বাজেটে ২৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি সম্মিলিত পর্যটন জোটের
Tweet
আজ ২১ মে ২০২০ বৃহস্পতিবার সম্মিলিত পর্যটন জোটের সাথে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বাজেটে ট্যুরিজম রিকভারি ও উন্নয়নে বরাদ্ধ নির্ধারণ শীর্ষক বিষয়ে ৬ষ্ঠ অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে পর্যটনকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সম্মিলিত পর্যটন জোট ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট চেয়েছে। এর মধ্যে পর্যটন রিকভারির জন্য ৮,০০০ কোটি টাকা এবং পর্যটন উন্নয়নের জন্য ১৫,০০০ কোটি টাকা।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব পীরজাদা শহীদুল হারুণ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সম্মিলিত পর্যটন জোটের আহবায়ক ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোখলেছুর রহমান। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. এনায়েত হোসেন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞানের প্রফেসর ড. মো. আবুল কাশেম, পিপল্স ইউনিভার্সিটির ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি বিভাগের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন সরকার, ইউরোমেড বিজনেস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. শাহরিয়ার পারভেজ, বাংলাদেশ ট্যুরিজম এন্ড মিডিয়া ফোরামের সভাপতি কাজী রহিম শাহরিয়ার, ডাহুক কমিউনিটি ট্যুরিজম নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী রেজা শাওন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশনের পরিচালক জয়িতা শেখ এবং সম্মিলিত পর্যটন জোটের ১ম যুগ্ম-আহবায়ক ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপ্লোরারস এসোসিয়েশন বিটিইএ এর চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম সাগর।
প্রস্তাব পেশকালে বলা হয় যে, ২০১৯ সালে পর্যটন বাংলাদেশের জিডিপিতে ৪.৪% অর্থাৎ ৭৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকার অবদান রেখেছে, পর্যটন রপ্তানির মাধ্যমে একই বছর ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকার সমমানের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে এবং এই সেক্টরে বর্তমানে নিয়োজিত আছে প্রায় ৪০ লক্ষ কর্মী। এই কর্মীদের মধ্যে প্রায় ৯০% প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ। করোনা সংকটে কাজ হারিয়ে এদের অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই জন্য বাজেটের একটা বড় অংশ এদেরকে এবং প্রান্তিক পর্যায়ের পর্যটন ব্যবসায়ীদের সুরক্ষার জন্য চাওয়া হয়েছে। এইভাবে করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ প্রান্তিক পর্যটনকর্মীদের জীবনধারণের জন্য ক্যাশ অনুদান, করোনা ও পর্যটন বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রণোদনা, ক্ষুদ্র ও দূর্বল উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা, অন্যান্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ক্যাশ ইনসেনটিভ প্রদান, ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের ইক্যুইটি প্রদান, করোনা সংকট মোকাবেলায় পদ্ধতি উদ্ভাবনে আর্থিক সহায়তা প্রদান, পর্যটন কেন্দ্র ও গন্তব্যে করোনা চিহ্নিতকরণের ব্যবস্থাসহ চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদির দাবী জানিয়েছেন।
বাজেটের দ্বিতীয় ভাগে তারা পর্যটন সেক্টরের উন্নয়নের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। উল্লেখ্য যে, পর্যটনের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় নির্ধারিত থাকলেও অন্তত ১৭ (সতের)টি মন্ত্রণালয় মিলে এই সেক্টরের কাজ করতে হয়। পর্যটন উন্নয়নের জন্য তারা সবিস্তারে উপখাতগুলিকে উল্লেখ করেন বাজেট প্রস্তাবনায়। এগুলো হলো: পর্যটনসম্পদ ও পর্যটন জনশক্তির শুমারি পরিচালনা, পর্যটন গ্রাম স্থাপন, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক পর্যটন প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন, গন্তব্য উন্নয়নে মেগা প্রকল্প (সাবরাং, সোনাদিয়া দ্বীপ ইত্যাদি), গন্তব্যসমূহের ধারণ ক্ষমতা নির্ধারণ, সাধারণ মানুষের বেকারত্ব হ্রাসে প্রশিক্ষণ প্রদান, কর্মরত পর্যটনকর্মীদের উৎকর্ষ সাধনের জন্য প্রশিক্ষণ, পর্যটন ব্যবস্থাপনা ও গাইড প্রশিক্ষণ, পর্যটন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, পর্যটন আইসিটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ, পর্যটন সাংবাদিকতাসহ পর্যটনের যে কোন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য ফেলোশিপ প্রদান, পর্যটন বিষয়ক পুস্তক রচনা ও প্রকাশ, পর্যটন রপ্তানির জন্য ইনসেটিভ, পর্যটনে কর অবকাশ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের রিফান্যান্সিং ঋণ, হ্রাসকৃত সুদহারে ঋণদানের মাধ্যমে প্রণোদনা প্রদান, বঙ্গবন্ধু পর্যটন পদক প্রবর্তন, জাতীয় পর্যটন ট্রফি প্রবর্তন, দেশে আয়োজিত পর্যটন মেলা, পর্যটন কংগ্রেস ও পর্যটন উৎসবে নগদ সহায়তা প্রদান, বিদেশি পর্যটন মেলায় অংশগ্রহণ, হ্রাসকৃত শুল্কে পর্যটন পরিবহণসহ পর্যটনে ব্যবহৃত যে কোন যন্ত্র বা যন্ত্রাদি ও ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি, প্রতিবন্ধী পর্যটকদের ভ্রমণ সহায়তা প্রদান, দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যমগুলিকে পর্যটন বিষয়ক ব্যাপক প্রচারণা, ফ্যামিলিয়ারাইজেশন ট্যুর পরিচালনা, ধর্মীয় পর্যটন ও হাওর পর্যটন উন্নয়নে গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ, প্রতিটি জেলায় একটি করে পর্যটন উৎসব আয়োজন, গ্রামীণ ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে পর্যটনে যুক্ত করার উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য বিশেষ পর্যটন প্রকল্প গ্রহণ ইত্যাদি।
বাজেট প্রস্তাবনাকালে জোটের পক্ষ উল্লেখ করা হয় যে, এই বাজেট পর্যটন খাতের বিকাশ ও উত্থানে প্রবলভাবে সহায়তা করবে। তাতে করে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে। পর্যটন খাত থেকে রাষ্ট্র বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার আয় করতে পারবে। এই খাতের ক্ষুদ্র ও দূর্বল উদ্যোক্তা যেমন ক্ষুদ্র আবাসন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও স্ট্রিট রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি ঘুরে দাঁড়াবে। ট্যুর অপারটররা পর্যটনের নতুন প্রডাক্ট তৈরি করে দেশে ও বিদেশের বাজারে নতুত উদ্যমে প্রবেশ করবে। এতে করে জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে পর্যটন প্রত্যক্ষ অবদান পরিলক্ষিত হবে। তাতে দেশে একটি টেকসই পর্যটন অর্থনীতি গড়ে তুলবে, সামাজিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এবং শান্তি স্থাপিত হবে।