পর্যটক শূন্য কক্সবাজার!
Tweet
করোনাভাইরাসের প্রভাবে জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে ভরা মৌসুমেও একেবারেই পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার।
পাশাপাশি আগামী ২৬ মার্চের বন্ধের সময়কে কেন্দ্র পর্যটন শহরের প্রায় চার শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজসহ কটেজ গুলিতে যে বুকিং ছিল তাও পুরোদমে বাতিল হয়েছে। বলতে গেলে হাহাকার পরিস্থিতি বিরাজ করছে পর্যটন শহরে। এই পরিস্থিতির কারণে একদিকে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে বিশাল অংকের রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।
পর্যটন এলাকার কলাতলীর মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান যুগান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে কক্সবাজার পর্যটন আগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত বর্তমানে পর্যটক শূন্য। হোটেল কর্মচারীরা অলস জীবনযাপন করছে। প্রতিদিন খরচের খাতা ভারি হলেও আয়ের খাতায় একেবারেই জিরো।
পর্যটন এলাকার করাই রেস্টুরেন্টের মালিক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, এখন পর্যটনের ভরা মৌসুম। অন্যান্য বছর এই সময়ে পর্যটকের ভিড় থাকত কক্সবাজারে। কিন্তু করোনার কারণে পরিস্থিতি অন্যরকম। দেশে রাজনৈতিক নানা আন্দোলন সংগ্রামসহ অনেক সংকটময় পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি জন্মের পর পর্যটন শহরে প্রথমবার দেখলাম।
এদিকে শুক্রবার বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতস্থ লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, হিমছড়ি, সী-গাল পয়েন্ট, মোটেল শৈবাল মোড়, বালিকা মাদ্রাসাসহ আশপাশ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সৈকতে একেবারেই পর্যটক শূন্য। কোথাও একজন পর্যটক কিংবা স্থানীয় লোক দেখা যায়নি। পাশাপাশি সৈকতের একেকটি পয়েন্টে ৪০-৫০টি কিটকট (ছাতায়) পর্যটকদের বসার জন্য জায়গা দিতে পারত না ব্যবসায়ী। সেখানে এখন এই কিটকটগুলো খালি পড়ে আছে। আর কিছু স্থানে কিটকটও তুলে ফেলেছে ব্যবসায়ীরা।
কিটকট ব্যবসায়ী মো. হোসেন বলেন, কক্সবাজার জনমানব শূন্যের পাশাপাশি সব কিছুই শূন্য হয়ে গেছে। সৈকতে ধূ-ধূ বালুচর ছাড়া কিছুই নেই। যে কয়েকটি কিটকট বেঁধে রেখেছে সেগুলি উপরে তুলার কষ্টের কারণে রয়ে গেছে। না হয় সৈকতে বর্তমানে কিছুই নেই।
এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নেয়া উদ্যোগের ফলে একেবারেই পর্যটনশূন্য হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে তাদের দাবি, যারা ব্যাংক থেকে বা বিভিন্ন এনজিও থেকে সুদে টাকা নিয়ে ব্যবসা করছে তাদের সব কিস্তি দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মওকুফ করার আবেদন জানান।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাব কমাতে সরকার সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে কিছু কিছু অতি উৎসাহী পরিবারের লোকজন দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। যে কারণে পর্যটন শহর কক্সবাজারে পর্যটক আগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, সরকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেছে বাসায় বসে থাকার জন্য। পাশাপাশি শিশুদের করোনাভাইরাস থেকে যতটুকু সম্ভব মুক্ত রাখার জন্য। কিন্তু লোকজন সরকারের এই মহৎ উদ্যোগের প্রতি সমর্থন না জানিয়ে দেশে দেশে ঘুরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাই বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে পর্যটক আগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।