করোনাভাইরাস আক্রান্ত: পর্যটন খাতে ধস

Share on Facebook

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের (কেভিক-১৯) কারণে দেশের পর্যটন খাতে ধস নেমেছে। কেভিক-১৯ রোগী সনাক্ত এবং একজনের মৃত্যুর পর গত কয়েকদিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে পড়েছে। কক্সবাজার, কুয়াকাটা, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, তেঁতুলিয়া সুন্দরবনসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় এরইমধ্যে পর্যটকদের যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ আরও কয়েকটি জায়গায় সীমিত করা হয়েছে চলাচল। এছাড়া বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যাও নেমে এসেছে শূন্যের ঘরে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের পর্যটনখাতে অনেক খারাপ অবস্থা। রাজধানী ঢাকার মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানাও ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে পর্যটকদের নিরুস্বাহিত করতে জেলা প্রশাসক থেকে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। বান্দরবান জেলা প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জনসমাগম নিষিদ্ধ করায় বান্দরবান পার্বত্য জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পর্যটকদের আগমন নিরুৎসহিত করা হলো। একই ধরণের বিজ্ঞপ্তি অন্যান্য পর্যটন এলাকায় দেয়া হয়।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে এবার ব্যবসায় যে ধস নামছে, তা কাটিয়ে ওঠতে অনেক সময় লাগবে। চলতি বছরের শুরুতে পর্যটনে নতুন গতি এসেছিল। কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে প্রতিদিন পর্যটকদের ভীড় বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির রূপ নেওয়ায় সেই গতি থমকে গেছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হোটেল, মোটেল, রেস্ট হাউজ ও রিসোর্ট প্রায় পর্যটকশূন্য অবস্থায় রয়েছে। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে নতুন করে কোনো রুম বুকিং হচ্ছে না। আগে যে বুকিং ছিল, সেগুলোও বাতিল হচ্ছে। কক্সবাজার, মৌলভীবাজার, তেঁতুলিয়া, কুয়াকাটার প্রতিনিধিরা জানান, কয়েকদিন থেকে পর্যটকদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। তবে দু’দিন থেকে পর্যটকদের দেখাই পাওয়া যায় না। হোটেলগুলো খালি হয়ে গেছে।
করোনাভাইরাসের কারণে একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গল। মৌলভীবাজারের সাংবাদিকরা জানান, মৌলভীবাজারের সব কয়টি পর্যটন স্পটই এখন শূন্য। একই অবস্থা মৌলভীবাজার সদর এবং কমলগঞ্জের হোটেল, মোটেল, রেস্টহাউজগুলোতেও। শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও এটার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আর শ্রীমঙ্গল মৌলভীবাজার একটা পর্যটনসমৃদ্ধ এলাকা। প্রতিদিন দেশ বিদেশের পর্যটকরা এই জায়গায় বেড়াতে আসেন। তাই আপাতত পর্যটকদের এই অঞ্চলে ভ্রমণের ওপর প্রশাসনের পক্ষ হতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সব হোটেল-মোটেল রিসোর্টকে আগাম বুকিং নেওয়া থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব হোটেল, রিসোর্ট, মোটেলে পর্যটক রয়েছে তারা যেন পর্যটকদের তথ্য দেন পাশাপাশি নতুন করে কোনো হোটেল মোটেল রিসোর্ট মালিক যেন নতুন করে বুকিং না নেন।
শ্রীমঙ্গলের পাঁচতারকা হোটেল গ্র্যান্ডসুলতানের মালিক জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে প্রত্যেকের মধ্যেই আতংক বিরাজ করছে। তাই কোনো পর্যটকই আসছে না। তাছাড়া প্রশাসন থেকে পর্যটকদের বুকিং না নেওয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
ফাঁকা পড়ে রয়েছে সমুদ্র সৈকত। সৈকদের ছাতাগুলো গুটিয়ে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আগত পর্যটকদের ফিরে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে। যারা এখনো রয়েছেন মাইকিং করে তাদের ফেরত যেতে বলা হচ্ছে। তেঁতুলিয়া উপজেলায় বিকেল হতেই প্রতিদিন সীমান্ত নদী মহানন্দার পাড়ে পর্যটকদের ভীড় দেখা যেত। এখন বাইরের কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাজেকে অবস্থিত বিভিন্ন কটেজ ও রিসোর্ট মালিকরা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন পর্যটকের উপস্থিতি একেবারেই কমে গেছে। অনেকেই আগের অগ্রিম বুকিংও বাতিল করেছেন।
করোনাভাইরাসের সতর্কতার কারণে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। আরেক পার্বত্য জেলা বান্দরবানেও পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। মাইকিং করে পর্যটকদের নিজ নিজ জেলায় ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। রাঙ্গামাটির সব পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই নির্দেশনা যদি কেউ অমান্য করে, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নেওয়া করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার রোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা জানান।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। বিশ্বের বহুদেশ বড় বড় বিপণী বিতান, এয়ারপোর্ট, বাস ও রেল স্টেশন, সমুদ্রবন্দর, সমুদ্র সৈকত বন্ধ করে দিয়েছে।

Leave a Reply