আজ মাগফিরাতের প্রথম দিন
Tweet
লেখক, কামিল শিবলী
ফ্রিল্যান্স রাইটার
তিন অধ্যায়ের পবিত্র মাহে রমজানের ইতিমধ্যে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হলো আজ থেকে। অর্থাৎ রহমতের দশদিন শেষে আল্লাহর ক্ষমা পাবার সুযোগের পর্ব এটি। এই দশদিনে আমরা যত বেশি পারবো তৌবা ওইসতেগফারের মাধ্যমে আল্লাহর মাগফিরাত কামনা করবো। মাগফিরাত কামনা করবো পিয় ব্যক্তিদের জন্য। দোয়া করে ক্ষমা চাইবো আমাদের মৃত ব্যক্তিদের শান্তি কামনা করে। যাদের যেই ভূল আছে সেই সব ভূল যেন আর নাকি সেজন্য তৌবা করবো।
আল্লাহপাক বলেন মানুষকে আমি দুর্বল করে সৃষ্টি করেছি। আর দুর্বলতার কারনেই মানুষ নানা পরীক্ষার সম্মুখীন হন। এই দুর্বল প্রজাতির মানুষই কখন ভুল করে অপরাধ করা, পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়া; আবার কখন ইচ্ছা করে সগিরা কবীরা গুণা করে। অপরদিকে সেই আল্লাহ যিনি এই পরীক্ষা নিচ্ছেন তিনি ক্ষমা করতে ভালবাসেন। আমরা যদি খালি একট খালেস নিয়তে তৌবাটা করে ফেলি। আল্লাহ তায়ালা এতো খুশি হন যে তার বান্দার সব গুণা মাফ করে দেণ। যে যত বেশি ইসতেগফার পড়লো সে যেন তত বেশি আল্লাহ পছন্দের হলেন। এটাই ইসলামের শিক্ষা।
হাদিস শরিফে দোয়াকে ইবাদতের মগজ তথা সারবত্তা বলা হয়েছে। পবিত্র রমজানে ইস্তেগফার লাভে বান্দার জন্য আবশ্যক হচ্ছে দোয়া। দোয়া স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে সেতুবন্ধ সৃষ্টি করে দেয়, দোয়া এ দুয়ের মাঝে তফাতের অবসান ঘটিয়ে ঘনিষ্ঠতার পরশ বুলিয়ে দেয়; সর্বোপরি মহান রবের সঙ্গে বান্দার প্রেমময় সম্পর্কের শক্ত ভিত গড়ে দেয় এই দোয়া বা মোনাজাত। জগতের মানুষ যত সম্পদশালীই হোক না কেন, কোনো কিছু চাইলে রাগ করে, অসন্তুষ্ট হয়; কিন্তু আল্লাহপাক এমন এক সত্তা, যাঁর কাছে বরং কোনো কিছু না চাইলে তিনি রাগ করেন, অসন্তুষ্ট হন। কেননা তাঁর নামই যে তিনি রেখেছেন ক্ষমাশীল, করুণাময়, দাতা ও দয়ালু। তাই ‘ওয়া ইযা সাআল্তা ফাসআ লিল্লাহ’ অর্থাৎ কোনো কিছু চাইলে আল্লাহর কাছেই চাও, ‘ওয়া ইযাস্ তাআন্তা ফাসতাইন বিল্লাহ’ অর্থাৎ কোনো কিছুর সাহায্য প্রয়োজন হলে সরাসরি আল্লাহর কাছেই তার নিবেদন করো। পবিত্র রমজান সেই মোক্ষম সময়, যখন আমরা নিবিষ্ট-চিত্তে মহান আল্লাহর মুখাপেক্ষী হয়ে, নিজেদের পুরো অস্তিত্ব উজাড় করে দিয়ে, তওবার অঙ্গীকার শানিত করে, যাবতীয় কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা-প্রার্থনার মাধ্যমে খোদাতায়ালার আস্থাভাজন ও প্রিয়পাত্র হতে পারি। আমরা বলতে পারি, ‘আস্তাগফিরুল্লাহাল আজিম ইন্নাল্লাহা গাফুরুর রাহিম’ অর্থাৎ হে মহান আল্লাহ! তোমার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাই, নিঃসন্দেহে তুমি তো ক্ষমাশীল ও দয়ালু। ‘আল্লাহুম্মা আবুউ বিযানবি ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা য়াগফিরুয্যুনুবা ইল্লা আন্তা’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি আমার কৃত পাপাচার স্বীকার করছি, আমাকে মাফ করো, কেননা নিঃসন্দেহে তুমি ছাড়া আর কেউ ক্ষমাকারী নেই। ‘রাব্বিগ্ র্ফিলি ওয়াতুব্ আলায়্যা ইন্নাকা আন্তাত্ তাওয়াবুর রাহিম’ অর্থাৎ হে রব! ক্ষমা করে দাও, আমার তওবা কবুল করে নাও; নিশ্চয়ই তুমি তওবা কবুলকারী, দয়াশীল।
তাই পবিত্র এ রমজানে আসুন আমরা বলি, ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউযুবিকা মিনান্নার’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদের জান্নাত নসিব করো আর জাহান্নাম থেকে তোমার কাছে পানাহ চাই। ‘আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান্নার য়া মুজির’ অর্থাৎ ওহে প্রভু! আমাদেরকে নরকাগ্নির অভিশাপ থেকে মুক্তি দাও, কেননা তুমিই তো রক্ষাকারী। ‘আল্লাহুম্মা আদ্খিলনাল্ জান্নাতা মাআল আবরার’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমার পুণ্যবান বান্দাদের সঙ্গে আমাদেরও জান্নাতে প্রবেশ করাও। পরিশেষে ‘উদউনি আস্তাজিবলাকুম’ অর্থাৎ তোমরা আমায় ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব- মহান আল্লাহর এই বাণীর পরিপ্রেক্ষিতে করোনা-গ্রাসে নাস্তানাবুদ আজকের পরিস্থিতিতে আমাদের বিনীত প্রার্থনা ‘আল্লাহম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন সাইয়িইল আসকাম’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! (করোনাসহ) সর্বপ্রকার ব্যাধি থেকে আমরা তোমার কাছে পরিত্রাণ চাই (আমিন)।
এতে কোন লজ্জা নেই । যেমন ছোট বাচ্চা বারবার অপরাধ করেও মাতাপিতার কাছে চলে আসে, ঠিক তেমনি আমাদের আল্লাহ দরবারে প্রিয়ার সুযোগ আল্লাহই করে দিয়েছেন এই মাফিরাতের দশ দিন দিয়ে।