নতুন করে আরও ২ জন আক্রান্ত: আইইডিসিআর
Tweet
করোনা ভাইরাসে দেশে আরও দুজন আক্রান্ত হয়েছেন। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা শনিবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বিভিন্ন জেলায় নজরদারি জোরদার করা হয়েছে , তবে কিছু স্থানে অবহেলা লক্ষ করা গেছে। মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, নতুন আক্রান্ত দুজনের একজন ইতালি থেকে এবং অন্যজন জার্মানি থেকে সম্প্রতি দেশে এসেছেন।
এর আগে ৮ মার্চ প্রথমবারের মতো দেশে তিনজনের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবর জানায় আইইডিসিআর। তবে পর্যায়ক্রমে ওই তিন ব্যক্তি সেরে ওঠেন। আজ দুপুরেই আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশে এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী নেই। যে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের সবাই এখন করোনামুক্ত।
শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে সেব্রিনা বলেছিলেন, বাংলাদেশ মোট তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে দুজন আগেই সুস্থ হয়েছেন। এর মধ্যে একজন ইতিমধ্যে বাড়ি ফিরে গেছেন। আরেকজন সুস্থ হলেও হাসপাতাল ছেড়ে যাননি। অন্যজন, অর্থাৎ সবশেষ যে ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন, তাঁর প্রথম রক্ত পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছে। এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রটোকল অনুযায়ী তাঁর দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করা হবে। এতে নেগেটিভ এলে তাঁকে করোনামুক্ত ঘোষণা করা হবে।আইইডিসিআর বলছে, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ৯ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
ময়মনসিংহে বিদেশফেরত ৮ জন ‘হোম কোয়ারেন্টিনেঃ ময়মনসিংহে বিভিন্ন উপজেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে বিদেশফেরত আটজনকে হোম কোয়ারেন্টিন করে রাখা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এসেছেন দুজন, সৌদি আরব থেকে দুজন ও ইতালি থেকে চারজন।
শনিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন এ বি এম মশিউল আলম বলেন, এই আট প্রবাসী পুরোপুরি সুস্থ আছেন। তারপরও বাড়তি সতর্কতার জন্য তাঁদের স্বাস্থ্য বিভাগের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাস থেকে সতর্কতার জন্য ঝিনাইদহে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রাখা ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন। কেউ কেউ ব্যবসাও করছেন।
গত শুক্রবার রাতে ইতালি থেকে এসেছেন এই চারজন। আর দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসা দুজনকে গত মঙ্গলবার ও সৌদি আরব থেকে আসা দুজনকে গত বৃহস্পতিবার থেকে কোয়ারেন্টিন করে রাখা হয়েছে।
পাবনায় প্রায় ২ হাজার বিদেশি বিশেষ নজরদারিতেঃ পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত অঞ্চলে (ইপিজেড) ১২টি দেশের প্রায় ২ হাজার বিদেশি নাগরিক কাজ করেন। স্থানীয় লোকজনের মধ্যে করোনাভাইরাস আতঙ্ক কাজ করছে। তবে এই বিদেশিদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে দাবি করে স্থানীয়দের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি।
কমিটির সভাপতি ও ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিহাব রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার শুরুতেই বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। গত চার মাস ধরে তাদের নিজ দেশে যাওয়া ও ফেরার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। চার মাসে নতুন কোনো বিদেশি নাগরিক রূপপুরে আসেননি। এই সময়ের মধ্যে যারা দেশে গেছেন, তাদের আর রূপপুরে ফিরতে দেওয়া হয়নি। ফলে বিদেশি নাগরিকদের নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে রাশিয়া, জার্মানি, বেলারুশ, ইউক্রেন ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় এক হাজার ৯০০ বিদেশি কাজ করছেন। এ ছাড়া পাশের ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত অঞ্চলে চীন, জাপান, কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা ও তুরস্কসহ বেশ কিছু দেশের প্রায় ১০০ বিদেশি কাজ করেন। সব মিলিয়ে উপজেলাটিতে ১২টি দেশের প্রায় ২ হাজার বিদেশি আছেন। এসব বিদেশিরা আশপাশেই থাকেন। দৈনন্দিন কেনাকাটার জন্য তাঁরা উপজেলা সদরের বিভিন্ন হাট-বাজার ও বিপণিকেন্দ্রে যান। তাই স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত।
এ প্রসঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবর বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রতিটি কার্যক্রম অনুসরণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের মেডিকেল সেন্টারে করোনা মোকাবিলার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত রূপপুর প্রকল্পের কোনো কর্মীর মধ্যে করোনার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। ফলে সাধারণ মানুষের বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
এদিকে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে থাকার কথা ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’, অথচ ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাইরেঃ করোনাভাইরাস থেকে সতর্কতার জন্য ঝিনাইদহে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রাখা ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন। কেউ কেউ ব্যবসাও করছেন। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, কোয়ারেন্টিনে (রোগ সংক্রমণের শঙ্কায় পৃথক রাখা) থাকা ব্যক্তিদের বাইরে বের না হতে বলা হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন সেলিনা বেগম বলেন, শনিবার পর্যন্ত ঝিনাইদহে ১৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তাদের সার্বক্ষণিক তদারকি করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। নতুন করে আর কাউকে কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা হয়নি। যাদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে, তাদের মধ্যে জেলা সদরের ২ জন, কালীগঞ্জের ১২ জন ও মহেশপুরের ৫ জন।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শামীমা শিরিন বলেন, কালীগঞ্জে আমেরিকা থেকে আসা এক নারী প্রথমে যে গ্রামে উঠেছিলেন, সেখান থেকে তিনি অন্যত্র চলে গেছেন। তবে ওই পরিবারের ১২ সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আনজুমান আরা বলেন, ভারত থেকে এক ব্যক্তি মহেশপুরে ফিরেছেন। ওই পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এর আগে ইতালি থেকে জেলা শহরে ফেরা দুজনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। ১৪ দিন করে তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা বেশির ভাগই নানা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন। কালীগঞ্জের যে পরিবারকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে, ওই পরিবারের গৃহকর্তাকে আজ দোকানে বসে ব্যবসা করতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে ওই গৃহকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসা না করলে তিনি পরিবার নিয়ে কীভাবে চলবেন। তবে হাসপাতাল থেকে তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর করা হচ্ছে। ঘন ঘন হাত ধুতে এবং মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। খুব প্রয়োজন না হলে বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শামীমা শিরিন বলেন, কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের বিষয়ে খোঁজ রাখা হচ্ছে। সব সময় তাদের বাড়িতে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে তাদের ভিড়ের মধ্যে না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আনজুমান আরা বলেন, যে পরিবারের পাঁচ সদস্যকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে, তাদের বাড়ির বাইরে না যেতে বলা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে অসম্ভব তাদের আটকে রাখা।
কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের প্রতিদিনই স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা খোঁজ রাখছেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন সেলিনা বেগম। তিনি বলেন, নতুন করে আর কাউকে হোম কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হয়নি।