ঘূর্ণিঝড় আম্পান, ২২ লাখ মানুষকে নেওয়া হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রে
Tweet
কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসায় উপকূলীয় অঞ্চলের ২২ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাত ৮টার মধ্যে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলছেন, পরিস্থিতি দেখে বুধবার সকাল ৬টায় মহাবিপদ সংকেত দেওয়া হতে পারে। এরপর আর কাউকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া কঠিন হবে।
ঘুর্ণিঝড় আম্পান পরবর্তী জরুরি উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তাসহ যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় তিন স্তরের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
চট্টগ্রাম, খুলনা ও মোংলা নৌঅঞ্চলে সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় দ্রুততম সময়ে জরুরি উদ্ধার, ত্রাণ এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের জন্য নৌবাহিনীর ২৫টি জাহাজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছেছে।
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উদ্ধার অভিযানের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় অনুসন্ধান কাজের জন্য নৌবাহিনীর দুটি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ার ক্রাফট এবং দুটি হেলিকপ্টার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
ঝূর্ণিঝড়ের সবশেষ অবস্থানের বিবরণ তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঘূর্ণিঝড় আম্পান উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় সরকারের সবশেষে প্রস্তুতি নিয়ে বুধবার সচিবালয় থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “এক দিকে করোনাভাইরাস, আরেক দিকে নতুন বিপদ আমাদের সামনে এসেছে।… বাংলাদেশ প্রকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশ্বে রোল মডেল।
“আমাদের প্রধান লক্ষ্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের শেল্টার সেন্টারে নিয়ে আসা। ইতোমধ্যে বিপুল সংখ্যক মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে। আজ রাতের মধ্যেই সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
যারা আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন তাদের সবাইকে মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে এনামুর বলেন, “আশ্রয়কেন্দ্রে তাদের মিনিমাম এক মিটার দূরত্ব রজায় রেখে থাকতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ এর কারণে দেশে ১২ হাজার ৭৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৫১ লাখ ৯০ হাজার ১৪৪ মানুষকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব। তবে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে লোকজনদের আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হবে। সেজন্য ২০ থেকে ২২ লাখ লোককে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় ফণির সময় ১৮ লাখ এবং বুলবুলের সময় ২২ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছিল বলে জানান ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “মেডিকেল টিম ওষুধপত্র নিয়ে প্রস্তুত আছে। চর থেকে লোকজনদের নিয়ে আসতে নৌবাহিনী কাজ করছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরাও লোকজনদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে সহযোগিতা করছেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোও তৎপর রয়েছে। মাছধরা নৌকাগুলো নিরাপদে অবস্থান করছে।”
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সুপার সাইক্লোন আম্পান আরও উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে এগিয়ে এসে সামান্য দুর্বল হয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আকারে পশ্চিম মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্নএলাকায় অবস্থান করছে।
মঙ্গলবার বেলা ৩টায় এ ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে; কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে; মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
তখন ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় আগের মতই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর এবং মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।