ঢাকা ছাড়ায় ‘রেকর্ড’, করোনা–ঝুঁকিতে গ্রামগুলো
Tweet
দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত সড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। ২৫ মার্চ এই পথ ধরে ৫০ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করেছে, যা এযাবৎকালের রেকর্ড। ঈদেও এত যানবাহন পারাপার হয় না। এ তথ্য থেকেই স্পষ্ট, করোনাভাইরাস আতঙ্কে কী পরিমাণ মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষের এই ছড়িয়ে পড়ার ফলে কতটা নিরাপদ হলো দেশ?
বিপদ আঁচ করার জন্য আরেকটি তথ্য স্মরণ করিয়ে দেওয়া যায়। সাম্প্রতিক সময়ে
৪ লাখ ৮০ হাজার প্রবাসী দেশে এসেছেন। এর মধ্যে পৌনে দুই লাখ এসেছেন
মার্চের প্রথম ভাগে। তাঁদের একটা বড় অংশ ইউরোপ, আমেরিকার করোনাভাইরাস
উপদ্রুত এলাকা থেকে এসেছেন। যাঁরা গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছেন। এখন পর্যন্ত
সরকার সবার অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি। ফলে ঝুঁকিটা রয়েই যাচ্ছে।
ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি হয়ে যায়। তখন বিপুলসংখ্যক
মানুষ বেড়াতে যায়। তবে ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতরে সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকা থেকে
গ্রামে যায়। নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির হিসাবে, ঈদে ঢাকার ৫০
শতাংশ এবং এর আশপাশের উপশহর থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ ঢাকা ছাড়ে। তাদের হিসাবে,
ঈদে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়ে যায়।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সব
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লম্বা সময়ের জন্য বন্ধ। পরীক্ষা স্থগিত। সব অফিস-আদালত
লম্বা সময়ের জন্য ছুটি। ফলে ঈদের চেয়ে বেশ মানুষই এবার ঢাকা ছেড়ে গেছে বলে
মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মোবাইল
ফোন অপারেটরদের তথ্যের ভিত্তিতে ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টার
(এনটিএমসি) দেশের মানুষের মুঠোফোন ব্যবহারের চিত্র বের করে। এনটিএমসি সূত্র
বলছে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের ছুটি ঘোষণার পর ১ কোটি ১০ লাখ মোবাইল
ফোন ব্যবহারকারী ঢাকা ছেড়েছেন। ফোন ব্যবহারকারীর সঙ্গে তাদের শিশুসন্তান
বা যাদের ফোন নেই, তাদের সংখ্যা যুক্ত করলে এ সংখ্যা অনেক হবে।
জানতে
চাইলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও
ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যাঁরা
বিদেশ থেকে এসেছেন, তাঁদের নিখুঁতভাবে চিহ্নিত করে বাধ্যতামূলকভাবে
কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা থেকে বিপুল মানুষ গ্রামে গেছে, গ্রামে
আগে থেকেই মানুষ আছে। ফলে গ্রামে মানুষের ঘনত্ব বেড়েছে। এতে ঢাকার ওপর হয়তো
কিছুটা চাপ কমেছে। কিন্তু যাদের কোয়ারন্টিনে থাকার কথা, তাদের কোয়ারেন্টিন
নিশ্চিত করতে না পারলে গ্রামে ঝুঁকি আছে। কারণ, ঢাকার যেসব মানুষ গ্রামে
গেছে, তারা আবার ঢাকায় ফিরে আসবে। ফলে সতর্কতা খুবই জরুরি। এ ছাড়া গ্রামে
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টিও মানা উচিত।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের
মেঘনা-গোমতী সেতু হয়ে স্বাভাবিক সময়ে ৩৪ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদে
সর্বোচ্চ ৪৩ হাজার পর্যন্ত ওঠে। এবার ২৫ মার্চ সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙে
দিয়ে যানবাহন পারাপার করেছে ৫০ হাজার ৯৬টি। এই সেতু দুটি দিয়ে ২৪ মার্চও
পারাপার করেছে ৪১ হাজার ৩৫টি যানবাহন। এর আগের এক সপ্তাহ মোটামুটি
স্বাভাবিক সংখ্যার যানবাহন চলেছে।
ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরবঙ্গের পথের মহাসড়কটিও দেশের অন্যতম
ব্যস্ত মহাসড়ক। বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায়–সংক্রান্ত তথ্য বলছে, গত
ফেব্রুয়ারি মাসের ২৯ দিনে এই সেতু দিয়ে সাড়ে চার লাখ যানবাহন চলাচল করেছে।
অথচ মার্চের প্রথম ২৫ দিনেই যানবাহন চলেছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার।
এ বিষয়ে
জানতে চাইলে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার
দে প্রথম আলোকে বলেন, এবার ছুটি অনেক লম্বা। যোগ হয়েছে করোনাভাইরাস আতঙ্ক।
ফলে ঈদের চেয়ে এবার বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়েছে।
একই
অবস্থা রেলপথেও। সরকারি ছুটি ঘোষণার পর কমলাপুর রেলস্টেশনে মানুষের ঢল
নামে। এ জন্য ২৪ মার্চ সন্ধ্যা থেকে সব ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ
করে দেওয়া হয়। রেলওয়ে সূত্র বলছে, ২৩ ও ২৪ মার্চ বিপুল মানুষ ট্রেনে গেছে।
এর বেশির ভাগই মেইল ও লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করেছে। আন্তনগর ট্রেনেরও টিকিট
বিক্রি এবং টেকিং কার্যক্রম পুরোপুরি কার্যকর ছিল না। এরপরও এই দুই দিন
আন্তনগর ট্রেনে গড়ে ৩৫ হাজারের মতো টিকিট বিক্রি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি
আন্তনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়েছে ১৬ ও ১৭ মার্চ। এই দুই দিন যথাক্রমে ৫১
হাজার ৮০৬ ও ৩৫ হাজার ২২০টি টিকিট বিক্রি হয়েছে।