করোনাভাইরাস : বিভিন্ন জেলায় পর্যবেক্ষণে বিদেশফেরতরা
Tweet
করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের মধ্যে দেশে কয়েকটি স্থানে বিদেশফেরতদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যদিও তাদের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। এরমধ্যে রয়েছেন মানিকগঞ্জে ৫৯ জন, কিশোরগঞ্জে ৪২ জন, রাজবাড়ীতে ৫ জন,বরিশালে ৪, ফরিদপুরে ৩ এবং সিলেট, মেহেরপুর, জামালপুর, চাঁদপুর, শেরপুর, পাবন ও চুয়াডাঙ্গায় একজন করে। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়ে রাখার কথাও বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
মানিকগঞ্জে বিদেশফেরত ৫৯ ব্যক্তিকে নিজ নিজ বাড়িতে কোয়ারেনটাইনে রাখা হয়েছে। মানিকগঞ্জের জেলার সিভিল সার্জন একেএম আনোয়ারুল আমিন আখন্দ একথা জানান। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এরা মানিকগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় বাড়িতে এসেছেন। এদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৩২ জন, শিবালয়ে ৬ জন, সাটুরিয়ায় ১৮ জন, দৌলতপুরে দুই জন এবং সিঙ্গাইরে একজন রয়েছেন। চীন, ইতালি, দক্ষিণ আফ্রিকা, কুয়েত, সৌদি আরব এবং সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তারা এসেছেন বলে সিভিল সার্জন জানান। ‘এসব বিদেশফেরতদের মধ্যে চারজন নারী রয়েছেন। তাদের সবাইকে নিজ নিজ বাড়িতে বিশেষ ব্যবস্থায় (হোম কোয়ারেনটাইন) রাখা হয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যদেরও বাড়ির ভেতরে রাখা হয়েছে।’ তিনি বলেন, তাদের সবার প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে; কারো স্বাস্থ্যের কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। সিভিল সার্জন বলেন, এই ৫৯ জন ও তাদের পরিবারের কাউকে বাড়ি থেকে বাইরে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে, করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে বিদেশ থেকে আসা কিশোরগঞ্জে ৪২ জন ও জামালপুরে একজনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। গতকাল বুধবার এ দুই জেলার সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান। কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ভৈরবে ৩৭ জনসহ জেলায় ৪২ জনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। জেলার সিভিল সার্জন মো. মুজিবুর রহমান বলেন, সদর উপজেলায় তিনজন এবং নিকলী উপজেলায় দুইজনকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রাখা হয়েছে। এদের প্রায় সবাই বিদেশফেরত হওয়ায় সতর্কতা হিসেবে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ‘তাদের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘরের নির্দিষ্ট কক্ষে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। ব্যতিক্রম হলে পুলিশের শরণাপন্ন হওয়ার সুযোগ রয়েছে।’ ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ জানান, ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ থাকা ব্যক্তিদের বেশির ভাগই ইতালি থেকে আসা। তাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘরের নির্দিষ্ট কক্ষে থাকতে হবে। এদিকে, বুধবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি, কিশোরগঞ্জের এক মত বিনিময় সভা হয়েছে। সিভিল সার্জন মো. মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং জেলার একটি সরকারি ও দুইটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মুজিবুর রহমান জানান, সভায় করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিশেষভাবে জেলার সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ তিনটিতে কোয়ারেন্টিন ইউনিট ও আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখার বিষয়টি আলোচিত হয়। ‘ইতিমধ্যেই শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে একশত শয্যার কোয়ারেন্টাইন ইউনিট এবং ১৫ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’
