করোনা মোকাবেলার দৃঢ় প্রত্যয়ের মধ্যে পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস
Tweet
আজ পহেলা মে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। একদিকে যখন দেশে দেশে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে বেচে থাকার সংগ্রামে ব্যাস্ত সময় পার করছে শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ, ঠিক তেমনিভাবে ঢ়ুরবাস্তবতার সময়ে পেটের খুদার মধ্যে সেই শ্রমিকদের সামনে এসে হাজির হয়েছে এবারের মে দিবস। তাই করোনা মোকাবেলার দৃঢ় প্রত্যয়ের মধ্যে পালিত হচ্ছে মহান দিবসটি।
কৃষান কৃষানী, সকল কারখানা শ্রমিক, রাস্তার কুলি মজদুর, দিন মজুর রিকশাওয়ালা, সবজি বিক্রেতা, ভ্যান চালক, বাজার কিম্বা রাস্তার নিত্য প্রয়োজনীয় যিনিস বিক্রেতা তথা খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে রক্তঝরা সংগ্রামের দিন এটি। শ্রমিকদের আত্মত্যাগের স্মারক এ মহান মে দিবসে পর্যটনিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে সকল শ্রমজীবী মেহনতি ভাইদের জানাই শ্রদ্ধা।
দীর্ঘ বঞ্চনা আর শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৩৩ বছর আগে ১৮৮৬ সালের এই দিন বুকের রক্ত ঝরিয়ে ছিলেন শ্রমিকরা। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও দাবি আদায়ের দিন। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বজুড়ে পালিত হয়ে আসছে দিনটি। প্রতিবছর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হতো। তবে করোনার থাবায় বিধ্বস্ত পৃথিবীতে আজ ভিন্নভাবে পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। এবারের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, সোনার বাংলা গড়ে তুলি’— এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেশে শুক্রবার (১ মে) পালিত হবে মহান মে দিবস।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছে।
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে এবছর সরকার সব রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি স্থগিত করেছে। তাই বলে থেমে নেই বাংলাদেশসহ বিশ্বের গণমাধ্যম। সংবাদ পত্রগুলোও বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রমিক ফেডারেশনের কথা হচ্ছে, এবার নিষ্ক্রিয়ভাবে দিবসটি অতিবাহিত করতে হচ্ছে। তারা বলছেন, আমরাও সরকারের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বর্ণাঢ্য র্যালিসহ সব কর্মসূচি স্থগিত করেছি। মূলত দিবসটি শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের একমাত্র দিন।
এ বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান জানান, করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় আমরা মে দিবসের সব কর্মসূচি স্থগিত করেছি। তবে পরিস্থিতি উন্নত হলে পরে দেখা যাবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার শ্রমিকবান্ধব সরকার। সরকার শ্রমিকদের অধিকার বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার ফলে শ্রমিকরা অতীতের যে কোনও সময়ের তুলনায় এখন ভালো সময় পার করছে। শেখ হাসিনা সরকার অব্যাহত থাকলে শ্রমিকরা আরও উন্নত জীবন পাবে।
১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের উপযুক্ত মজুরি আর দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে ওই শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা। কিন্তু আন্দোলনরত শ্রমিকদের দমাতে মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় পুলিশ। এতে ১১ শ্রমিক নিহত হন। আহত ও গ্রেফতার হন আরও বহু শ্রমিক। পরে প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের মধ্যে ছয়জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এতে বিক্ষোভ আরও প্রকট আকার ধারণ করে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। পরবর্তীতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
১৮৮৯ সালের ১৪ই জুলাই ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরের বছর ১৮৯০ সাল থেকে পহেলা মে-কে বিশ্বব্যাপী ‘মে দিবস’ বা ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ হিসেবে পালন হয়ে আসছে।