“পর্যটন ও প্রকৃতিতে করোনার প্রভাব” পুরো পৃথিবী আজ হুমকির সম্মুখীন
Tweet
পৃথিবীর ক্ষমতাধর দেশগুলো আজ অসহায়। প্রতিটি শিল্পের আজ করুন অবস্থা। বিশ্ব অর্থনীতিতে ধস নামতে শুরু করেছে। ক্ষুদ্র একটি ভাইরাস। নাম কোভিড-১৯ বা নোভেল করোনা ভাইরাস। যেটি পুরো পৃথিবীকে তছনছ করে দিচ্ছে।যেটির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পর্যটন খাত।
পর্যটন শিল্পের সাথে সরাসরি জড়িত এভিয়েশন, হোটেল,মোটেল,রিসোর্ট,রেস্তোরাঁ, থিম পার্ক, ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর,ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি,MICE ট্যুরিজম, ট্যুরিজম ইনিস্টিউটের মত উপখাত গুলো হুমকির মুখে পড়েছেন। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল এর মতে এই অবস্থা স্থায়ী হলে ৫০ মিলিয়ন মানুষরের চাকরি হারানোর সম্ভাবনা আছে।
বিশ্ব পর্যটন সংস্থার মতে পৃথিবীর ৯৬ শতাংশ পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।এই বছরের শেষ নাগাদ পর্যটন খাতে ১.৮ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। পৃথিবীর বেশিরভাগ রাষ্ট্র নিজেদের রক্ষার জন্য লকডাউন করতে বাধ্য হচ্ছে।ফলে পুরো পৃথিবীর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন যেখানে গড়ে প্রায় এক লাখ ফ্লাইট পরিচালিত হত তা এখন প্রায় শূন্যের কোটায়।
IATA এর হিসাব অনুযায়ী এভিয়েশন খাতে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতির পরিমান ২৫২ বিলিয়ন ইউএস ডলার।বেশিরভাগ ক্ষতি হতে পারে এশিয়া পেসিফিক অঞ্চলে। সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অনির্দিষ্ট কালের জন্য বাতিল করা হয়েছে।বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত ফ্লাইটগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। ফ্লাইট বন্ধ থাকায় ইনবাউন্ড ও আউটবাউন্ড পর্যটন স্থবির হয়ে পড়েছে।সব ধরনের ট্যুর প্যাকেজ বাতিল করা হয়েছে।ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-টোয়াবের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ পর্যটন খাতে ৫৭০০ কোটি টাকা ক্ষতি হতে পারে।
অন্য দিকে ট্রাভেল এজেন্সিদের সবচেয়ে বড় সংগঠন এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সস অব বাংলাদেশ- আটাবের হিসাব অনুযায়ী করোনার প্রভাবে জুন অব্দি ট্রাভেল এজেন্সি ও ট্যুরিজম খাতে সম্মিলিত ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্ভাবনা ১২০০০ কোটি টাকা এবং এই খাতে চাকরি হারানোর সম্ভাবনা আছে ৪ লাখ মানুষের। বাংলাদেশের আবাসন খাতও ঝুকিপূর্ণ। অনেক হোটেল ও রিসোর্ট পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মান এবং অন্য হোটেল সব মিলিয়ে তিন হাজার কোটি টাকা ক্ষতির মুখোমুখি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল এ্যাসোসিয়েশন।TRIAB এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিতে তাদের বিনিয়োগ ৫০০০ কোটি টাকা এবং এখানে সরাসরি কাজে নিযুক্ত আছেন ৩.৫ লাখ মানুষ। করোনার প্রভাবে রিসোর্টগুলো ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে আছেন এবং কর্মীরাও আছেন কাজ হারানোর ঝুকিতে।
করোনা পরবর্তী বাংলাদেশ পর্যটন কেমন হবে এই নিয়ে অনিশ্চয়তার শেষ নেই। কতদিন লাগবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে তার সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারছেননা কেউই। পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত ১৮ লক্ষ কর্মীদের জীবন চলছে অনিশ্চিয়তার মাঝে। যখন বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প আপন মহিমায় এগিয়ে চলছিলেন ঠিক এমন সময় করোনার থাবায় সেই শিল্প এখন মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ।এই সমস্যা থেকে কিভাবে উতরানো যায় সেদিকে সরকারী ও বেসরকারী পর্যটন সংস্থাগুলোকে নীতিমালা নির্ধারণ করে বাস্তবায়নের কাজ করতে হবে। তাছাড়া বাংলাদেশ পর্যটন যে আশার আলো দেখেছিল তা নিভে যেতে পারে।
করোনার প্রভাবে মানুষের ক্ষতি হয়েছে ঠিকই কিন্তু প্রকৃতি নিজেকে ফিরে পেয়েছে নতুন রূপ,সেজেছে নতুন সাজে। পরিবেশ দূষণ কমেছে বহুগুন।পশুপাখিরা অবাদে বিচরন করছে তাদের চারপাশে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ফিরে পেয়েছে ৩০ বছরের আগের রূপ,সৈকত পাড়ে দেখা মিলেছে ডলফিনের নাচ,হরিণের পদচারণা।সেন্টমার্টিন দ্বীপের ক্লান্ত কোরাল গুলো নিজেদের সতেজ করে নিচ্ছে,কাছিম অভয়ে ডিম ফুটিয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করছে।পাহাড়গুলো নিজেদের সবুজে সবুজে ভরিয়ে নিচ্ছে।
লেখক-মোঃ সাইফুল্লার রাব্বী প্রভাষক, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ,ড্যাফোডিল ইনিস্টিউট অব আইটি। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান- বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ট্যুরিজম ইনোভেশন-বিএসটিআই।