করোনা কি? আর কেনইবা এই সংকটে আমরা ঘরে থাকবো?
Tweet
মাশফাকুর রহমান –
করোনা সংকটে এখন সারা বিশ্ব হিমশিম খাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী দেশ যেখানে এই মহামারির সংক্রমণ রোধে কিছুই করতে পারেনি, সেখানে বাংলাদেশে যে এখনও এর বিস্তার সহনীয় পর্যায় তা কেবল সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কারো পক্ষে এই মুহূর্তে বলা কঠিন। তবে দেশের সব শ্রেণির মানুষ এক হয়ে লড়াই করছে এখন করোনার সংক্রমণ রোধে। এমনই এক প্রত্যক্ষদর্শী প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার লেখনী থেকে জেনে নেয়া যাক, করোনা কি? ও কেনইবা আমরা এই সংকটময় মুহূর্তে ঘরে থাকবো।
সারা পৃথিবী স্থবির হয়ে গিয়েছে যে শক্তিধর ভাইরাসের সংক্রমণ দ্বারা সৃষ্ট মহামারিতে, তার নাম নভেল করোনাভাইরাস। উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ থেকে শুরু করে স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল প্রায় সব দেশই কম বেশি এই মহামারির শিকার আজ। পুরো পৃথিবী বিপর্যস্ত এবং এক মহা সংকটের মুখোমুখি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক নভেল করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী সংক্রমণের মাধ্যমে যে লাগামহীন সংকটের সৃষ্টি হয়েছে,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বিশ্ব এতটা সংকটে কখনো পড়েনি; এতটা প্রভাবান্বিত পৃথিবী কখনো হয়নি। সারা বিশ্বের চিকিৎসাবিজ্ঞান গবেষণা চালিয়ে এখনও পর্যন্ত করোনার ওষুধ আবিষ্কার করতে পারেনি। এমন এক সংকট যা, পুরো মানবসভ্যতাকে অস্তিত্বের সংকটে ফেলে দিয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের জীবন যাচ্ছে। আজকে পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা- ১৫ লাখ ৩৬ হাজার ছাড়িয়েছে এবং মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯০ হাজার। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে এক ব্যক্তির দেহে প্রথম করোনাভাইরাস কেস ধরা পড়ে। মানবদেহে কিভাবে এর সংক্রমন হলো, তা এখনও অজানা। চীনা বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাভাইরাসের সাথে একটি সামুদ্রিক খাবার ও পশুপাখির বাজারের সাথে এর বিস্তারের সম্পর্ক থাকতে পারে।
এখন জেনে নেয়া যাক করোনাভাইরাস কি- নভেল করোনা সাধারণ ফ্লু ধরনের
ভাইরাস। গত ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসে
আক্রান্ত রোগের নামকরণ করে কোভিড-১৯। কোভিড–১৯ করোনা সাধারণ ফ্লু ধরনের
ভাইরাস। তবে, আগে কোনো দিন মানুষের শরীরে এটিকে দেখা যায়নি। করোনায়
আক্রান্ত হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ সিস্টেম শরীরের স্বাভাবিকের চেয়ে
অতিরিক্ত শক্তি নিয়ে এই ভাইরাস কে প্রতিহত/আক্রমণ করতে গিয়ে ফুসফুসের
অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। দুটি কারণে এই ভাইরাস খুবই মারাত্মক- এক.
