‘আমার শহরে আমি বসন্তের শ্বাস অনুভব করতে শুরু করেছি’
Tweet
প্রিয় বাংলাদেশী বন্ধুরা,
আসসালামু আলাইকুম। আমি লিওনা, বাংলা নাম নদী। এটা আমার দ্বিতীয় চিঠি। এই
দিনগুলোতে আমাদের বিশ্ব বিশাল পরীক্ষার মধ্য দিয়ে চলছে, সংক্রমণের সংখ্যা হু হু করে
বাড়ছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি জানার পর আমি খুব চিন্তিত। তবে মানবজাতির যৌথ প্রচেষ্টা
দেখে মনে হচ্ছে এ ভাইরাসটিকে আস্তে আস্তে পরাজিত করা সম্ভব। নিচে আমি আমার শহরের পরিস্থিতি
সম্পর্কে আপনাদেরককে বলতে চাই|
আমার
জন্মভূমি শানডং প্রদেশে, এটি উত্তর চীনের হুয়াবেই সমভূমিতে অবস্থিত। ৩৪টি প্রাদেশিক
প্রশাসনিক অঞ্চলের মধ্যে শানডং প্রদেশ জিডিপিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। প্রায় একশ
মিলিয়ন জনসংখ্যা নিয়ে, শানডং হলো চীনের দ্বীতিয় জনবহুল প্রদেশ। এজন্য মহামারী নিয়ন্ত্রণ
করতে কিছুটা অসুবিধে হয়েছে, তবে শানডং দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছে।
সাফল্যের
মূল চাবিকাঠি হলো দেশের সকল নির্দেশিত আইন অনুসরণ করে প্রত্যেকেই তাদের কাজের এবং নিজ
জায়গা থেকে প্রস্তুত হয়ে উঠেছিল। এছাড়া, হুবেইকে আমার প্রদেশের জনগণ অসংখ্য সাহায্য
করেছেন, যেমন ফলমূল শাকসবজি নিত্যপ্রয়োজনীয়
জিনিসপত্র দান করেছেন এবং কোনো কোনো সংগঠন মেডিকেল যন্ত্রপাতি দান করেছেন।
আমার
বাবা হলেন আমার এলাকায় একটা হাসপাতালের ডাক্তার। গত প্রায় দুই মাস ধরে তাঁর কোনো ছুটি
নেই, চাইনিজ নববর্ষের দিনেও তার কাজ ছিল। প্রত্যেকদিন তিনি সকালে সাতটায় কাজে গিয়ে
সন্ধ্যা ছয়টায় বাড়িতে ফিরতেন, আর কিছু বিশ্রাম নেবার পরে রাতে এগারোটায় আবার বের হয়ে
যেতেন। বাবাসহ তাঁর সহকর্মীরা হাইওয়ে দিয়ে যাওয়া-আসার গাড়িগুলো পরীক্ষা করতেন। এই
জটিল মুহুর্তে, চিকিৎসা কর্মীরা আমাদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধাপ্রাপ্য।
এখন
আমার শহরে কারখানা আর সর্বজনীন স্থানগুলো আস্তে আস্তে কাজে ফিরে যাচ্ছে, অনেক দোকান
ও বাজার ইতোমধ্যে খুলেছে, কিছু কিছু হাই স্কুল দশ দিন পরে খুলবে। তবে সর্বত্র কঠোর
ব্যবস্থা এবং আইন মেনে চলা বাধ্যতামূলক, যেমন মানুষের মধ্যে 1.5 মিটার দূরত্ব বজায়
রাখতে হবে। বইয়ের দোকানদার মাঝে মাঝে আমাদেরকে জড়ো না হওয়ার অনুরোধ জানায়।
এখন
আমরা সুরক্ষিত থাকলেও বিপদ-ঝুঁকি রয়েছে। ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে মনোযোগ
দেয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। সুরক্ষা জ্ঞান সম্পর্কে আরও জানতে হবে। তথ্য আপডেট রাখুন তবে
নেটওয়ার্কের তথ্য সাবধানে পিক করুন। বিপদ উপস্থিত হলে গুজবও ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। তাই
আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ জায়গা থেকে সতর্ক ও স্পষ্ট থাকতে হবে। নিজের উন্নতি ও পরিবারের
স্বার্থেই কোয়ারেন্টিনের সময়টিকে কাজে লাগাতে হবে।
আমার
শহরে আমি ইতোমধ্যে বসন্তের শ্বাস অনুভব করতে শুরু করেছি। মনে আশা রাখুন, সবকিছু ভাল
হয়ে যাবে।