আর রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলায় ইটালিফেরত বাবা-ছেলেসহ এক পরিবারের পাঁচ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তারা জঙ্গল ইউনিয়নের বাসিন্দা বলে বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম জানান। ইউএনও একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, গত ২ মার্চ বাবা ও ছেলে ইটালি থেকে দেশে ফিরেছেন। সোমবার বিষয়টি জানতে পেরে তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। ‘তাদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো লক্ষণ নেই। তারপরও অধিকতর নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের পরিবারের অপর দুই সদস্য ও গৃহকর্মীকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই সাত দিন পার হয়েছে। বাকি সাত দিন তারা বাড়ির বাইরে বা কারও সংস্পর্শে যেতে পারবেন না। তাদের বাড়ির আশপাশে গ্রাম পুলিশ দিয়ে পাহারা বসানো হয়েছে। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. দীপক কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে এখন পর্যন্ত এধরনের কোনো রোগী আসেনি। তবে আমরা হাসপাতালে প্রস্তুতি নিয়ে আছি। বিদেশ থেকে কেউ জেলায় প্রবেশ করলে তারা অন্তত ১৪ দিন যেন বাড়ির বাইরে না যায় এবং কারও সঙ্গে চলাফেরা না করে সে ব্যাপারে আমরা সজাগ আছি।’ তিনি বিষয়টি নিয়ে কাউকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানান। করোনাভাইরাস আক্রান্ত কিনা পরীক্ষা করতে বলায় সিলেটে একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সৌদি আরব প্রবাসী এক নারী পালিয়ে গেছেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর বেসরকারি নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মণ্ডল। তবে পরে খোঁজ নিয়ে সিভিল সার্জন অফিসের লোকজন ওই নারীর বাসায় গিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার অনুরোধ করলেও তিনি রাজি হননি বলে প্রেমানন্দ জানান। এদিকে, সৌদি আরবফেরত ৬৫ বছর বয়সী জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত এক নারীকে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা মনে করছেন, তিনি স্বাভাবিক জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত হয়েছেন। আর শেরপুর স্বাস্থ্য বিভাগ করোনাভাইরাস রোগীর চিকিৎসা ও আলাদা রাখার জন্য বিভিন্ন্ হাসপাতালে ১৫০টি আলাদা শয্যা প্রস্তুতসহ নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে মাস্ক ও স্যানিটাইজারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। পাবনার আটঘরিয়ায় করোনাভাইরাস সন্দেহে বিদেশ ফেরত এক ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে সিভিল সার্জন মির্জা মেহেদী ইকবাল জানান।

এছাড়া, ফরিদপুরে ইতালিফেরত তিন ভাইকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। ওই তিন ভাই ৩ মার্চ ঢাকায় এসে ৪ মার্চ ফরিদপুরের বাড়িতে ওঠেন। তাদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিন ভাইয়ের কারও শরীরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ নেই। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন মো. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘৯ মার্চ আমরা তিন ভাইয়ের ইতালি থেকে ফেরার বিষয়টি জানতে পারি। ওই তিন ভাই সতর্ক ও সচেতন। তাঁরা নিজেরাই বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। আমরা সার্বক্ষণিক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’ আর জ্বর-সর্দি নিয়ে মেহেরপুরের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর সৌদি আরব ফেরত এক তরুণকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। মেহেরপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মখলেছুর রহমান পলাশ জানান, মঙ্গলবার বিকেলে ২৫ বছর বয়সী এই তরুণ তাদের হাসপাতালে ভর্তি হন। এই তরুণের বাড়ি মেহেরপুর পৌরসভার শেখপাড়ায়। চার দিন আগে তিনি সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন। চিকিৎসক মখলেছুর বলেন, ‘এই তরুণ ঠাণ্ডা ও জ্বর নিয়ে হাসপাতালে আসেন। সৌদি আরব থাকার সময় তার ভ্রমণের হিস্টোরি রয়েছে। এ জন্য তাকে আমরা করোনাভাইরাস সন্দেহে আইসোলেশন ইউনিটে রেখে চিকিৎসা দিতে চেয়েছিলাম। ‘কিন্তু উন্নত চিকিৎসা কথা ভেবে পরিবারের লোকজন তাকে ঢাকায় নিতে চান। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।’