সংক্রমণের মাত্রা ও প্রকৃতি এবং দুই. শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত জটিলতায় হার্টের
অপূরনীয় ক্ষতির দ্বারা মৃত্যু।
এই ভাইরাস খুব দ্রুত মানুষ থেকে মানুষের শরীরে সরাসরি সংক্রমণ ঘটাতে
পারে। ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোভিড-১৯ এ ভুগছে অথবা যাদের ভেতরে
জীবাণু ঢুকেছে কিন্তু জ্বর বা কাশি নেই, তাদের সঙ্গে (অথবা তাদের ছোঁয়ার)
১৫ থেকে ২০ মিনিটের সময়ের সংস্পর্শে থাকলে অপর ব্যক্তি সংক্রমিত হতে পারে।
মনে রাখতে হবে, ভাইরাস বাতাসে ছড়ায় না। এটা কাশির সিক্রেশন ড্রপলেট থেকে
একমাত্র হাত অথবা মুখ, নাক ও চোখের মধ্য দিয়ে মানুষের শরীরে ঢোকে। খুবই
সামান্য অংশ যখন ভেনটিলেটারে থাকা রোগীকে সাকশন দেওয়া হয়. তখন কাছের বাতাসে
ছড়ায়। তা থেকে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের নাকে, চোখে,বা মুখে
ঢুকতে পারে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বারা স্পর্শ করা কোন বস্তু অন্য কোন
মানুষ স্পর্শ করলে ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে।
আগেই বলছিলাম, করোনায় আক্রান্ত রোগীর অস্বাভাবিক ভাবে শ্বাস কষ্ট হয়
বলে এটির মৃত্যুর ঝুকি বেশি। কোন মানুষ ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ৭ থেকে ১৪
দিনের মধ্যে কোভিড–১৯ রোগে আক্রান্ত হয়। তবে আক্রান্ত হবার পর অধিকাংশ
ক্ষেত্রেই কিছুদিনের মধ্যে সামান্য শরীরের অস্বস্তিকর অনুভূতি, কিছু হালকা
মাথাব্যথা ও কাশি থাকতে পারে। তারপরে, এমনিতে ভালো হয়ে যায়। সম্পূর্ণ ভালো
হতে ৫, ৭ অথবা ১৫ দিন লাগতে পারে (তথ্য সূত্র: প্রথম আলো, ডা. জিয়াউদ্দিন
আহমেদ)। তাহলে, বোঝা যাচ্ছে, কোন ব্যক্তি করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত
হলেও সিম্পটম-নাও দেখা দিতে পারে,এবং ঐ ব্যক্তি দ্বারা অন্যদের মধ্যে এই
ভাইরাস বিস্তার অন্যেক সংক্রমিত করতে পারে। সুতরাং- আপাত সুস্থ মনে হলেও,
তিনি অন্যের জন্য ঝুকির কারণ হতে পারেন।
ইতোমধ্যেই প্রমাণিত বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর, আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নত
এবং চিকিৎসা সেবায় এগিয়ে এমন রাষ্ট্রগুলোও এই ভাইরাসের প্রকোপ থেকে মানুষের
জীবন রক্ষার্থে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য,
জার্মানি, ইতালি, স্পেন, আমেরিকার মত ইউরোপ আমেরিকার অধিকাংশ দেশ চরম
বিপর্যয়ের মুখোমুখি। যদিও চীন করোনার সংক্রমণকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে
নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।
কিন্তু, সারা পৃথিবীর যখন এমন অবস্থা, তখন বাংলাদেশের মত ১, ৪৭,৫৭০ বর্গ
কিলোমিটারের জায়গার ছোট্ট দেশে প্রায় ১৮ কোটি মানুষের ঘনবসতির বাস্তবতায়
ভাইরাস সংক্রমণের হার কমাতে-সামাজিক দুরত্ব রক্ষা; খাদ্য খাদ্য নিরাপত্তা
নিশ্চিতকরা এবং জনজীবন স্বাভাবিক অবস্থায় রাখা; এবং এই সংকটাপন্ন অবস্থা
মোকাবেলায় আমাদের আরও বেশি সচেতন হওয়া জরুরি।
সামান্য কিছু তথ্য দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করি-
আমেরিকাতে প্রথম করোনায় আক্রান্ত রুগি ধরা পড়েছিলো ১৫ ফেব্রুয়ারি।
সংখ্যা ছিলো- মাত্র ১৫ জন সেখান থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত সংখ্যা ছিলো মাত্র
১০০ জন। ঠিক ১৫ মার্চ,অর্থ্যাৎ, মাত্র এক মাসে এই সংখ্যা পৌছেছিলো ৩৬০০
জনে। এর পরে মাত্র ১০ দিনে অর্থ্যাৎ, ২৭ মার্চে ১ লাখ আক্রান্ত হলো,আজকে
সেই সংখ্যা-৪ লাখ ৩৫ হাজার, ১৬০ জন। মৃত্যুর সংখ্যা-১৪০০০ ছাড়িয়েছে। হোয়াইট
হাউস এর অফিশিয়াল ধারণা করছে- প্রায় ২ লাখ লোক শুধু ইউ এস এ তে করোনা
আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে। এত বড় রাষ্ট্রে,যাদের খাদ্য সংকট নেই,চিকিৎসা
ব্যবস্থা উন্নত,সামাজিক নিরাপত্তা যথেষ্ট,সেই দেশ যখন এতটা বিপাকে,আমাদের
কি অবস্থা হতে পারে আমরা ভাবতে পারি?
