোর জন্য এমন একটা জায়গার কথাই ভেবে রেখেছিল আপনার মন। যেভাবে যাবেন লালাখাল: সিলেট শহর থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে যাওয়া যায়। আসা-যাওয়া আর লালাখালে ঘোরার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা সব মিলিয়ে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকার মতো নেবে। তবে দরদাম করে আর ভ্রমণের সময়ের ওপর নির্ভর করে ভাড়া কিছু কম বেশি হতে পারে।
এছাড়া জাফলংগামী বাসে চড়ে কিংবা লেগুনা দিয়ে সিলেট জাফলংয়ের মধ্যবর্তী সারিঘাটে নেমে ওখানে থেকে ট্রলারে করে লালাখাল ভ্রমণ করা যায়। ভাড়া পরবে লেগুনা বা বাসে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। আর ট্রলার সারিঘাট থেকে ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত। দরদাম আর সময়ের ওপর ভাড়া কমবেশি হতে পারে।
আর সিএনজি রিজার্ভ নিলে একেবারে লালাখাল ঘাটে নিয়ে যাবে ওখানে ট্রলার ভাড়া ঘন্টায় ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকায় নেওয়া যাবে। সারিঘাট থেকেও অটোতে করে জনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকায় লালাখাল ঘাটে যেয়ে ঘণ্টা ভিত্তিতে ট্রলার ভাড়া করে ঘুরতে পারেন।
থাকার ব্যবস্থা: আসলে ভোলাগঞ্জে সিলেট শহরের মতো খুব ভালো জায়গা না থাকলেও কিছু বোর্ডিং আছে। তবে লালাখালে পাবেন নাজিমগড় রিসোর্ট আর নর্দান রিসোর্ট। দেড় ঘণ্টার দূরত্বে সিলেট শহর সেক্ষেত্রে সবাই শহরেই ফিরে আসে।
সাবধানতা: ভোলাগঞ্জে সাঁতার জানা থাকলে তুলনামুলক কম স্রোত থাকা জায়গায় আর দলের সঙ্গে থেকে লাইফ জ্যাকেট নিয়েই পানিতে নামতে হবে। লালাখালে কিছু জায়গায় চোরাবালি আছে (মাঝির ভাষ্যমতে)। তাই এই ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে l
থাকা-খাওয়া: সিলেটে ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকায় মোটামুটি ভালো হোটেলে থাকা যায়। খাবার মোটামুটি সব জায়গায়ই ভালো। তবে পানসি আর পাঁচ ভাই রেস্তোরাঁয় খেতে ভুলবেন না। সাশ্রয়ী আর স্বাদ দুটোই পাবেন।
মনে রাখবেন- ছবির মতো সুন্দর জায়গাগুলোতে যেখানে সেখানে প্লাস্টিকের বোতল, প্যাকেট, যে কোনো ময়লা ফেলে নষ্ট করবেন না। প্রয়োজনে সঙ্গে রাখুন। পরে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলুন।