আকাশপথে করোনার হানা, আয় কমে অর্ধেক
Tweet
স্থল, জলপথের মতো আকাশপথেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনাভাইরাস। মধ্য আকাশ থেকে শুরু করে এর সর্বশেষ স্তরে এই ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে। এই প্রভাব থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশও। কারণ, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলোর উড়োজাহাজ চলাচল (ওভারফ্লাইং মুভমেন্ট) অর্ধেকে নেমে এসেছে। আর এ কারণে অ্যাভিয়েশন খাতে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমে গেছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলোকে নিজেদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে চলাচলের জন্য একাধিক দেশের আকাশপথ ব্যবহার করতে হয়। আকাশপথ ব্যবহারের জন্য তাই বিমান সংস্থাগুলোকে নির্দিষ্ট হারে টাকা বা ওভার ফ্লাইং চার্জ প্রদান করতে হয়। বাংলাদেশ প্রতিবছর এই খাতে প্রায় তিন শ কোটি টাকা আয় করে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে করোনাভাইরাসের কারণে বিমান চলাচল কমে গেছে। অনেক দেশ আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই বেবিচকের ওভার ফ্লাইং চার্জ থেকে আয় অর্ধেকে নেমে গেছে।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এয়ার ট্রাফিক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের আকাশপথ ব্যবহার করে প্রতিদিন সাড়ে চার শ উড়োজাহাজ চলাচল করত। গতকাল রোববার বাংলাদেশে আকাশপথে ওভারফ্লাই করেছে ২৪১টি উড়োজাহাজ।
এয়ার ট্রাফিক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রায় ১২টির মতো ফ্লাইং রুট রয়েছে। এর মধ্যে ভারতের কলকাতা-চট্টগ্রাম-মিয়ানমার, কলকাতা-সুন্দরবন-ব্যাংকক, কলকাতা-কুমিল্লা-আগরতলা, কলকাতা-রাজশাহী-গোয়াহাটি রুট রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা-রাজশাহী-কাঠমান্ডু ও দিল্লি-রাজশাহী-ঢাকা-চট্টগ্রাম-মিয়ানমার রুটটি সবচেয়ে দীর্ঘ। এসব রুটের আলাদা নাম রয়েছে। প্রতিটি রুট ইংরেজি পাঁচটি বর্ণে নামকরণ হয়ে থাকে।
বেশ কয়েকজন পাইলটের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনো দেশের আকাশসীমায় ঢোকার আগে ওই দেশের সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগে থেকেই এই অনুমতি নেওয়া থাকে। তবে আকাশসীমায় ঢোকার আগে ওই দেশের বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারে উড়োজাহাজের পাইলটরা কল করেন। প্রতিটি কলের জন্য নির্ধারিত চার্জ দিতে হয় ওই বিমান সংস্থাকে। এই চার্জ আবার উড়োজাহাজের আকৃতি অনুযায়ী কমবেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বোয়িং ৭৭৭ মতো একটি বড় আকৃতির উড়োজাহাজের চার্জ চার শ ডলারের মতো হয়ে থাকে। অপেক্ষাকৃত ছোট উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে এই হার ২০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের ওপর ফ্লাইটগুলো বেশির ভাগ ইস্টার্নলি বা পূর্বমুখী এবং ওয়েস্টার্নলি বা পশ্চিমমুখী চলাচল করে থাকে। পশ্চিমমুখী আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো আকাশপথে ৩৪ হাজার ফুট থেকে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার ফুটের ওপর দিয়ে চলে যায়। অন্যদিকে পূর্বমুখী ফ্লাইটগুলো ৩৭ হাজার ফুট থেকে ৪১ হাজার ফুট উচ্চতায় চলে। অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটগুলো চলে ৯ হাজার ফুট থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ফুট উচ্চতায়।
এয়ার ট্রাফিক স্টেশনের এক কর্মকর্তা জানান, যত ওপর দিয়ে উড়োজাহাজ চলবে, ততটাই দ্রুত ওই দেশের আকাশসীমা অতিক্রম করতে পারবে। তবে যত সময়ই লাগুক না কেন, এক দেশের উড়োজাহাজ আরেক দেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করলেই নির্ধারিত চার্জ দিতে হবে। এই আয় কোনোভাবেই হাতছাড়া হয় না।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ওভারফ্লাইং চার্জ আদায় হতো ৯ কোটি টাকারও বেশি। বর্তমানে এই আয় পাঁচ কোটি টাকায় নেমে গেছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছর আমরা ওভারফ্লাইং চার্জে আয় করেছি তিন শ কোটি টাকার বেশি। এখন তো করোনাভাইরাসের কারণে ফ্লাইট কমে গেছে। অনেকে ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। তাই আয়ও কমে যাবে।’
অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) গাইডলাইন অনুযায়ী ওভারফ্লাইং চার্জ নির্ধারণ করে থাকে এর সদস্যদেশগুলো। আবার অনেক দেশ নিজেদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতেও এই চার্জ দিয়ে থাকে। দুবাই, সিঙ্গাপুর বা দোহার মতো বড় বড় এয়ার ট্রানজিট যাদের রয়েছে, তারা ওভারফ্লাইং চার্জ প্রচুর টাকা আয় করে। আমাদের দেশের আকাশসীমা ব্যবহার করে থাইল্যান্ড, চীন, ভারত, নেপালের বিমান সংস্থাগুলো। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই আয় কমে যাওয়াই স্বাভাবিক।
রোববার দেশে নেমেছে মাত্র দুটি ফ্লাইট
বাংলাদেশের সঙ্গে চীন, হংকং, যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডের আকাশপথে যোগাযোগ রয়েছে। গতকাল রোববার থেকে এই চারটি দেশ ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশ থেকে ফ্লাইট চলাচল করছে না। এ কারণে গতকাল মাত্র দুটি ফ্লাইট ঢাকায় এসেছে। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের লন্ডন থেকে আসা ফ্লাইটটি ৮৯ জন যাত্রী নিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। ব্যাংকক থেকে আসা থাই এয়ারওয়েজের আরেকটি ফ্লাইটে যাত্রী ছিল ৭০ জন। গতকাল সব মিলিয়ে ১৬০ জন যাত্রী এসেছে বাংলাদেশে। আর ঢাকা ছেড়ে গেছে বিমানের লন্ডন, ম্যানচেস্টার ও থাই এয়ারওয়েজের ব্যাংককগামী তিনটি ফ্লাইট।
এদিকে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট কমে গেছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে ঢাকা থেকে দেশের সাতটি রুটে প্রায় দেড় শটি ফ্লাইট চলাচল করত। গতকাল এই সংখ্যা নেমে হয়েছে ৬৮।