আমাদের আজকে পর্যন্ত ৩৩০ জন আক্রান্ত, খুব সামান্য মনে হচ্ছে? কিন্তু,
এটা ৩ লাখ ৩০ হাজার হতে খুব বেশি সময় লাগবে না, যদিনা আমরা এখনই সচেতন না
হতে পারি। এছাড়া আমাদের সংকট শুধু আক্রান্ত কমানোর জন্য সামাজিক দুরত্ব
নিয়ে নয়, সকলের খাবার নিশ্চিত করা; শৃঙ্খলা রক্ষা করা; সামাজিক ও পারিবারিক
নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; খাদ্য উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা; চিকিৎসা ব্যবস্থায়
নতুন চ্যালেঞ্জগুলোকে উতরে সকলের চিকিৎসা নিশ্চিত করা; এবং বাজার ব্যবস্থা
স্বাভাবিক রাখা প্রভৃতিও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এতগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে
এই মহা সংকট কাটিয়ে ওঠা সরকারের পক্ষে এককভাবে অসম্ভব। এখানে জনগণের
স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা অতিব জরুরি।
যে বা যারা এই ভাইরাস বহন করছে তাদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব অন্যের
জীবন কে সংকটাপন্ন বা ঝুঁকিপূর্ণ না করা। আবার, এটাও রাষ্ট্র চায়- যেন একজন
ব্যক্তি অকারণে নিজের বিপদ নিজে ডেকে না আনে, এজন্যই সামাজিক দুরত্ব
নিশ্চিত করার জন্য সরকার পক্ষ হতে বারবার তাগাদা দেয়া হচ্ছে ঘরে থাকার
জন্য।
বিশ্বে বর্তমান পরিস্থিতিতে, আমাদের সকলেরই দায়িত্ব আছে,সকলের কাছেই
নিজের জীবন সব চেয়ে প্রিয় এবং কাউকে তার জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করতে কেউই
বাধ্য করতে পারে না। তথাপি, জীবনের ঝুকি নিয়ে মাঠ প্রশাসন, বাংলাদেশ
পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনী, সেনাবাহিনী, স্বাস্থ্য বিভাগ এর
সহকর্মিরা রাত দিন পরিশ্রম করছে। কিন্তু, কোন এজেন্সি বা প্রতিষ্ঠানের
কারও পক্ষেই কোন ব্যক্তির ঘরের মধ্যে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব নয়,
এটি ব্যক্তি বা নাগরিকের নিজ দায়িত্ব বোধের বিষয়। আমাদের জনগণের তুলনায়
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জনবলের সংখ্যার হিসাব টা মাথায় নেয়া উচিত।
আমরা কি ভেবে দেখেছি, যখন এভাবে আমরা সামাজিক দুরত্ব রক্ষাসহ নিজের
সেফটির ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে ব্যর্থ হয়ে এই ভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা
কমাতে সক্ষম না হবো, তখন আমাদের পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে? কোন নিত্তপণ্যের
দোকান,ঔষুধের দোকান, প্রয়োজনীয় পন্যের বাজার তাদের নিজেদের জীবনের
নিরাপত্তার জন্যই এক সময়ে তারা সব বন্ধ করে দেবে। আপনি লাখ টাকা নিয়ে পকেটে
ঘুরেও খাবার জোগাড় করতে পারবেন না। এই সংখ্যা, যত বাড়বে মানুষ তত আতঙ্কিত
হবে, তখন কোন কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য নষ্ট হয়ে গেলেও হয়তো, বিক্রির জন্য
