সেন্টমার্টিনে ট্রলারডুবিতে নিহত ১৫, নিখোঁজ অর্ধশতাধিক, উদ্ধার ৭৩
Tweet
কামিল শিবলী
টেকনাফসহ কক্সবাজার সাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মানব পাচারের অপতৎপরতা আবার শুরু হয়েছে। ইয়াবা পাচার রোধে প্রশাসনের শাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকায় বর্তমানে কতিপয় স্থানীয় ও রোহিঙ্গ ইয়াবা কারবারিরা নেমে পড়েছে অবৈধভাবে সাগরপথে মানবপাচারে।
এরই ধারাবাহিকতায় সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে বঙ্গোপসাগরে ১৪০ জনের মতো রোহিঙ্গা বহনকারী একটি ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্তত ৭৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১১জন নারী ও ৪ জন শিশু। এছাড়া জীবিত উদ্ধারদের মধ্যে ৪৬ জন নারী, ৪ জন শিশু এবং ২১ জন পুরুষ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আরো কয়েকজন যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকায় এই মৃতদেহ এবং জীবিত উদ্ধারের সংখ্যা বাড়ার আশংকা রয়েছে।
উদ্ধারকৃত বালুখালি ক্যাম্প -১২, ব্লক এইচ ১২ রোহিঙ্গা কামাল হোসেন এর পুত্র জিয়াউর রহমান জানিয়েছেন, “দালাল ছৈয়দ আলমসহ অন্যান্য আরো কয়েকজন মিলে তাদের ১৪৮ জন রোহিঙ্গা নারী পুরুষকে প্রথমে জড়ো করে একটি আস্তানায় রাখে। তাদের মধ্যে ১০০জন মহিলা, ৩০ জন পুরুষ ও ১৮ শিশু। পরে সোমবার রাতে সমুদ্র পথে মালেশিয়া যাওয়ার কথা বলে টেকনাফের নোয়াখালীয়া পাড়া থেকে টেনে হিচড়ে ট্রলারে তুলে। ৬-৭ ঘন্টা সেন্টমার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম দুরে গিয়ে পাথরের সাথে ধাক্কা লেগে ট্রলার ডুবে যায়। তখন দালালরা পানির ট্যাংক নিয়ে নিরাপতে কূলে উঠে যায়। পরে তাদের স্থানীয় জেলেরা প্রশাসনকে খবর দিলে পরে তাদের উদ্ধার করে।
ট্রলারডুবি থেকে বেঁচে ফেরা রোহিঙ্গা নারী ইছমত আরা এমনটাই বললেন বাংলাদেশে বিয়ে করতে দেড়-দু’লাখ টাকার দরকার। কিন্তু এত টাকা পাবো কোথায়। মা নেই, বাবা নেই। মালয়েশিয়াতে পরিচিত অনেকে আছে। ভেবেছিলাম, ওখানে গিয়ে তাদের কাউকে বিয়ে করে ফেলবো। কাজ নয়, বিয়ে করতেই মালয়েশিয়া যাচ্ছিলাম।’
কোষ্ট গার্ড সেন্টমার্টিন জোনের লে. কমান্ডার সোহেল রানা জানান, ১১ ফেব্রæয়ারী (মঙ্গলবার) ভোরে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পূর্বজোনের সেন্টমার্টিন বিসিজি ক্যাম্পের একটি দল বাহারছড়া উপকূল হয়ে ছেড়ে আসা ২টি ট্রলার অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার কারণে সেন্টমার্টিন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের অদূরে দূঘর্টনার কবলে পড়ে ডুবে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে উদ্ধার অভিযানে যায়। এসময় ১টি ট্রলার ডুবে গেলেও অপর ১টি ট্রলার এবং সাগর হতে ভাসমান ১১জন নারী, ৪জন শিশুর মৃতদেহ এবং ৭০জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে জীবিত উদ্ধার করে সেন্টমার্টিন জেটিতে আনা হয়। কেউ কেউ সাঁতরে কূলে উঠে পালিয়ে গেছেন। তিনি আরো জানান, তাদের অভিযান চলমান থাকবে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, ১৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে। নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। এখানো অর্ধশতাধিক লোক নিখোঁজ রয়েছে।সেন্টমার্টিনের স্থানীয়দের কয়েকজন জানান, এখনো সাগরে লাশ ভাসছে।
কক্সবাজার টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জানান, মানব পাচারের দালাল ও জড়িতদের বিরুদ্ধে¡ পুলিশের শক্তিশালী কয়েকটি দল উপকূলীয় এলাকায় সাড়াঁশি অভিযান শুরু করেছে। এদিকে, স্থানীয় সচেতন মহেল জানান, মানব পাচার দমনে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা জোর প্রচারণা চালালেও টেকনাফ সদরের লম্বরী, হাবিরছড়া, মিঠাপানিরছড়া, বাহারছড়ার নোয়াখালী পাড়া, জুম্মাপাড়া, কচ্চপিয়া, বাঘঘোনা বাজারসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে চিহ্নিত কতিপয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তির সাথে সখ্যতা তৈরি করে এ অবৈধ কাজ করছে। শুধু তাই নয় কক্সবাজারের শহরের ৬নং ঘাট, খুরুশকুল, চৌফলন্ড, ইনানী ও হিমছড়িসহ জেলার বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে পুরাতন ও নতুন চিহ্নিত দালালরা এ কাজ করছে। তাদের তারর্গেট বর্তমানে রোহিঙ্গা সুন্দরী নারী ও পুরুষদের প্রতি। তাদের বিয়ে ও উন্নত জীবন গড়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ মানবপাচারে সক্রিয় হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরে রোহিঙ্গাদের বহনকারী ট্রলার ডুবির ঘটনায় উদ্ধার অভিযানে নেমেছে দু’টি হেলিকপ্টার। নৌবাহিনীর ডুবুরী দল, কোস্ট গার্ডে উদ্ধারকারী টিম, বিজিবি ও পুলিশসহ এছাড়া উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিয়েছে স্থানীয়রা। তিনি বলেন, দালালদের আইনের আওতায় আনতে ও রোহিঙ্গা যেন অবাধে বিচরণ করতে না পারে তার জন্য কাজ করছে সরকার।
বাংলাদেশে বিয়ে করতে দেড়-দু’লাখ টাকার দরকার। কিন্তু এত টাকা পাবো কোথায়। মা নেই, বাবা নেই। মালয়েশিয়াতে পরিচিত অনেকে আছে। ভেবেছিলাম, ওখানে গিয়ে তাদের কাউকে বিয়ে করে ফেলবো। কাজ নয়, বিয়ে করতেই মালয়েশিয়া যাচ্ছিলাম।’ ট্রলারডুবি থেকে বেঁচে ফেরা রোহিঙ্গা নারী ইছমত আরা এমনটাই বললেন।
টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ট্রলারে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছিল শামিমা সেও জানাল মালয়েশিয়াতে পরিচিত এক আত্বীয় বলেছে সে আমাকে বিয়ে করবে তাই সেখানে যাচ্ছিলাম আমার মত অনেকে বিয়ে করতেই মালয়েশিয়া যাচ্ছিল বলে জানান তারা। কিন্তু সেন্টমার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপের কাছে পৌঁছালে তাদের ট্রলারটি ডুবে যায়। এতে ১৫ জনের প্রাণহানি হলেও তিনি বেঁচে যান। সৌকতসহ ৭৩ জনকে উদ্ধার করে নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যরা সেন্টমার্টিন জেটিতে নিয়ে আসেন। সেখানেই তার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।