ভিড়ের মধ্যে যাবে না। আমরা ইতোমধ্যেই দেশে বিদেশের চিত্র দেখেছি। আক্রান্ত
রুগি কেউ মারা গেলে, কেউ ছুঁয়েও দেখছে না।
এ এক মহাসংকট। যখন আতঙ্কিত স্ত্রী আক্রান্ত স্বামীকে ধরবে না; সন্তান
মা কে ধরে একটু সান্ত্বনা দেবার সাহস পাবেনা; যখন মা তার সন্তানকে বুকে
নিয়ে কান্না করেও নিজের কষ্টের ভার কমাবার দুঃসাহস দেখাবে না; অসুস্থ হলে
কেউ হসপিটাল পর্যন্ত পৌছানোর মত সামান্য মানবিকতা দেখাবার সাহস পাবেনা;
ভাই-বোন, আত্মীয়, কাউকে কবরে মাটি দিতে পাওয়া যাবে না। তাহলে, আমরা এখনও
কিসের সামাজিকতা,আড্ডাবাজি,গল্প করার জন্য অতি উৎসাহী হয়ে ঘরের বাইরে
অকারণে ঘুরছি?
আমরা যখন সামান্য প্রয়োজনে বা অকারণে, ভিড়ের মধ্যে যাচ্ছি, অনিরাপদে
অন্যের সংস্পর্শে যাচ্ছি; সামাজিকতা রক্ষার জন্য নিজের জীবন-কে হুমকির মুখে
ফেলছি, তখন আমরা আমার পরিবার-কে সমভাবেই ঝুকিতে ফেলছি। এই অধিকার আমাদের
নেই যে, আমার কর্মের দায় অন্য কেউ বয়ে বেড়াবেম পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে,
পরিবারের অন্যদের অবস্থা কোথায় দাঁড়াবে সেটি আমাদের ভাবতে হবে। ইতোমধ্যে
গণমাধ্যমের কল্যাণে আমরা জেনেছি- ইংল্যান্ড এর রাজপরিবারের প্রিন্স চার্লস,
কানাডার প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী, ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনসহ
অনেকেই আক্রান্ত হয়েছে। এই মানুষগুলো সকলেই বিশ্বের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা
নিয়ে জীবন যাপন করে, তারাও রক্ষা পায়নি এই ভাইরাস এর আক্রমণ থেকে। তাহলে,
আমাদের নিজেদের নিরাপত্তা কত ঠুনকো,সেটি ভাববার অবকাশ আছে বৈকি।
আমি কাউকে আতঙ্কিত করতে চাই না, বরং আশার কথা হলো- এই সংকট যে
নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব সেটি চায়না প্রমান করে দেখিয়েছে। গত ৭ এপ্রিল চায়নায়
করোনা আক্রান্তে একজন ব্যক্তিও মারা যায়নি। তাদের বিস্তারের সংখ্যাও নগণ্য
বলা চলে। তারা এই ভাইরাস কে ইতোমধ্যে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে, সেটি
শুধু মাত্র সম্ভব হয়েছে- রাষ্ট্র কর্তৃক নির্দেশনাসমূহ নাগরিকরদের দ্বারা
শতভাগ পালনের মাধ্যমে। চাইনিজ দের ৯০ শতাংশ হ্যান্স জাতিগোষ্ঠীর। তারা কোন
সিদ্ধান্ত/পলিসিকে সমভাবে গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করার মানসিকতা রাখে।
চীনে’র মত আমাদের এই সংকটে সমষ্টিগতভাবে নির্দেশনা মেনে চলার কোন বিকল্প
নেই।
আমরা দেখছি, ইতোমধ্যে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা দেশভেদে ভিন্ন
হচ্ছে। এটি নির্ভর করছে, এই ভাইরাসের শক্তির বিচারে আক্রান্তদের ইমিউন
সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা শক্তিশালী তার উপর এবং লাইফ সাপোর্ট
সিস্টেম এর উপর। আমাদের ঝুকি অন্য যে কোন দেশের তুলনায় অনেক বেশি কারণ-
আমাদের খাদ্যাভ্যাস, গড় ক্যালোরি ইনটেক,খাদ্যের ভেজাল, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
কম, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস এর রুগির আধিক্য প্রভৃতিসহ অনেক কারণেই আমাদের
ঝুঁকি অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি বলেই প্রতীয়মান হয়। তার প্রমাণ- গত ২৪
ঘন্টায় ১০৫৭ জনের নমুনায় ১১২ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে।
এ মিলিয়ে এ পর্যন্ত আক্রান্ত মোট সংখ্যা- ৩৩০, তন্মধ্যে মৃত্যুর
সংখ্যা-২১, আরোগ্য লাভ করেছে-মাত্র ৩৩ জন। বাংলাদেশে আক্রান্তের তুলনায়
মৃত্যু- ৬.৫০% এর কাছাকাছি। সুতরাং বৈশ্বিক গড় মৃত্যুর হারের তুলনায়
বাংলাদেশে মৃত্যুর হার ইতোমধ্যেই বেশি। আরোগ্য লাভের হার ও কম।
এ পরিস্থিতিতে আমাদের এই ভাইরাসের প্রকোপ থেকে আপাতত রক্ষার একমাত্র
পথ-আক্রান্তের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখা, সেটি একমাত্র সম্ভব আমাদের সকলের
সচেতনতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা-
এক্ষেত্রে করণীয়-
* আপনার হাত সব সময় কোথায় আছে জানুন এবং পরিষ্কার রাখুন। সেই জন্য বাইরে
কিছুতে হাত দিলে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অথবা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার
রাখুন
* অসাবধানতাবশত হাত যেন নাকে, চোখে বা মুখে না ছুঁতে পারেন, সেই জন্য
বাইরে গেলে মাস্ক পরে থাকতে হবে। মাস্কটা পরা হয় কিন্তু অন্য কারও থেকে
ভাইরাস সংক্রমণ না করার জন্য নয়, মাস্কটি পরতে হয় নিজের হাতের ছোঁয়া থেকে
নিজেকে সংক্রমণ না করার জন্য। তবে খুব কাছে থেকে কেউ জোরে কাশি দিলে, তা–ও
মাস্ক সেই ড্রপলেট ঠেকাতে পারবে। সে কারণে এই মাস্ক সাধারণ মাস্ক হলেই
চলবে, মাস্ক না পেলে রুমালও ব্যবহার করা যাবে।
কয়েকটা মাস্ক থাকলে তা গরম পানিতে সাবান দিয়ে ধুয়ে আবার ব্যবহার করা যাবে।
* সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ভীষণ জরুরি। সব রকমের ভিড় এখন পরিহার করতে হবে। বাইরে হাঁটাচলা করা ভালো, তবে তা অবশ্যই ভিড় এড়িয়ে।
* ঘরে থেকে নিজেকে ও পরিবার কে সংক্রমন থেকে রক্ষা করা এবং সংক্রমিত
অবস্থায় অন্যদের থেকে নিরাপদ দুরত্বে থাকা। (তথ্য সূত্র- ডা. জিয়াউদ্দিন
আহমেদ: অধ্যাপক, মেডিসিন ও নেফ্রোলজি, টেম্পল ইউনিভার্সিটি, ফিলাডেলফিয়া)।
বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানে,চিকিৎসায়,গবেষণায় প্রায় সকল উন্নত ও সমৃদ্ধ
রাষ্ট্রগুলো যখন করোনার বিপর্যয় থেকে জীবন বাচাতে হিমিশিম খাচ্ছে, সেখানে
আমাদের মত দুর্বল আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় আমাদের এতটা সাহস দেখাবার আদৌ
সুযোগ আছে? ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন, সুস্থ রাখুন।
লেখক: উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, রাঙ্গাবালী, পটুয়াখালী।